২০ ডিসেম্বর ২০১৭, বুধবার, ১১:১১

কমছে না কৃষিঋণের খেলাপি

বড় ঋণের মতো কৃষি খাতের ঋণও খেলাপি হয়ে পড়ছে। আর এ খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। কিছুতে কমছে না বিপুল পরিমাণ এ মন্দঋণ। দীর্ঘদিন একই অবস্থায় রয়েছে। যার প্রায় ৯০ শতাংশই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যমতে, গত নভেম্বর শেষে কৃষিঋণে খেলাপির পরিমাণ ৫ হাজার ৬১ কোটি টাকা।

আর্থিক খাতের বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের জোর তৎপরতা এবং ব্যাংকগুলোর উদ্যোগের কারণে কৃষিঋণ বিতরণ বাড়ছে। তবে কৃষিঋণ খেলাপি হয়ে যাওয়ার বিষয়টি মোটেই ইতিবাচক নয়।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, কৃষিঋণ খেলাপিতে প্রকৃত কৃষকদের দোষ নেই। তারা অনিয়ম-দুর্নীতি করে না, বরং কিছু অসাধু ব্যাংক কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ী যোগসাজশ করে কৃষকদের ফাঁসায়। তিনি বলেন, কৃষিঋণের নামে বড় বড় কোল্ডস্টোরেজে ঋণ দেয়া হচ্ছে। এসব বন্ধ করতে হবে। এজন্য আবার প্রকৃত কৃষকদের বঞ্চিত করা যাবে না। তাদের ঋণ দিতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, কৃষি খাতে খেলাপি ঋণের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত এবং বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোয়, যার পরিমাণ ৪ হাজার ৮৮২ কোটি টাকা। এছাড়া কৃষি খাতে বেসরকারি এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১৭৮ কোটি টাকা। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি খেলাপি রয়েছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের, যার পরিমাণ প্রায় ২ হাজার ২৩৮ কোটি টাকা। এর পরেই সোনালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১ হাজার ৩৪০ কোটি টাকা। কৃষি খাতে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৭৯২ কোটি টাকা।

কৃষিঋণে খেলাপির বিষয়ে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইসমাইল বলেন, কৃষকদের নানা ধরনের সমস্যার কারণে অনেকে কৃষিঋণখেলাপি হয়ে পড়ছে। তবে আমাদের খেলাপি ঋণ আগের চেয়ে কিছুটা কমেছে। কৃষিঋণে আমরা অনেক ভালো করছি। কৃষিঋণের মধ্যে শস্য খাতে ঋণ বিতরণে সব সময় প্রথম হই।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসে প্রায় ৮ হাজার ২৩১ কোটি টাকার কৃষিঋণ বিতরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো বিতরণ করেছে ৩ হাজার ৩২১ কোটি টাকা। বেসরকারি এবং বিদেশি ব্যাংকগুলো বিতরণ করেছে প্রায় ৪ হাজার ৯১০ কোটি টাকা।

প্রসঙ্গত, চলতি অর্থবছরে ২০ হাজার ৪০০ কোটি টাকার কৃষি ও পল্লীঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ধরেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, কৃষিঋণ বিতরণে শীর্ষে রয়েছে সরকারি খাতের বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসে বিশেষায়িত এ ব্যাংকটি প্রায় ১ হাজার ৯৯৯ কোটি টাকার কৃষিঋণ বিতরণ করেছে। অর্থবছরের ৫ মাসে লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৪১ শতাংশ কৃষিঋণ বিতরণ করেছে কৃষি ব্যাংক। পুরো অর্থবছরের জন্য কৃষিঋণ বিতরণে ব্যাংকটির লক্ষ্যমাত্রা ৪ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। এর পরেই রয়েছে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক। আলোচ্য সময়ে এ ব্যাংকটি ৬০৩ কোটি টাকার কৃষিঋণ বিতরণ করেছে, যা লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৩৬ শতাংশ। পুরো অর্থবছরের জন্য এ ব্যাংকটির লক্ষ্যমাত্রা ১ হাজার ৬৮০ কোটি টাকা।

সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরে কৃষিঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা এর আগের অর্থবছরের তুলনায় ১৬ দশমিক ২৪ শতাংশ বেশি। গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১৭ হাজার ৫৫০ কোটি টাকার কৃষিঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। তবে অর্থবছর শেষে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৯ দশমিক ৬৫ শতাংশ বেশি ঋণ বিতরণ করেছিল ব্যাংকগুলো।

চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশ ব্যাংকের বার্ষিক নীতিমালায় কৃষিঋণ বিতরণের নতুন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২০ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। এ বছর বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর বাইরে বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংক ২০ কোটি এবং বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড (বিআরডিবি) ৭২০ কোটি টাকার কৃষিঋণ বিতরণ করবে বলে নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে।

 

https://www.jugantor.com/industry-trade/2017/12/20/180850