১১ ডিসেম্বর ২০১৭, সোমবার, ১০:১৯

বঙ্গভবনে হেলিপ্যাড নির্মাণের প্রস্তাব

যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন পরিকল্পনা কমিশনের

রাষ্ট্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা বঙ্গভবন। এটি রাষ্ট্রপতির অফিস এবং বাসভবন। এই ভবনের অভ্যন্তরে হেলিপ্যাড নির্মাণসহ নতুন অফিস ও আবাসিক ভবন নির্মাণের প্রস্তাব করেছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। কিন্তু বঙ্গভবন স্পর্শকাতর স্থাপনা হওয়ায় হেলিপ্যাড নির্মাণের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন।
কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, হেলিপ্যাড নির্মাণের যৌক্তিকতা এবং এর বিস্তারিত ব্যয় বিভাজন উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে (ডিপিপি) প্রদান করতে হবে। বঙ্গভবনের ঐতিহ্য ও নান্দকিতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ না হলে অতীব প্রয়োজনীয় চাহিদাসমূহ সংস্থানের জন্য স্থাপনা নির্মাণের পক্ষে মত দেয়া হয়েছে। গত মাসে প্রকাশিত প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভার কার্যপত্র সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এ প্রসঙ্গে গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার শনিবার যুগান্তরকে বলেন, ‘প্রকল্পটি এখনও অনুমোদন পায়নি। আমরা প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছি। ইতিমধ্যেই আমরা হেলিপ্যাড নির্মাণের যৌক্তিকতা তুলে ধরেছি। বঙ্গভবনের পক্ষ থেকেও যৌক্তিকতা তুলে ধরা হবে।’ পরিকল্পনা কমিশনের দায়িত্বশীল একাধিক কর্মকর্তা যুগান্তরকে জানান, ‘বঙ্গভবনের অভ্যন্তরে নতুন অফিস ও আবাসিক ভবন নির্মাণ’ নামের প্রকল্পটির পিইসি সভার পর বিভিন্ন বিষয়ে সুপারিশ দিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এখনও সংশোধিত ডিপিপি পরিকল্পনা কমিশনে আসেনি। এটি হাতে পেলে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদনের জন্য উপস্থাপনের সুপারিশ করা হবে।

কার্যবিবরণী সূত্রে জানা গেছে, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে প্রকল্পটির প্রস্তাব পাওয়ার পর গত ১৮ অক্টোবর পরিকল্পনা কমিশনে পিইসি সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় প্রকল্পের হেলিপ্যাড নির্মাণের যৌক্তিকতা জানতে চায় পরিকল্পনা কমিশন। প্রকল্পসংশ্লিষ্ট সংস্থার প্রতিনিধি জানান, নিরাপত্তার স্বার্থে রাষ্ট্রপতিকে বহনের জন্য বঙ্গভবনের অভ্যন্তরে প্রস্তাবিত প্রশাসনিক ভবনের ছাদে একটি হেলিপ্যাড নির্মাণের সংস্থান রাখা হয়েছে। এ বিষয়ে এসএসএফ এবং বিমান বাহিনীর সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। কিন্তু সভায় হেলিপ্যাড নির্মাণের যৌক্তিকতা এবং এর বিস্তারিত ব্যয় বিভাজন ডিপিপিতে দেয়ার জন্য একমত পোষণ করা হয়।
এ ছাড়া সভায় রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের প্রতিনিধি উল্লেখ করেন, বঙ্গভবন রাষ্ট্রপতির কার্যালয় হওয়া সত্ত্বেও এই কার্যালয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য আলাদা কোনো অফিস স্পেস বা ভবন নেই। বর্তমানে এসব কর্মকর্তা-কর্মচারী সাময়িকভাবে অফিস স্পেস হিসেবে পিজিআর সৈন্যদের ব্যারাকটি ব্যবহার করছেন। সম্প্রতি কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় নতুন অফিস ভবন ও আবাসিক ভবন নির্মাণ করা আবশ্যক হয়ে পড়েছে। এসব দিক বিবেচনা করে একটি নতুন অফিস ভবন (২টি বেউজমেন্টসহ ১১ তলা), কর্মকর্তাদের জন্য ১৮০০ বর্গফুটের আবাসিক ভবন, কর্মচারীদের জন্য ৮৫০ বর্গফুটের আবাসিক ভবন এবং ছয় তলাবিশিষ্ট একটি ব্যাচেলর মেস ভবন নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে।

এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হয়, ১১ তলা ভবন নির্মাণ বঙ্গবভনের ঐতিহ্য ও নান্দনিকতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা। এ বিষয়ে স্থাপত্য অধিদফতরের মতামত চাওয়া হলে সভায় প্রধান স্থপতি বলেন, বঙ্গভবনের সঙ্গে পুঙ্খানুপুঙ্খ সামঞ্জস্য রাখতে গেলে এর আশপাশে বহুতল ভবন করা সমীচীন নয়। কিন্তু বঙ্গভবনের চাহিদা এবং বিশেষ করে রাষ্ট্রপতির ইচ্ছা বাস্তবায়ন করতে গেলে কিছুটা ছাড় দিতেই হবে। তা ছাড়া বঙ্গভবনের চার পাশে অনেক বহুতল ভবন ইতিমধ্যেই নির্মিত হয়েছে। সার্বিক বিবেচনায় অতীব প্রয়োজনীয় চাহিদার সংস্থানের জন্য স্থাপনা নির্মাণ করা যেতে পারে। কিন্তু সভায় একমত পোষণ করা হয়, রাষ্ট্রপতির নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত এবং কার্যালয় পরিচালনার জন্য অতি আবশ্যক কর্মবকর্তা-কর্মচারীদের জন্য সীমিতভাবে আবাসিক ও দাফতরিক সংস্থান প্রকল্পের আওতায় করা যেতে পারে।
সূত্র জানায়, ১৯৬১-১৯৬৪ সালের মধ্যে বঙ্গভবন নির্মাণ করা হয়। এটি রাষ্ট্রের একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ, স্পর্শকাতর এবং কি-পয়েন্ট ইন্সটলমেন্ট (কেপিআই) স্থাপনা। এ ভবন থেকেই রাষ্ট্রপতি সাংবিধানিক, আইনি ও নির্বাহী কার্যক্রম পরিচালনা করেন।

তা ছাড়া বঙ্গভবনে অনুষ্ঠিত হয় বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান। যেমন প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের শপথ গ্রহণ উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়া রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য প্রায়ই কূটনৈতিক, বিদেশি রাষ্ট্রীয় অতিথিসহ বিভিন্ন গণ্যমান্য ব্যক্তি আসেন। কিন্তু সময়ের সঙ্গে বঙ্গভবনের বাইরের ও ভেতরের অবস্থা জরাজীর্ণ ও ক্ষয়িষ্ণু হয়ে পড়েছে। এর সুরক্ষা ও সজ্জিতকরণ আবশ্যক। দরবার হল পুনর্বাসন ছাড়া ১৯৮৫ সালের পর বঙ্গভবনের উন্নয়ন বা পুনর্বাসনে কোনো কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়নি। এ পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমানে প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে।
এর আগে রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের ‘আপন বিভাগ’ থেকে ২৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে বঙ্গভবনের নির্মাণ ও সংস্কার কার্যক্রম সংক্রান্ত একটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয় পরিকল্পনা কমিশনে। প্রকল্পটির ওপর ২০১৫ সালের ১৭ মে পিইসি সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় প্রকল্পের অতীব গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত করে বিভিন্ন নির্দেশনা দেয়া হয়। নির্দেশনাগুলোর মধ্যে ৫০ কোটি টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা, বঙ্গভবন হেরিটেজ ভবনের মতো গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় নগর কমিটির সুপারিশের আলোকে প্রকল্প প্রস্তাব তৈরি, রাষ্ট্রপতির একান্ত সচিবকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন এবং কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে ডিপিপি পুনর্গঠন ইত্যাদি।
পরে রাষ্ট্রপতির কার্যালয় থেকে এসব সুপারিশ প্রতিপালন করা হয় এবং প্রকল্পের ব্যয় ৫০ কোটি টাকার মধ্যে রাখতে দুটি ধাপে করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এর অংশ হিসেবে ইতিমধ্যেই সুইমিং সংক্রান্ত কাজ একটি পৃথক প্রকল্পের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হচ্ছে। আবার ব্যানকোয়েট হল নির্মাণ সংক্রান্ত অপর একটি প্রকল্প অনুমোদনের জন্য প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানা গেছে।

https://www.jugantor.com/last-page/2017/12/10/178270