৯ ডিসেম্বর ২০১৭, শনিবার, ৭:১০

ইউনিসেফের প্রতিবেদন

বিষাক্ত বাতাসে বসবাস ১৭ মিলিয়ন শিশুর

তিন-চতুর্থাংশই দক্ষিণ এশিয়ার * ঝুঁকিতে মস্তিষ্কের বিকাশ

বিশ্বে এক বছরের কম বয়সী প্রায় ১৭ মিলিয়ন (১ কোটি ৭০ লাখ) শিশু এমন সব এলাকায় বসবাস করে, যেখানে বায়ু দূষণের মাত্রা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সীমার চেয়ে ছয়গুণ বেশি। প্রতিটি শ্বাসে তাদেরকে বিষাক্ত বায়ু নিতে হয়। এরফলে তাদের মস্তিষ্কের বিকাশ ঝুঁকিতে পড়ছে। এসব শিশুর তিন-চতুর্থাংশেরও বেশি (১২ মিলিয়ন) দক্ষিণ এশিয়ায় বসবাস করে।

সম্প্রতি প্রকাশিত ইউনেস্কোর এক প্রতিবেদনে এ তথ্য ওঠে এসেছে। ‘বায়ু দূষণ কীভাবে ছোট শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশকে প্রভাবিত করতে পারে’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দূষিত বায়ুতে শ্বাস নেয়া হলে তা সুনির্দিষ্টভাবে মস্তিষ্কের টিস্যু এবং জ্ঞানের বিকাশকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে- যার বিরূপ প্রভাব সারা জীবন শিশুকে বয়ে বেড়াতে হয়।

এ প্রসঙ্গে ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক অ্যান্থনি লেক বলেন, ‘বায়ু দূষণ শুধু শিশুর ফুসফুসের গঠনকেই ক্ষতিগ্রস্ত করে না, এটা স্থায়ীভাবে তাদের মস্তিষ্কের বিকাশকে ক্ষতিগ্রস্ত করে- যা তাদের ভবিষ্যৎ জীবনকেই ক্ষতির সম্মুখীন করে। বায়ু দূষণ থেকে শিশুদের নিরাপদ রাখতে পারলেই তাদের উপকার হবে। অন্যদিকে স্বাস্থ্য সেবা খরচ অনেকাংশে সাশ্রয়ী হবে। তিনি বলেন, কোনো শিশুরই বিপজ্জনকভাবে দূষিত বাতাসে শ্বাস নেয়া উচিত নয় এবং কোনো সমাজেরই বায়ু দূষণকে অবজ্ঞা করা উচিত নয়।

কৃত্রিম উপগ্রহ থেকে পাওয়া ছবিতে দেখা যায়, আনুপাতিক হিসাবে দক্ষিণ এশিয়াতেই সবচেয়ে বেশি শিশু বায়ু দূষণ এলাকায় বসবাস করে। ১২ দশমিক ২ মিলিয়ন শিশু এমন এলাকায় থাকে, যেখানে বাইরের বাতাসে দূষণের মাত্রা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নির্ধারিত আন্তর্জাতিক সীমার চেয়ে ছয়গুণ বেশি। পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ৪ দশমিক ৩ মিলিয়ন শিশু এমন এলাকায় থাকে, যেখানে দূষণের মাত্রা নির্ধারিত সীমার ছয়গুণ ছাড়িয়ে যায়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘জীবনের প্রথম সংকটময় এক হাজার (১,০০০) দিনে অপর্যাপ্ত পুষ্টি, উদ্দীপনা ও সহিংসতার মতো বায়ু দূষণও শিশুদের মস্তিষ্কের প্রারম্ভিক বিকাশকে ক্ষতিগ্রস্ত করে শৈশবকালীন বিকাশে বিরূপ প্রভাব বিস্তার করে। দূষণ কণাগুলো এতোই ছোট যে, সেগুলো রক্তপ্রবাহে ঢুকে মস্তিষ্কে প্রবেশ করেত পারে এবং ব্লাড-ব্রেন ব্যারিয়ারকে নষ্ট করে দিতে পারে। ফলে স্নায়ু প্রদাহের সৃষ্টি হয়। দূষিত বায়ু নেয়ায় অতিসূক্ষ্ম ম্যাগনেটাইটের মতো কিছু দূষণ কণা ঘ্রাণজনিত স্নায়ু এবং অন্ত্রের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে এবং তাদের চৌম্বকীয় শক্তির (ম্যাগনেটিক চার্জ) কারণে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস সৃষ্টি হয়। এটা শিশুদের নিউরোডিজেনারেটিভ রোগের কারণ। পলিসাইক্লিক অ্যারোমেটিক হাইড্রোকার্বনের মতো অন্য ধরনের দূষণ কণাগুলো মস্তিষ্কের এমন অংশের ক্ষতি করতে পারে, যেসব অংশ মস্তিষ্কের কোষের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করে ও শিশুদের শিক্ষা এবং বিকাশের ভিত্তি রচনা করে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, একটি ছোট শিশুর মস্তিষ্ক অত্যন্ত নাজুক। কারণ প্রাপ্তবয়স্ক একজনের মস্তিষ্কের তুলনায় খুব অল্প পরিমাণে বিষাক্ত রাসায়নিকেই এটি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বায়ু দূষণের ক্ষেত্রেও শিশুরা অত্যন্ত ঝুঁকিতে থাকে। কারণ তারা অনেক দ্রুত শ্বাস নেয় এবং তাদের শারীরিক প্রতিরক্ষা ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পূর্ণ বিকশিত থাকে না।

এমন তাৎক্ষণিক পদক্ষেপসহ শিশুদের ক্রমবিকাশমান মস্তিষ্কের ওপর বায়ু দূষণের ক্ষতিকর প্রভাব কমাতে জরুরি পদক্ষেপগুলো প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে- ঘরে তামাকজাত পণ্য, রান্নার চুলা ও আগুন থেকে উদগত ক্ষতিকর ধোঁয়া থেকে শিশুদের সুরক্ষিত রাখার মতো পদক্ষেপ বাবা-মায়েরা গ্রহণ করতে পারেন। জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর পরিবর্তে পরিচ্ছন্ন ও নবায়নযোগ্য উৎসে বিনিয়োগের বিষয়ে উৎসাহ দিতে হবে। পাশপাশি সুলভে গণপরিবহন প্রাপ্তির সুধিবা প্রদান, নগর এলাকায় সবুজ বেষ্টনী বাড়ানো, উন্মুক্ত স্থানে ক্ষতিকর রাসায়নিক বর্জ্য পোড়ানো বন্ধ করার প্রতি গুরুত্বারোপ করতে হবে। একই সঙ্গে দিনের যে সময়ে বায়ু দূষণ সব চেয়ে কম থাকে সেই সময়ে শিশুদের চলাফেরা করানো, চূড়ান্ত ক্ষেত্রে যথোপযুক্ত দূষণ প্রতিরোধে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। সবচেয়ে যে বিষয়য়ের ওপর গুরুত্ব দেয়া দরকার তা হল- দক্ষ নগর পরিকল্পনা প্রণয়ন, যাতে দূষণের প্রধান উৎসগুলো স্কুল, ক্লিনিক বা হাসপাতালের কাছাকাছি না থাকে।

https://www.jugantor.com/last-page/2017/12/09/177999