২২ ডিসেম্বর ২০১৭, শুক্রবার, ৮:৫৬

চেয়ারম্যানসহ তিন জনের পদত্যাগ

নতুন মনোনয়ন পাওয়া তিন পরিচালকের প্রস্তাব যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংকে

বেসরকারি এবি ব্যাংকের চেয়ারম্যান এম ওয়াহিদুল হকসহ পরিচালনা পর্ষদের তিন সদস্য পদত্যাগ করেছেন। দেশের প্রথম বেসরকারি এ ব্যাংকে বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে বলে কিছুদিন ধরে ব্যাপক গুঞ্জন ছিল। বৃহস্পতিবার প্রতিষ্ঠানটির গুরুত্বপূর্ণ পদে রদবদলের মধ্য দিয়ে গুঞ্জনের অবসান হয়েছে। শিগগিরই আরও পরিবর্তন হওয়ার আভাস রয়েছে।

পদত্যাগকারী অন্য দুই সদস্য হলেন- ভাইস চেয়ারম্যান সেলিম আহমেদ ও ফাহিমুল হক। রাজধানীর হোটেল লা মেরিডিয়ানে অনুষ্ঠিত বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) পদত্যাগপত্র অনুমোদিত হয়। তাদের স্থলে নতুন তিনজন পরিচালক মনোনীত হয়েছেন। তারা হলেন- বিএনপি সরকারের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এম মোরশেদ খানের পক্ষে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য ও কক্সবাজার জেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমদ চৌধুরী, মোরশেদ খানের মালিকানাধীন প্যাসিফিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের পক্ষে শিরিন শেখ মাঈন উদ্দিন এবং চট্টগ্রামভিত্তিক এলিট পেইন্টসের পক্ষে সাজির আহমেদ।
এজিএম অনুষ্ঠানে ব্যাংকটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হিসেবে এম মোরশেদ খান, তার ছেলে ফয়সাল মোরশেদ খানসহ উদ্যোক্তা ও শেয়ারহোল্ডাররা উপস্থিত ছিলেন। ব্যাংকটির প্রায় ৩০ শতাংশ মালিকানা এখনও রয়েছে মোরশেদ খানের হাতে। এছাড়া নতুন তিন পরিচালকের হাতে রয়েছে প্রায় ১ হাজার শেয়ার। বাকি শেয়ার অন্য উদ্যোক্তা-পরিচালকদের হাতে আছে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।

এদিকে ব্যাংকটির নতুন চেয়ারম্যান হতে পারেন প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করা এমএ আওয়াল। তিনি ২০০৮ সাল থেকে ব্যাংকটির পরিচালক পদে আছেন। নতুন মনোনয়ন পাওয়া তিন পরিচালকের প্রস্তাবিত তালিকা রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানো হবে। সূত্র বলছে, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে তাদের বিষয়ে অনাপত্তি পাওয়ার পর এবি ব্যাংকের বোর্ড সভায় চেয়ারম্যান নিয়োগ করা হবে। সেক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত চেয়ারম্যান হিসেবে এমএ আওয়ালের নাম শোনা যাচ্ছে।
এদিকে জানতে চাইলে পদত্যাগী চেয়ারম্যান এম ওয়াহিদুল হক বৃহস্পতিবার যুগান্তরকে বলেন, ‘ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী আমিসহ তিনজন পরিচালকের মেয়াদ শেষ হয়েছে। সে কারণে আজ (বৃহস্পতিবার) বিদায় নিয়েছি। সবকিছু স্বাভাবিক ছিল।’ এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, শারীরিক অসুস্থতার কারণে সভায় যেতে পারিনি।
অর্থ পাচারসহ বিভিন্ন অভিযোগে চাপে থাকায় ওয়াহিদুল হক বৃহস্পতিবারের এ সভায় উপস্থিত ছিলেন না। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো যুগান্তরের কাছে এমনটি দাবি করে।

সূত্র আরও জানায়, নতুন মনোনীত পরিচালক নাজির আহমেদ হলেন পদত্যাগকারী ভাইস চেয়ারম্যান সেলিম আহমেদের ছেলে। ব্যাংকার শিরিন শেখ ও মোশতাক আহমেদ হলেন এম মোরশেদ খানের প্রতিনিধি।
পরিচালনা পর্ষদে বড় ধরনের পরিবর্তন প্রসঙ্গে এম মোরশেদ খান যুগান্তরকে বলেন, মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় তিনজনকে ব্যাংকের পরিচালক পদ ছাড়তে হয়েছে। এমএ আওয়ালকে নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এবি ব্যাংকে বর্তমানে ৫ জন স্বতন্ত্র পরিচালক রয়েছেন। সাম্প্রতিক সময়ে চট্টগ্রামভিত্তিক একটি গ্রুপের পক্ষ থেকে এবি ব্যাংকের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শেয়ার কেনা হয়েছে এবং তারা ব্যাংকটিতে নেতৃত্ব দিতে চান- এমন গুঞ্জনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমিও শুনেছি। তবে এর বাস্তবতা কতটুকু, তা আমি জানি না।’

ব্যাংকটির কোম্পানি সচিব মহাদেব সরকার সুমন যুগান্তরকে জানান, নতুন পরিচালকদের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন পেলে পর্ষদ নতুন চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত করবেন।
সূত্র জানায়, প্রথম দফায় ১৭ আগস্ট ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় ব্যাংকটির এজিএম অনুষ্ঠানের কথা ছিল। কিন্তু ১৪ আগস্টের পর্ষদ সভায় তা বাতিল করা হয়। এরপর সিদ্ধান্ত হয়, ২১ ডিসেম্বর কুর্মিটোলা গলফ ক্লাবে এ দুটি সভা হবে। কিন্তু পরে লা মেরিডিয়ানে এজিএম করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়।
এজিএম চলাকালে একজন কর্মকর্তা বৃহস্পতিবার যুগান্তরকে বলেন, গত ৬ মাসে ব্যাংকটির উল্লেখযোগ্য শেয়ার কিনেছে চট্টগ্রামভিত্তিক একটি শিল্প গ্রুপ। ধারণা করা হচ্ছে, ব্যাংকের মূল নেতৃত্বে এ গ্রুপটি চলে আসতে পারে। একই প্রক্রিয়ায় এর আগে ইসলামী ব্যাংক ও সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকেও পরিবর্তন আসে। এ দুটি পরিবর্তনই ঘটে রাজধানীর দুটি পাঁচতারকা হোটেলে আয়োজিত সভায়। তিনি জানান, বর্তমানে গ্রুপটি বেশ কয়েকটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মালিকানা অর্জন করেছে।

ডিএসই সূত্র জানায়, ২০ নভেম্বর ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) কোম্পানিটির ৩ কোটি ৩৯ লাখ শেয়ার হাতবদল হয়, যার মূল্য ৮৫ কোটি টাকারও বেশি। ২ বছরের মধ্যে এবি ব্যাংকের এত শেয়ার হাতবদল হয়নি। এর আগে ৩১ মার্চ সর্বোচ্চ ২ কোটি ৮১ লাখ শেয়ার হাতবদল হয়েছিল।

সূত্র জানায়, ৬ মাসে শেয়ার লেনদেনে প্রায় প্রতিদিনই শীর্ষ পাঁচের মধ্যে ছিল এবি ব্যাংক। এ সময় ব্যাংকটির শেয়ারের দামও বাড়ে। আলোচ্য সময়ে প্রতিষ্ঠানটির ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের প্রতিটি শেয়ার ১৮ থেকে ২৬ টাকার মধ্যে লেনদেন হয়। ২৩ নভেম্বর স্টক এক্সচেঞ্জের পক্ষ থেকে কোম্পানির শেয়ারের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির কারণ জানতে চাওয়া হয়। মূলত ওই সময় থেকে বাজারে প্রচারণা ছিল, এবি ব্যাংকে বড় পরিবর্তন আসছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, এবি ব্যাংক সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ঋণ বিতরণ করেছে ২১ হাজার ৪৯২ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়েছে ১ হাজার ৬০৪ কোটি টাকা। বর্তমানে ব্যাংকটির মূলধন আছে ২ হাজার ৮৮৮ কোটি ২৪ লাখ টাকা।

https://www.jugantor.com/last-page/2017/12/22/181289