২০ ডিসেম্বর ২০১৭, বুধবার, ১১:১৩

শিশু হত্যা

ধরা পড়েনি ছিনতাইকারী

রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় ছিনতাইকারীদের থাবায় শিশু মৃত্যুর ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে চিহ্নিত ও গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। তবে ওই দিনের ঘটনার ৩টি সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। ফুটেজ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে
বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। ফুটেজে যানবাহন ও লোকজন চলাচল করতে দেখা গেছে। ফুটেজগুলো আবছা আবছাভাবে দেখা যাওয়ার কারণে দুর্বৃত্তদের চিহ্নিত করতে অসুবিধা হচ্ছে। এছাড়াও নিহত আরাফাতের মায়ের যে মোবাইল ফোন খোয়া গেছে ওই মোবাইল ট্র্যাক করে বিভিন্নস্থানে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, ৩টি ক্লু ধরে তারা দুর্বৃত্তদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। এ ঘটনায় যাত্রাবাড়ী থানার এক এএসআইকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, ছিনতাইয়ের ঘটনায় নয়, প্রশাসনিক কারণে তাকে যাত্রাবাড়ী থানা থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। সোমবার ভোরে যাত্রাবাড়ীর দয়াগঞ্জ মোড়ে চলন্ত রিকশায় ছিনতাইকারীরা ব্যাগ ধরে টান দেয়। এতে রিকশায় থাকা মায়ের কোল থেকে পড়ে ৬ মাসের শিশু আরাফাত মারা যায়।

সূত্র জানায়, এ ঘটনায় নিহতের বাবা শাহ আলম বাদী হয়ে যাত্রাবাড়ী থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলা নম্বর-৬৭। মামলায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার জন্য মামলার এজাহারে বাদীর পক্ষ থেকে পুলিশের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা যাত্রাবাড়ী থানার এসআই মো. রেজোয়ান আহমেদ মানবজমিনকে জানান, নিহতের বাবা বাদী হয়ে থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলার তদন্ত কাজ চলছে। তিনি আরো জানান, এ ঘটনায় পুলিশ স্থানীয়দের কাছে তথ্য সংগ্রহ করেছে। ওই এলাকার একাধিক সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। আমরা ফুটেজগুলো চুলচেরা বিশ্লেষণ করছি। খুব দ্রুত আসামিদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করা হবে। যাত্রাবাড়ী থানার ওসি আনিসুর রহমান বিশ্বাস জানান, ছিনতাইকারীদের থাবায় শিশু মারা যাওয়ার ঘটনাটি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছি। যাত্রাবাড়ীসহ আশপাশের এলাকায় ছিনতাইকারীদের ধরতে অভিযান চালানো হচ্ছে। খুব শিগগিরই মামলার একটি ফলাফল জানা যাবে।

মামলার তদন্তের সঙ্গে জড়িত যাত্রাবাড়ী থানার এক এসআই গতকাল সকালে মানবজমিনকে জানান, ছিনতাইকারীদের থাবায় শিশু মারা যাওয়ার ঘটনায় পুলিশ মামলাটি সংবেদনশীল হিসেবে নিয়েছে। একারণে পুলিশ ৩টি ক্লু ধরে তদন্ত শুরু করেছে।

সূত্র জানায়, ওই এলাকার একটি বিপণি বিতান এবং একটি ক্লিনিক থেকে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করেছে পুলিশ। ক্যামেরায় কুয়াশার কারণে আবছা আবছা ছবি থাকার কারণে পুলিশ দুর্বৃত্তদের চিহ্নিত করতে অসুবিধা হচ্ছে। পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে যে, চলন্ত রিকশা থেকে টান দিয়ে ব্যাগটি নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ছিনতাইকারী ব্যাগ টান দিয়ে দ্রুত রাস্তার এপার থেকে ওপারে চলে যায়। এ কারণে পুলিশ দীর্ঘক্ষণ ধরে ওই ফুটেজে চুলচেরা বিশ্লেষণ করে দেখছেন যে, কারা কারা রাস্তা পার হচ্ছে এবং কাদের গতিবিধি সন্দেহজনক। এছাড়াও নিহত আরাফাতের মায়ের কাছ থেকে ছিনতাইকৃত ব্যাগে একটি মোবাইল ফোন ও ১২ হাজার টাকা ছিল। ঘটনার পর থেকে মোবাইল ফোনটি বন্ধ রয়েছে। ওই মোবাইলের নম্বর ট্র্যাক করে পুলিশ ছিনতাইকারীদের অবস্থান জানার চেষ্টা করছে। এছাড়াও যাত্রাবাড়ী এলাকায় কারা ছিনতাই করে থাকে তার একটি তালিকা রয়েছে পুলিশের কাছে যারা আগে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিলো। পুলিশ তার নিজস্ব সোর্স দিয়ে তাদের অবস্থান চিহ্নিত করার চেষ্টা করছে। এ ঘটনায় তারা জড়িত কি-না তা তদন্ত করা হচ্ছে।

এদিকে, গত সোমবার রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানাধীন দয়াগঞ্জে ছিনতাইকালে মায়ের কোল থেকে পড়ে শিশু আরাফাতের মৃত্যুর ঘটনায় ওই থানার এএসআই বদরুল আলমকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। ওই ছিনতাইয়ের ঘটনার কাছাকাছি এক চেকপোস্টে অবস্থান করছিলেন সেই পুলিশ কর্মকর্তা। এ ঘটনায় গতকাল মঙ্গলবার সকালে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ওয়ারী বিভাগের উপ-কমিশনারের (ডিসি) কার্যালয়ের প্রশাসনিক সিদ্ধান্তে তাকে প্রত্যাহার করা হয়। ডিএমপির ওয়ারী বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) ফরিদ উদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের, জানান ‘প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী’ এএসআই বদরুলকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তবে ছিনতাইয়ের কবলে পাঁচ মাসের শিশুর প্রাণহানির ঘটনায় তার সম্পৃক্ততা নেই।

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=96943