৩ ডিসেম্বর ২০১৭, রবিবার, ৯:৫২

ভর্তুকির টাকা নিয়ে বিপিসি অর্থমন্ত্রণালয় টানাপড়েন!

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) কাছে প্রায় ২৮ হাজার কোটি টাকা ঋণ পাওনা দাবি করছে অর্থ মন্ত্রণালয়। পাওনা আদায়ে ইতিমধ্যে বিপিসিকে একাধিক চিঠিও দেয়া হয়েছে মন্ত্রণালয় থেকে। সর্বশেষ গত সপ্তাহেও একটি চিঠি পাওয়ার কথা জানিয়েছে বিপিসি। বিপিসি’র ভাষ্য, ঋণ নয়, ভর্তুকি হিসেবে এ টাকা দিয়েছিল অর্থমন্ত্রণালয়। এখন সেই টাকা ঋণ হিসেবে দাবি করা হচ্ছে। আর এ নিয়ে দুই সংস্থার মধ্যে কয়েকমাস ধরে টানাপড়েন চলছে বলে জানিয়েছেন বিপিসি’র শীর্ষ কর্মকর্তারা।

বিপিসি’র পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড প্ল্যানিং) মোজাম্মেল হক বলেন, বিপিসিকে ভর্তুকি হিসেবে ঘোষণা দিয়ে ২০১০-২০১১ সালে ১০ হাজার কোটি টাকা দিয়েছিল অর্থমন্ত্রণালয়। আর সেই টাকা এখন ঋণ হিসেবে সুদে-আসলে ২৮ হাজার কোটি টাকা পাওনা দাবি করে তা আদায়ের জন্য চিঠি দেয়া হচ্ছে অর্থমন্ত্রণালয় থেকে। মোজাম্মেল হক জানান, ২০১২ সালের আগ পর্যন্ত বিপিসি ছিল লোকসানি খাত। যা ভর্তুকির মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে আসছে। ২০১০ সালের আগেও সরকার ৯ বছরে প্রায় ৪৪ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেয় বিপিসিকে। যা কোন সময় ঋণ হিসেবে ফেরত চাওয়া হয়নি। তিনি জানান, ২০১৩ সালের পর থেকে আমদানি মূল্যের চেয়ে বেশি দামে তেল বিক্রি করায় লাভের মুখ দেখছে বিপিসি। সেই থেকে গত তিন অর্থবছরে এ খাতে বিপিসি ২১ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকার বেশি মুনাফা করেছে। তন্মধ্যে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ২ হাজার ২০০ কোটি টাকা জমা দিয়েছে বিপিসি। এর আগে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ বাজারে তেল বিক্রি করে বিপিসি মুনাফা করেছে ৭ হাজার ৩৩৪ কোটি ১৩ লাখ টাকা। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৯ হাজার ৪০ কোটি ৭ লাখ। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বিপিসি মুনাফা অর্জন করলেও আভ্যন্তরীণ অবকাঠামোর উন্নয়নে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে কোনো টাকা জমা দেয়নি। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে সরকারি কোষাগারে জমা দিয়েছে ১ হাজার কোটি টাকা, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে জমা দিয়েছে ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। এ বিষয়ে বিপিসি’র একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, গত তিন অর্থবছরে বিপিসি লাভের মুখ দেখলেও আন্তর্জাতিক বাজারের ডলারের মূল্য বৃদ্ধির কারণে ধীরে ধীরে আবার লোকসানের দিকে এগোচ্ছে। তার দাবি, গত এক সপ্তাহে এক ডলারের বিপরীতে ৭৯ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৮৩ টাকা। এ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে চলতি অর্থবছরে বিপিসি’র লোকসান হবে ৬০০ কোটি টাকা। এছাড়া বর্তমানে প্রতি লিটার ফার্নেস অয়েল বিক্রিতে ৯ টাকা লোকসান হচ্ছে বলে জানান তিনি। জানা গেছে, ২০১৩ সালের আগে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে গেলেও ভর্তুকি দিয়ে আভ্যন্তরীণ বাজারে জ্বালানি তেল বিক্রি করেছে বিপিসি। ২০১১ সাল পর্যন্ত জ্বালানি খাতে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়েছে অর্থমন্ত্রণালয়। কিন্তু ভর্তুকির সেই টাকাকে এখন ঋণ হিসেবে দাবি করে সুদে-আসলে প্রায় ২৮ হাজার কোটি টাকা ফেরত চাওয়া হচ্ছে অর্থমন্ত্রণালয় থেকে। এ ব্যাপারে অর্থমন্ত্রণালয় থেকে এ পর্যন্ত চারটি চিঠি দেয়া হয়েছে। সর্বশেষ চিঠি গত সপ্তাহে বিপিসি’র কাছে পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়, ২০১০ ও ২০১১ সালে দেয়া ১০ হাজার কোটি টাকা চুক্তিপত্রে মূলত ঋণ হিসেবে দেয়া হয়েছে। যা বর্তমানে সুদে-আাসলে বেড়ে প্রায় ২৮ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। এ টাকা যথাসম্ভব দ্রুত পরিশোধের তাগাদা দেয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, দেশের অভ্যন্তর বাজারে প্রতিলিটার অকটেনে ২৫ টাকা, পেট্রোলে ২০ টাকা, ডিজেল ও কেরোসিনে প্রতি লিটারে ১৭ টাকা মুনাফা করছে বিপিসি। আর লাভের মুখ দেখার পর থেকে প্রথমেই দেনা শোধ করেছে সংস্থাটি। বাড়তি টাকা দিয়ে বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়নের কাজ করেছে জ্বালানি মন্ত্রণালয়। জানা গেছে, ২০১৬ সালের ২৪শে এপ্রিল দিবাগত রাত ১২টা থেকে তেলের দাম কমানোর সরকারি সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়। নতুন দর অনুযায়ী অকটেন ৮৯ টাকা, পেট্রোল ৮৬ টাকা, ডিজেল ও কেরোসিন ৬৫ টাকা। এর আগে ২০১৩ সালে প্রতি লিটার অকটেন ৯৯ টাকা, পেট্রোল ৯৬ টাকা, কেরোসিন ও ডিজেল ৬৮ টাকা ছিল। অথচ জ্বালানি খাতে বিপিসি’র উৎপাদন খরচ অকটেনে ৬১ দশমিক ২৫ টাকা, পেট্রোলে ৬২ দশমিক ৫০ টাকা, ডিজেলে ৪৯ দশমিক ২৫ টাকা এবং কেরোসিনে ৪৮ দশমিক ২৫ টাকা। ২০১৪ সাল থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের ব্যাপক দরপতন হলেও বিপিসি’র ভর্তুকির লোকসান পুষিয়ে নেয়ার অজুহাতে তেলের দাম কমাচ্ছে না সরকার।

 

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=94548