২৩ ডিসেম্বর ২০১৭, শনিবার, ২:৪১

সাবেক রাষ্ট্রদূত মারুফ জামান কোথায়?

মারুফ জামান। সাবেক রাষ্ট্রদূত। নিখোঁজ হয়েছেন ১৮ দিন আগে। তাকে কারা নিখোঁজ করেছেন, জানা যায়নি আজও। আইনশৃংখলাবাহিনীর সদস্যরা তার খোঁজে আছেন-এই দাবি শুরু থেকেই। তবুও সাবেক এই কূটনীতিকের খোঁজ মেলেনি। পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, তারা মারুফ জামানকে উদ্ধারের চেষ্টা করছেন। কিন্তু এখনও এ বিষয়ে তেমন কোনও ক্লু হাতে পাননি। পরিবারের সদস্যরা বলছেন, পুলিশ আন্তরিকভাবে চেষ্টা করছে না। তবুও তারা অপেক্ষায় আছেন মারুফ জামান সুস্থ-সুন্দরভাবে ফিরে আসবেন তাদের মাঝে। আবার তাদের পরিবার ভরে ওঠবে কানায় কানায় ।

চলতি মাসের ৪ তারিখে রাজধানীর ধানমন্ডির বাসা থেকে মেয়েকে আনতে শাহজালার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাওয়ার পথে নিখোঁজ হন সাবেক রাষ্ট্রদূত মারুফ জামান। এ ঘটনায় পরদিন তার মেয়ে সামিহা জামান ধানমন্ডি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি নম্বর ২১৩) করেন। মারুফ জামান ২০০৮ সালের ৬ ডিসেম্বর থেকে ২০০৯ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ভিয়েতনামে রাষ্ট্রদূত হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এর আগে তিনি কাতারের রাষ্ট্রদূত, যুক্তরাজ্যে কাউন্সিলর হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।

এদিকে, সপ্তাহ খানেক আগে এই সাধারণ ডায়েরির তদন্ত কর্মকর্তা ধানমন্ডি থানার এসআই তরিকুল ইসলাম বদলি হয়ে গেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি অনুসন্ধানে তেমন কিছু পাইনি।’

ধানমন্ডি থানার ওসি আব্দুল লতিফ বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি। তাকে উদ্ধারের জোর প্রচেষ্টা চলছে। কিন্তু কোনও ক্লু পাওয়া যাচ্ছে না।’

পুলিশ ও পরিবারের সদস্যরা বলছেন, গত ৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ধানমন্ডির ৯/এ সড়কের ৮৯ নম্বর বাসা থেকে নিজেই গাড়ি চালিয়ে বের হন মারুফ জামান। বেলজিয়াম থেকে আসা মেয়েকে আনতে বিমানবন্দরে যাচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু এরপর থেকেই তার ফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। পুলিশ বলছে, নিখোঁজ হওয়ার পর তার মোবাইল ফোনের সর্বশেষ অবস্থান ছিল বিমানবন্দর এলাকায়। পরদিন সন্ধ্যায় খিলক্ষেতের ৩০০ ফুট সড়ক থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় তার প্রাইভেটকারটি উদ্ধার করা হয়।

পরিবারের সদস্যরা বলছেন, মারুফ জামান নিখোঁজ হওয়ার পর অজ্ঞাত তিন ব্যক্তি তার বাসা থেকে কম্পিউটার, ল্যাপটপ ও ক্যামেরা নিয়ে যায়। নিখোঁজ হওয়ার দিন মারুফ জামান নিজেই বাসায় ফোন করে গৃহকর্মী লাকী আক্তারকে তিন জন লোককে এসব জিনিসপত্র দিয়ে দেওয়ার কথা বলেন।

পরিবারের সদস্যদের ভাষ্য, মারুফ জামানকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে দুষ্কৃতকারীরা তাকে জোর করে বাসায় ফোন করিয়েছে বলে তারা ধারণা করছেন।

এদিকে, নিখোঁজ হওয়ার আগ মুহূর্তে যে তিন ব্যক্তি মারুফ জামানের বাসায় প্রবেশ করেছিল, সিসিটিভি ক্যামেরায় তাদের ছবি থাকার পরও কেন তাদের শনাক্ত করা যাচ্ছে না? নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলছেন, যারা ওই বাসায় গিয়েছিল তারা সিসিটিভি ফুটেজ থেকে নিজেদের চেহারা আড়াল করার চেষ্টা করেছেন। এতে বোঝা যায়, তারা আগে থেকেই সিসিটিভি সম্পর্কে জানতেন। এছাড়া, চেহরা এত অস্পষ্ট যে ওই ফুটেজ দিয়ে তাদের শনাক্ত করাও অনেক কঠিন।

নিখোঁজ মারুফ জামানের মেয়ে সামিহা জামান বলেন, ‘বাবার সম্পর্কে কোনও আপডেট নেই। আমরা কোনও আপডেট পাচ্ছি না। আমি আসলে বুঝতে পারছি না এত সময় কেন লাগছে? আমি শুধু আমার বাবাকে ফেরত চাই।’

মারুফ জামানের ছোট ভাই রিফাত জামান বলেন, ‘ কোনও আপডেট নেই। পুলিশ তার অবস্থান সম্পর্কে কিছু জানাতে পারেনি। কেউ কিছু বলছেও না। আমরা মারুফ জামানকে যেকোনও মূল্যে ফেরত চাই।’

বাংলাদেশে গত কয়েক বছর ধরে হঠাৎ করেই বিভিন্ন জনের নিখোঁজ হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। একটি নির্দিষ্ট সময় পর কেউ কেউ ফিরে আসছেন। সর্বশেষ বুধবার (১৯ ডিসেম্বর) রাতে নিখোঁজ হওয়ার দুই মাস ১০ দিন পর ফিরে এসেছেন সাংবাদিক উৎপল দাস। তবে যারা ফেরত এসেছেন তাদের বেশিরভাগই নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে কোনও কিছু বলছেন না। গত কয়েক মাসে অন্তত ১৪ ব্যক্তি নিখোঁজ হয়েছেন। এদের মধ্যে সর্বশেষ উৎপলসহ ৯ জন ফিরেছেন। বাকি পাঁচ জনের এখনও কোনও হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোবাশ্বার হাসান সিজারও তাদের একজন।

http://www.dailysangram.com/post/312175