২৬ ডিসেম্বর ২০১৭, মঙ্গলবার, ৯:৫১

শুল্কবৈষম্যের শিকার ওয়েল্ডিং রড শিল্প

সম্পূরক শুল্ক আরোপের দাবি দেশীয় উদ্যোক্তাদের

শুল্কবৈষম্যের শিকার ওয়েল্ডিং রড নির্মাণ শিল্প। বিদেশ থেকে ওয়েল্ডিং রড আমদানি করতে আমদানিকারকদের ৫৮ দশমিক ৬৯ শতাংশ শুল্ক-কর দিতে হয়। আর দেশে ওয়েল্ডিং রড তৈরি করতে উদ্যোক্তাদের শুধু কাঁচামালের ওপরেই ৩৫ শতাংশ শুল্ক-কর দিতে হয়। এ সামান্য শুল্ক সুরক্ষার কারণে ওয়েল্ডিং রড শিল্প ধ্বংসের পথে। এতে হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ ও কয়েক হাজার শ্রমিকের কর্মসংস্থান হুমকির মুখে পড়েছে। এ অবস্থায় ওয়েল্ডিং রড আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক আরোপ অথবা দেশে রড তৈরির কাঁচামালের শুল্ক হ্রাসের দাবি জানিয়েছেন দেশীয় উদ্যোক্তারা।

খাতসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে লিন্ডে বাংলাদেশ, বিডি ওয়েল্ডিংয়ের মতো ছোটবড় ৮-১০টি ওয়েল্ডিং রড উৎপাদন কারখানা দেশে গড়ে উঠেছে। এতে কয়েক হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ আর কয়েক হাজারের বেশি মানুষের কর্মসংস্থান জড়িত। অথচ ভুল রাজস্ব নীতির কারণে এখন সব ধূলিসাৎ হওয়ার পথে। বিগত কয়েক বছরে ক্রমাগত লোকসানের মুখে পড়ে এ শিল্প এখন বন্ধের দোরগোড়ায়। এ শিল্পকে বাঁচাতে হলে শুল্ক সুরক্ষা বাড়াতে হবে।

দেশীয় উদ্যোক্তারা বলছেন, ওয়েল্ডিং রডের শুল্ক নির্ধারণের ক্ষেত্রে এনবিআরের শুল্ক নীতিতে বড় ধরনের গোঁজামিল আছে। যেখানে এনবিআরের কাজ হওয়া উচিত স্থানীয় শিল্পকে সুরক্ষা দেয়া, সেখানে আমদানিকে উৎসাহিত করা হচ্ছে। ফিনিশড প্রোডাক্ট ও কাঁচামালের শুল্কের পার্থক্য একেবারেই সামান্য। কাস্টমস সিডিউলে এমন অনেক পণ্য আছে যেগুলো দেশে উৎপাদন হয় না, সেগুলোর ওপর এনবিআর সম্পূরক শুল্ক আরোপ করেছে। অথচ ওয়েল্ডিং রডের সম্পূরক শুল্ক নেই। এক্ষেত্রে অন্তত ৩০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা উচিত। এতে সরকার দু’দিক থেকে লাভবান হবে। প্রথমত শিল্প বাঁচবে, দ্বিতীয়ত রাজস্ব আয়ও বাড়বে।
এর বাইরে ওয়েল্ডিং রড আমদানিতে কারচুপি হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন উদ্যোক্তারা। তাদের মতে, সিন্ডিকেটের মাধ্যমে আমদানিকারকরা আমদানি মূল্যের চেয়ে কম মূল্য ঘোষণা দিয়ে পণ্য খালাস নিচ্ছেন। এক্ষেত্রে কাস্টম হাউসের যে গ্রুপে ওয়েল্ডিং রডের শুল্কায়ন করা হয়, সেখানে সব আমদানিকারক কাছাকাছি মূল্যের ঘোষণা দেন। আর তার ভিত্তিতেই কর্মকর্তারা কোনো রকম যাচাই-বছাই ছাড়াই পণ্য খালাসের অনুমোদন দিচ্ছেন। এছাড়া ওজনেও কারচুপি করা হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, ১৫ টন রড আমদানি করলে ১০ টন রডের শুল্ক দিয়েই পুরো মালামাল খালাস নেয়া হচ্ছে। এতে অবৈধ মুনাফার সুযোগ পাচ্ছে ওই সিন্ডিকেট।

এ বিষয়ে লিন্ডে বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহসিন উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমদানি করা ওয়েল্ডিং রড এত কম দামে বাজারে কীভাবে বিক্রি হচ্ছে, তা বোধগম্য নয়। এখানে আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের সম্ভাবনা আছে। যত দ্রুত সম্ভব সরকারকে এদিকে নজর দিতে হবে। নইলে এ শিল্পের টিকে থাকাই হুমকিতে পড়বে।
আমদানির তথ্য ঘেঁটে দেখা গেছে, প্রায় শতাধিক প্রতিষ্ঠান দেশে ওয়েল্ডিং রড আমদানি করে। বেশিরভাগ রড চীন, ভারত ও তাইওয়ান থেকে আমদানি হয়।
দেশীয় উদ্যোক্তাদের মতে, ওয়েল্ডিং রড আমদানিতে কোনো না কোনো পদ্ধতিতে অসাধু উপায় অবলম্বন করা হচ্ছে। নইলে এত খরচের পর এত অল্প দামে রড বাজারজাত করা সম্ভব নয়। হয়তো মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর নিন্মমানের রড আমদানি করা হচ্ছে। নয়তো শুল্ক ফাঁকি দেয়া হচ্ছে। অবিলম্বে এ ফাঁকি চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নিলে দেশীয় শিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে।

অন্যদিকে ওয়েল্ডিং রড আমদানিতে বড় ধরনের আইনি ফাঁকফোকর আছে বলে মনে করেন উদ্যোক্তারা। তারা বলছেন, বিদেশ থেকে ৫৫টি আইটেমের পণ্য আমদানিতে বিএসটিআই’র সার্টিফিকেট বাধ্যতামূলক। এ তালিকায় নির্মাণ উপকরণের মধ্যে টাইলস, সিমেন্ট, সিরামিক টেবিলওয়্যার, সুইস-সকেট ও সেনিটারি ওয়্যার আছে। তবে ওয়েল্ডিং রডের মতো গুরুত্বপূর্ণ উপকরণের ক্ষেত্রে সে নিয়ম নেই। এ সুযোগে অসাধু আমদানিকারকরা অতি মুনাফার আশায় কাস্টমসে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই নিন্মমানের রড বাজারে ছড়িয়ে দিচ্ছেন, যা স্থাপনা ও মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর।

 

https://www.jugantor.com/last-page/2017/12/26/182299