১ ডিসেম্বর ২০১৭, শুক্রবার, ৯:৩৪

বাড়ছে চালের দাম

চালের দাম আবার বাড়তে শুরু করেছে। শুল্ক্ক কমানোসহ সরকারের কিছু পদক্ষেপের কারণে দাম কিছুটা কমলেও গত তিন দিন ধরে পাইকারি ও খুচরা বাজারে চালের দাম বাড়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

গত বোরো মৌসুমে চালের উৎপাদন ঘাটতির রেশ এখনও কাটেনি। উৎপাদন ঘাটতির কারণে এ বছরের মাঝামাঝি চালের দাম বাড়তে শুরু করে। এর পরে চাল আমদানি বৃদ্ধিতে চলতি মাসের শুরুতে দাম কিছুটা কমেছিল।

ভারতে দাম বৃদ্ধি ও ডলারের মূল্যবৃদ্ধিসহ বিভিন্ন কারণে আমদানি করা চালের দাম তিন দিনের ব্যবধানে স্থলবন্দরে কেজিতে এক টাকা বেড়েছে। স্থলবন্দরগুলোতে প্রতি কেজি মোটা স্বর্ণা ও রত্না চাল ৩৭ থেকে ৩৯ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এর আগে ছিল ৩৬ থেকে ৩৮ টাকা।

আমদানি চালের পাশাপাশি দেশের মিল মালিকরা দাম বাড়িয়েছেন। গতকাল মিলগেটে প্রতি কেজি মিনিকেট মানভেদে ৫৪ থেকে ৫৭ টাকায় বিক্রি হয়, যা আগে ছিল ৫৩ থেকে ৫৫ টাকা। এ ছাড়া বিআর-২৮ চাল মিলগেটে ৪৩ থেকে ৪৪ টাকা ছিল। এখন তা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৪৪ থেকে ৪৫ টাকা কেজিতে।

হিলি স্থলবন্দরের চাল আমদানিকারক ললিত কেশেরা সমকালকে বলেন, সম্প্রতি ডলারের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। এর প্রভাব চালের বাজারে পড়েছে। তা ছাড়া দেশের বাজারে ধানের দাম বেড়েছে। ধানের দাম বৃদ্ধি পেলে বন্দরে চালের চাহিদা বেড়ে যায়। আমদানি বাড়লে ভারতও দাম বাড়িয়ে দেয়। এ কারণে চালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে মৌসুমের নতুন ধানের দাম স্থিতিশীল থাকলে চালের দাম বাড়বে না বলে মনে করেন তিনি।

রাজধানীর মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট ও বাবুবাজার-বাদামতলীর আড়তে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ভালো মানের মিনিকেট চালের দাম উঠেছে কেজিপ্রতি ৫৬ থেকে ৫৮ টাকায়, যা আগে ছিল ৫৪ থেকে ৫৬ টাকা। প্রতি ৫০ কেজির বস্তায় দাম বেড়েছে ১০০ টাকা। প্রতি কেজি স্বর্ণা চালের দাম ছিল ৩৮ থেকে ৩৯ টাকা। এখন তা বেড়ে হয়েছে ৩৯ থেকে ৪১ টাকা। একইভাবে বেড়েছে মাঝারি মানের বিআর-২৮ চালের দামও।

বাবুবাজারের তাসলিমা রাইস এজেন্সির স্বত্বাধিকারী আবদুর রহিম বলেন, ডলারের দাম বৃদ্ধির কারণে দেশের বিভিন্ন মোকামে আমদানি করা চালের দাম বেড়েছে। একই সময়ে মিল মালিকরা চালের দাম বাড়িয়েছেন। এর প্রভাবে পাইকারি আড়তে একই হারে বেড়েছে।

পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানান, অনেক মিল মালিক ভারত থেকে মিনিকেট চাল আমদানি করে প্যাকেটজাত করে বিক্রি করছেন। আমদানিতে চালের দাম বেশি এবং দেশে ধানের দাম বৃদ্ধির কথা বলে চালের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন।

খুচরা বাজারে নতুন দামের প্রভাব পড়েছে। প্রতি কেজিতে দুই থেকে তিন টাকা বেড়ে খুচরায় এখন মিনিকেট ৬০ থেকে ৬৩ টাকা ও বিআর-২৮সহ মাঝারি মানের চাল ৪৮ থেকে ৫৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মোটা চালের দামও কেজিতে দুই টাকা বেড়ে ৪২ থেকে ৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী জসীম উদ্দিন সমকালকে বলেন, বোরো মৌসুমে উৎপাদিত চাল থেকে তৈরি হয় মোটা স্বর্ণা ও মিনিকেট চাল। এখন আমন মৌসুম শুরু হলেও মিনিকেট চাল উৎপাদনের ধান মিলগুলো পাচ্ছে না। এ কারণে ভারত থেকে আমদানি করে বর্তমানে চাহিদা মিটছে। এ সুযোগে মোকামে দাম বাড়ানো হচ্ছে।

গত বোরো মৌসুমে হাওরে ফসলহানি ও উৎপাদন কম হওয়ায় এ বছর চালের দাম অনেক বেড়ে ছিল। প্রতি কেজি মোটা চাল ৫০ টাকা উঠেছিল। গত অক্টোবর থেকে নভেম্বরের প্রথম তিন সপ্তাহ ৪০ থেকে ৪৩ টাকায় বিক্রি হয়। শেষ সপ্তাহে এসে এখন আবার বাড়ল।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যে দেখা গেছে, চালের আমদানি মূল্যও বেড়েছে। সপ্তাহের ব্যবধানে ভারতে প্রতি টন সিদ্ধ চালের রফতানি মূল্য পাঁচ ডলার বেড়ে ৩৯৫ ডলার হয়েছে।

এ ছাড়া রাজধানীর বাজারে দেশি ও আমদানি করা পেঁয়াজের দাম সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে আরও পাঁচ টাকা বেড়েছে। গতকাল মানভেদে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৮৫ থেকে ৯৫ টাকা ও আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ ৭৫ থেকে ৮৫ টাকায় বিক্রি হয়। তা ছাড়া পুরাতন আলুর দামও কেজিতে দুই টাকা কমে ১৪ থেকে ১৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। নতুন আলুর দাম কেজিতে ২০ টাকা কমে ৫০ টাকায় বিক্রি হয়। তবে অন্যান্য সবজির দাম কিছুটা কমেছে। সবজির দামে পাইকারি বাজারের সঙ্গে খুচরায় দামের ব্যবধান বাড়ছে। পাইকারিতে কমলেও খুচরায় একই হারে কমছে না। পাইকারিতে ফুল ও পাতাকপি ১২ থেকে ১৫ টাকায় বিক্রি হয়। খুচরা বাজারে তা এখনও ২৫ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মুলার কেজি পাইকারিতে ১৫ টাকা থাকলেও খুচরায় ৩০ টাকা। অন্যান্য সবজির দামের ব্যবধান প্রায় একই হারে। এখন চড়া দামে প্রতি কেজি গাজর ৮০ টাকা ও পাকা টমেটো ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যান্য পণ্যের দাম তেমন পরিবর্তন হয়নি।

http://samakal.com/capital/article/17124