২ ডিসেম্বর ২০১৭, শনিবার, ১০:০৫

দুই ব্যবসায়ীকে তুলে নিয়ে ২০ লাখ টাকা আদায়

ডিবির তিন সদস্য সাময়িক বরখাস্ত

দুই সিএনজি অটোরিকশা ব্যবসায়ীকে তুলে নিয়ে ২০ লাখ টাকা ঘুষ নেয়ার অভিযোগ উঠেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবির) দক্ষিণ বিভাগের রমনা জোনাল টিমের কয়েক সদস্যের বিরুদ্ধে। এ কারণে টিমের তিন সদস্য পরিদর্শক বাহাউদ্দিন ফারুকী, এসআই পলাশ কুমার নাথ ও কনস্টেবল সাইফুল কবিরকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। ঘটনা তদন্তে একটি কমিটি করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ। তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছে ডিবি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ১৯ নভেম্বর সিএনজি অটোরিকশা ব্যবসায়ী বিল্লাল হোসেনকে রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকার বাসা থেকে তুলে নেয় ডিবি পুলিশ। গাড়িতে বিভিন্ন স্থানে ঘুরিয়ে ব্যাংকে কত টাকা আছে, কিভাবে ঢাকায় বাড়ি কিনেছেন, কোথা থেকে এত টাকা আয় হয়, এসব বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। পরে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে ব্যবসায়ীর কাছে ৫০ লাখ টাকা দাবি করা হয়। টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে নানা ভয়ভীতি দেখানো হয়।
এদিকে ব্যবসায়ী বিল্লালের স্ত্রী তার স্বামীকে পেতে বিভিন্ন স্থানে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন ডিবি পুলিশের রমনা জোনাল টিম তাকে নিয়ে গেছে। একপর্যায়ে আমিন নামের এক ব্যক্তির শরণাপন্ন হন বিল্লালের স্বজনরা। প্রথমে ৫০ লাখ, পরে ২০ লাখে নেমে আসে ডিবি কর্মকর্তারা। এক পর্যায়ে ১০ লাখ টাকা জোগাড় করে আমিনের কাছে দিতে রাজি হন বিল্লালের স্বজনরা। আমিন ডিবি কর্মকর্তাদের সঙ্গে মধ্যস্থতা করে বিকালে তার গাড়ি দিয়ে ডিবি কার্যালয় থেকে আসাদগেট সংলগ্ন আড়ংয়ের সামনে নামিয়ে দেন বিল্লালকে। আর ঘুষের টাকাও লেনদেন করে ডিবির সোর্স আমিন।
এ ঘটনার মাত্র কয়েকদিন আগে আরেক সিএনজি ব্যবসায়ী কমল কুমার রায়কে তুলে নিয়ে যায় ডিবির ওই টিম। তাকেও ভয়ভীতি দেখিয়ে ১০ লাখ টাকা আদায় করে ডিবি পুলিশ। ব্যবসায়ীরা জানান, সোর্স আমিন ডিবির সহকারী কমিশনার আরাফাত লেলিনের খালাতো ভাই। আমিন চোরাই সিএনজি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। মগবাজার মধুবাগে মনু গ্যারেজে এসব চোরাই সিএনজি রেখে ব্যবসা করেন তিনি।

ডিবির একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র যুগান্তরকে জানায়, নিয়ম অনুযায়ী কোনো অভিযানে বের হওয়ার আগে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের জানাতে হয়। অভিযানের ক্ষেত্রে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট ডিসিকে জানাতে হয়। কিন্তু দুই সিএনজি ব্যবসায়ীকে তুলে আনার ক্ষেত্রে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কিছুই জানতেন না।
জানা গেছে, ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা বিষয়টি মগবাজারের ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোক্তার হোসেনকে জানান। এরপর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন মগবাজার এলাকার সিএনজি অটোরিকশা ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর হোসেন, বিল্লাল হোসেন, আবদুর রশিদসহ বেশ কয়েকজন। ঘটনা শুনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাটি তদন্তের নির্দেশ দেন। প্রাথমিক অভিযোগের ভিত্তিতে তিনজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
ভুক্তভোগী একাধিক ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে যুগান্তরকে বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের তুলে নিয়ে হয়রানি করছে ডিবি। টাকা না দিলে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করা হয়। ডিবির এসব অপকর্মে অসহায় ব্যবসায়ীরা।’ তারা আরও জানান, ‘ডিবি অফিসে নিয়ে আমাদের ব্যক্তিগত সম্পদের হিসাব নেয়। তারপর মোট সম্পদের ২০ ভাগ টাকা দাবি করে। টাকা না দিলে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেয়া হয়।’
জানতে চাইলে এক ব্যবসায়ী যুগান্তরকে বলেন, ‘ঘটনার পর বিষয়টি স্থানীয় কমিশনারকে জানানো হয়। পরে তিনি আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে নিয়ে যান। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পুরো ঘটনা শুনে ডিবির যুগ্ম কমিশনার আবদুল বাতেনকে তাৎক্ষণিকভাবে ডেকে আনেন। সেখানে যুগ্ম কমিশনার আমাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন। পরে প্রাথমিক অভিযোগের ভিত্তিতে চার পুলিশ সদস্যকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়। ঘটনাটি তদন্ত করে পরবর্তী ব্যবস্থা নিতে বলেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারের উপকমিশনার মাসুদুর রহমান যুগান্তরকে জানান, এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি হয়েছে। প্রাথমিক অভিযোগের ভিত্তিতে তিনজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

https://www.jugantor.com/first-page/2017/12/02/176418