৯ ডিসেম্বর ২০১৭, শনিবার, ৭:০৯

অসাধু ব্যবসায়ীদের কবলে পেয়াঁজের বাজার ॥ প্রতি কেজি ১২০ টাকা

পেয়াঁজের কেজি ১২০ টাকা। চালের দামও আকাশচুম্বী। সবজির বাজারও কম নয়। মানুষ যাবে কোথায়? খাবে কি? দিনের পর দিন নিত্যপণ্যের দাম বেড়েই যাচ্ছে। দেখার কেউ নেই। তিন বেলা পেটপুরে ভাত খাওয়াই এখন অল্প আয়ের মানুষের জন্য কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। অসাধু ব্যবসায়ীরা সুযোগ বুঝে একেক সময় একেক পণ্যের দাম আকাশচুম্বী করে অতিরিক্ত মুনাফা হাতিয়ে নিচ্ছে। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে তেমন কোন পদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছে না। অসাধু ব্যবসায়ীদের কবল থেকে পেয়াঁজের বাজার উদ্ধার করে দাম কমানোর জন্য বাজার মনিটরিং এর মাধ্যমে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার জন্য দাবি জানিয়েছে ভোক্তারা।

গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বাজারে দেখা গেছে, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মধ্যে আরও দ্রব্যমূল্য হয়ে উঠেছে পেঁয়াজ। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় এ পণ্যটি। খুচরা বাজারে এক দিনের ব্যবধানে কেজিতে ২০ টাকা দাম বেড়ে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ১২০ টাকায় ও ভারতীয় পেঁয়াজ ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি পেলে ভারতীয় পেয়াঁজের দাম বাড়ানোর যুক্তি থাকে, কিন্তু দেশী পেয়াঁজের দাম বৃদ্ধির মূলে ব্যবসায়ী ও আড়তদারদের অতিরিক্ত মুনাফাই অন্যতম।

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে দেখা গেছে, পাইকারি দোকানে দেশী পেঁয়াজ প্রতি পাল্লা (৫ কেজি) ৫৫০ টাকা চাওয়া হচ্ছে। অর্থাৎ প্রতি কেজি ১১০ টাকা। অন্যদিকে ভারতীয় নতুন মৌসুমের পেঁয়াজের পাইকারি দর কেজিপ্রতি ৭৪ টাকা ও পুরোনোটি ৮০ টাকা।
গত বছর এ সময়ে পেঁয়াজের দাম ছিল এখনকার তিন ভাগের এক ভাগ। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজারদরের তালিকা অনুযায়ী, গত বছর এ সময়ে ভারতীয় ও দেশী পেঁয়াজের কেজিপ্রতি দাম ছিল ২৫ থেকে ৪০ টাকার মধ্যে। অর্থাৎ প্রতি কেজি পেঁয়াজ কিনতে এখন নগরবাসীর খরচ বেড়েছে তিন গুণ বা তারও বেশি।
মাছ, গোশত, সবজি রান্না করতে পেঁয়াজ লাগবেই। তাই দাম যতই হোক, ক্রেতাদের পেঁয়াজ কিনতেই হয়। বাজার করতে আসা আসাদ বলেন, ‘আমাদের পেঁয়াজ খেতে হয়। ব্যবসায়ীরা এর সাজা আমাদের দিচ্ছেন। নইলে দেশী পেঁয়াজের দাম এত বেশি হবে কেন?’

ব্যবসায়ীরা বলছেন, এবার বৃষ্টিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজের আবাদ পিছিয়েছে। বছরের এ সময়ে সাধারণত নতুন মৌসুমের মুড়িকাটা পেঁয়াজ ওঠে। দুই মাসের চাহিদা পূরণ হয় এ পেঁয়াজ দিয়েই। কিন্তু এবার সে পেঁয়াজের দেখা মিলছে না।
এদিকে নতুন ধান উঠলেও স্বস্তি নেই চালের বাজারে। দাম কমার পরিবর্তে উল্টো বেড়েছে। প্রায় সব রকমের চাল কেজিতে বেড়েছে ১ থেকে ২ টাকা। চালের বাজার নিয়ে দিশেহারা ক্রেতারা। চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে নানামুখী উদ্যোগ নেয়া হলেও তা কোন কাজেই আসছে না। চালকল মালিকদের দাবি, ধানের দাম বেশি হওয়ায় চালের দাম কমছে না। ধান উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হলেও কি কারণে দাম কমছে না তার কোন যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই। ক্রেতা-বিক্রেতা দায়ী করছে বাজার মনিটরিং ব্যবস্থাকে। চালের বাজার আগের অবস্থায় ফিরবে কি না কেউ তা বলতে পারছে না।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দাবি, বাজার নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত মনিটরিং হচ্ছে। চালের দাম কমে বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে এমনটাই প্রত্যাশা ক্রেতাদের। সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলেও চালের বাজারে মূল্য বৃদ্ধি রোধ করা যাচ্ছে না। চালের বর্তমান মূল্যও অস্বাভাবিক মনে করা হচ্ছে। সরকারের নিরাপত্তা মজুদ সন্তোষজনক পর্যায়ে পৌঁছতে আরও সময় লাগবে।

সাধারণ মানুষের ভোগান্তি কমাতে চাল আমদানিতে এই সুবিধা দেয়া হলেও বাস্তবে এর সুফল গিয়েছে আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীদের পকেটে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আমদানি পর্যায়ে চালের শুল্ক প্রত্যাহারের ফলে পণ্যটির দাম কমেছে সামান্য। সরকারের পক্ষ থেকে খোলাবাজারে চাল বিক্রি হলেও দাম তুলনামূলক বেশি।
এদিকে রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, এলাকা ভেদে খুচরা বাজারে এখনো মিনিকেট চালের ৫২ কেজির বস্তা বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ৪০০ টাকায়। আর পাইকারিতে এই চাল বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৯০০ টাকায়।
ফলে মিনিকেটের খুচরা মূল্য দাঁড়াচ্ছে ৬০ থেকে ৬৮ টাকা, আর পাইকারি মূল্য ৫৮ টাকা। আগে এই মিনিকেট বিক্রি হচ্ছিল প্রতি কেজি ৪৮ থেকে ৫২ টাকায়।
বাজারের সর্বশেষ পরিস্থিতি যাচাই করে দেখা যায়, মিনিকেটর মতোই বিআর আটাশ ও পাইজাম বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে। খুচরায় বিআর আটাশ ৫২ কেজির বস্তা ২ হাজার ৬০০ টাকা, আর পাইজাম ২ হাজার ৫০০ টাকা করে।
চাল বিক্রয়কর্মী রাসেল জানান, খুচরায় মিনিকেট কেজি প্রতি ৫৮ থেকে ৬০ টাকা, নাজিরশাইল ৬৬ থেকে ৬৮ টাকা, ভারতীয় আটাশ চাল ৪৭ টাকা, দেশি আটাশ চাল ৫৪ টাকা এবং ভারতীয় মোটা চাল (স্বর্ণা) ৫৪ টাকায় প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে।

পাইকারি ব্যবসায়ীরা দাম না কমার জন্য সরকারের মনিটরিং ব্যবস্থাকে দায়ী করেছেন। তারা বলছেন পাইকারিতে চালের দাম কমলেও খুচরায় তেমন কমেনি। কারণ হিসেবে তারা বলেন,বাজারে সরকারের কোন মনিটরিং টিম নেই। আর এ কারণেই পাইকারিতে দাম কমলেও খুচরায় দাম কমেনি। এর সুফল পাচ্ছে না সাধারণ ক্রেতারা।
তবে সবজির বাজারে কিছুটা স্বস্তি আসছে। শীতের সবজির দামও কিছু কমেছে। বিভিন্ন ধরনের সবজি পাওয়া যাচ্ছে প্রতি কেজি ৩০ থেকে ৫০ টাকার মধ্যে। প্রতি কেজি বেগুন প্রকারভেদে ১০ টাকা কমে ৪০ থেকে ৫০ টাকা, পটল ১০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা, কচুর লতি ৪৫ টাকা, লাউ প্রতি পিস ৪০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া প্রতি পিস ২০ টাকা, কাঁচামরিচ ১৪০ টাকা, পেঁপে ২০ টাকা, শিম ৪০ থেকে ৫০ টাকা, বরবটি ৬০ টাকা, টমেটো ১২০ টাকা, গাজর ৪০ টাকা, শসা ৩০ থেকে ৪০ টাকা, মূলা ৩০ টাকা, নতুন আলু ৩৫ টাকা, চিচিঙ্গা ৫০ টাকা, প্রতি পিস বাধাকপি ৩০ টাকা, প্রতি পিস ফুলকপি ৩০ টাকা থেকে ৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এ ছাড়া দেশি পেঁয়াজ ১২০ টাকা, আমদানি করা পেঁয়াজ ৯০ টাকা, দেশি রসুন ৭০ টাকা, আমদানি করা রসুন ৯০ থেকে ১০০ টাকা।
গোস্তের বাজারে প্রতি কেজি গরুর গোশত ৫০০ টাকা, খাসির গোশত ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা, ব্রয়লার মুরগি ১৩৫ টাকা, লেয়ার মুরগি প্রতি পিস আকারভেদে ১৫০ থেকে ২২০ টাকা ও পাকিস্তানি মুরগি ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি ডজন ফার্মের লাল ডিম ৭০-৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অবশ্য হাঁসের ডিমের হালি ৪৫ টাকা।

বাজারে দেশি কই, শিং, মাগুর, শোল, পুঁটি, মেনি, খলিশা, টাকি, ফলি ইত্যাদি মাছ পাওয়া যাচ্ছে। অবশ্য বাজার ও আকারভেদে দামের পার্থক্য আছে। তবে সব ধরনের মাছের দাম কেজিতে ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেড়েছে। দেশি কই আকারে বড় হলে দেড় হাজার টাকা কেজি হাঁকছেন বিক্রেতারা। কিন্তু ছোট কই ৪০০ টাকা। বড় আকারের শোল মাছের কেজি ৬০০ টাকা চাইছেন বিক্রেতারা। তবে মাঝারি শোলের কেজি ৩৫০-৪০০ টাকা। প্রতি কেজি রুই মাছ ৩৫০ টাকা, কাতল মাছ ৩০০ টাকা, তেলাপিয়া ১৫০ টাকা, পাঙ্গাশ মাছ ১৪০ টাকা, সিলভার কার্প ১৫০ টাকা, শিং মাছ ৫০০ টাকা, চিংড়ি ৬০০ টাকা ও বোয়াল ২৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

http://www.dailysangram.com/post/310547