১ ডিসেম্বর ২০১৭, শুক্রবার, ৯:৩৫

চার বছর আগে অপহূত ১৯ জন আজও ফিরেনি

নিখোঁজের জিডির তদন্তে অগ্রগতি নেই
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে ওদের ধরে নেওয়া হয়


চার বছর আগে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে ধরে নিয়ে যাওয়া ১৯ জন এখনও ফিরে আসেননি। তাদের খোঁজে দায়ের করা জিডিগুলোর তদন্তেও কোন কুল-কিনারা হয়নি। তারা ফিরবে নাকি ফিরবে না-এ নিয়ে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে এক ধরণের উত্কণ্ঠা বিরাজ করছে। স্বজনের খোঁজে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে ধর্না দিতে দিতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন তারা। এদের কেউ সন্তানহারা, কেউ স্বামীহারা, কেউ ভাইহারা, কেউ বা পিতাহারা। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে ২০১৩ সালের ২৮ নভেম্বর থেকে ১১ ডিসেম্বরের মধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে এরা অপহূত হন।

মানবাধিকার সংগঠন আইন ও শালিস কেন্দ্রের (আসক) হিসাব অনুযায়ী ২০০৭ সাল থেকে চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত সারাদেশে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে ৫৪০ জনকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। এদের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে ৭৮ জনের লাশ পাওয়া যায়। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত ৪৫ জনকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। সব মিলিয়ে ৩৪৭ জনকে এখনও পাওয়া যায়নি। এদের ভাগ্যে কি ঘটেছে কেউ বলতে পারে না।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান বলেন, মানুষ বিভিন্ন কারণে নিখোঁজ হয়। কাউকে ফাঁসানোর জন্য প্রতিপক্ষ আত্মগোপন করে। অনেক সময় বাড়ি থেকে বের হয়ে গেছেন, ৬ মাস পর দেখা গেছে তার বিরুদ্ধে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ পাওয়া গেছে। জঙ্গি বিরোধী অভিযানে কাউকে কাউকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, ভুয়া র্যাব, পুলিশ, ডিবি পরিচয়ে একটি চক্র বিভিন্ন মানুষকে অপহরণ করার ঘটনাও ঘটিয়েছে। র্যাব অনুসন্ধান করে এরকম অনেক ব্যক্তিকে উদ্ধার করেছে। যারা নিখোঁজ রয়েছেন, তাদের অনুসন্ধান করে উদ্ধার করার কাজ চলছে।

জানা গেছে, ২০১৩ সালের ৪ ডিসেম্বর রাতে রাজধানীর তেজগাঁও থানার শাহীনবাগের বাসিন্দা ও ৩৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাজেদুল ইসলাম সুমন (৩৪) ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন ছাত্রসহ আট জনকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয় দিয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা উঠিয়ে নিয়ে যায়। নিঁখোজ হওয়া বাকি সাতজন হলেন, সাজেদুল ইসলাম সুমনের খালাত ভাই বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার বাসিন্দা জাহিদুল করিম তানভীর (৩০), শাহীনবাগের বাসিন্দা কাওসার আহমেদ (২৪), পূর্ব নাখালপাড়ার আবদুল কাদের ভূঁইয়া মাসুম (২৪), পশ্চিম নাখালপাড়ার মাজহারুল ইসলাম রাসেল (২৪), মুগদা এলাকার আসাদুজ্জামান (২৭), উত্তর বাড্ডার আল আমীন (২৬) ও শাহীনবাগের এ এম আদনান চৌধুরী (২৮)।

পরিবারের দাবি, তাদের নামে কোন থানায় কোন মামলা ছিল না। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থানায় জিডি হলেও পুলিশ এখন পর্যন্ত তাদের কোন সন্ধানই দিতে পারেনি। সুমনের বোন আফরোজা ইসলাম জানান, সুমনকে উদ্ধারের ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী, পুলিশের আইজি ও র্যাব মহাপরিচালকের কাছে পৃথক আবেদন করা হয়েছে। সুমনকে যারাই অপহরণ করুক, তাকে উদ্ধারের জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন জানিয়েছেন।

২০০৩ সালের ১১ ডিসেম্বর পল্লবীর বি ব্লকের ৯ নম্বর রোডের ৫ নম্বর বাড়ি থেকে রাত একটার দিকে ‘প্রশাসনের লোক’ পরিচয় দিয়ে কে বা কারা সূত্রাপুর থানা ছাত্রদলের সভাপতি সেলিম রেজা পিন্টুকে ধরে নিয়ে যায়। পিন্টুর বোন রেহানা বানু মুন্নী বলেন, পুলিশ, র্যাব ও ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সাথে যোগাযোগ করা হলে কেউই তার ভাইয়ের সন্ধান দিতে পারেনি। আমরা অপেক্ষা করছি, কবে আমাদের ভাই ফিরবে।

বংশাল এলাকার বিএনপি নেতা সোহেলের ছেলে জেএসসি পরীক্ষার্থী রাজু বলে, ‘২০১৩ সালের ২ ডিসেম্বর তার জন্মদিনে বাবা বাসা থেকে বের হয়েছিল ফুল আনার জন্য। কিন্তু ঘন্টার ঘন্টার পর গেলেও বাবা আর ফিরে আসেনি। একবারের জন্য হলেও আপনি আমার বাবাকে ফিরিয়ে দিন।’

এছাড়া একই সময়ে বিমানবন্দর থানা ছাত্রদল শাখার যুগ্ম সম্পাদক নিজাম উদ্দিন, তেজগাঁও কলেজ ছাত্রদল শাখার যুগ্ন সম্পাদক তরিকুল ইসলাম ঝন্টু, বাংলাবাজার এলাকার ছাত্রদল নেতা খালিদ হাসান সোহেল ও সম্রাট মোল্লা, বাসাবোর মাহাবুব হাসান সুজন ও কাজি ফরহাদ, বংশাল এলাকার পারভেজ হোসেন ও জহিরুল ইসলামকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়।

http://www.ittefaq.com.bd/national/2017/12/01/137957.html