১ ডিসেম্বর ২০১৭, শুক্রবার, ৯:২৭

ইউএনও’র বাসভবনসহ ৫ স্থানে পেট্রুলবোমা

ময়মনসিংহের গৌরীপুরে উপজেলা যুবলীগের কোন্দলের জের ধরে ইউএনওর বাসভবনসহ ৫ স্থানে একযোগে পেট্রুলবোমা হামলার ঘটনা ঘটেছে। তবে এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। বৃহস্পতিবার যুবলীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল। এদিন ভোরে সম্মেলন মঞ্চেও আগুন দেয়া হয়। ঘটনার পর শহরে ১৪৪ ধারা জারি করে উপজেলা প্রশাসন। এরপর যুবলীগের সম্মেলন স্থগিত করা হয়।
এদিকে বোমা হামলা, মঞ্চে আগুন ও ১৪৪ ধারা জারির মাধ্যমে সম্মেলন পণ্ড করার পেছনে স্থানীয় সংসদ সদস্য নাজিম উদ্দিন আহমেদকে দায়ী করেছে যুবলীগের নেতাকর্র্মীরা। বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা শহরে জুতা-ঝাড়– মিছিল বের করে এবং এমপির কুশপুত্তলিকা দাহ করে। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে এমপি নাজিম উদ্দিন বলেছেন, এটা যুবলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানান, আওয়ামী যুবলীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন উপলক্ষে ইউএনওর বাসভবনের কাছে বঙ্গবন্ধু চত্বরে মঞ্চ তৈরি করা হয়েছিল। বৃহস্পতিবার ভোরে দুর্বৃত্তরা মঞ্চের এক পাশের কাপড়ে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। এরপর সকাল ৯টার দিকে উপজেলার সিনেমা হল মোড়, স্টেশন রোড মোড়, কালীপুর মধ্যম তরফ, বালুয়াপাড়া বাজারে একযোগে পেট্রুলবোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। সকাল সোয়া ১০টার দিকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মর্জিনা আক্তারের বাসভবনে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী ইউএনওর বাসার কাজের মহিলা জোহরা খাতুন বলেন, সকালে বাসার পেছনের দিক থেকে হঠাৎ বিকট শব্দ শুনতে পাই। এরপর গিয়ে দেখি আগুন ধরে গেছে। ইউএনও মর্জিনা আক্তার জানান, বোমা হামলার আলামত পাওয়া গেছে এবং বাসার জানালার কাচ ভেঙে গেছে।
গৌরীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ দেলোয়ার আহম্মদ জানান, পেট্রুলবোমা বিস্ফোরণের আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। কে বা কারা এ হামলা চালিয়েছে তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। শহরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।

বালুয়াপাড়ার এক প্রত্যক্ষদর্শী জানায়, মোটরসাইকেলে দু’জন মুখোশধারী লোক রাস্তায় বিস্ফোরণ ঘটিয়ে দ্রুত কেটে পড়ে। সিনেমা হল মোড়ে দু-তিন লোক দ্রুতবেগে এসে বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পালিয়ে যায়। এ ঘটনার পরপরই শহরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দুপুর ১২টায় পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত সম্মেলন স্থান বঙ্গবন্ধু চত্বর, হারুণ পার্ক ও আশপাশের এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মর্জিনা আক্তার। ১৪৪ ধারা জারির পরপর ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী পৌর কাউন্সিলর মোফাজ্জল হোসেন খান অভিযোগ করেন, সম্মেলন স্থগিত করে জামায়াত-শিবিরের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতেই ইউএনও এ আদেশ দিয়েছেন। এ আদেশের প্রতিবাদে তাৎক্ষণিক উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ের সামনে যুবলীগের বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল করেন।

এ ব্যাপারে উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মো. সানাউল হক বলেন, সংসদ সদস্য নাজিম উদ্দিন আহমেদ তার ছেলে তানজীর আহমেদ রাজীবকে সভাপতি করার চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে ১৪৪ ধারা জারি করিয়ে সম্মেলন পণ্ড করেছেন।
তবে নাজিম উদ্দিন আহমেদ এমপি বলেন, এ অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। যুবলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণেই ইউএনওর বাসভবনসহ বিভিন্ন স্থানে নাশকতামূলক কাজ করে আতঙ্ক ছড়ানো হয়েছে, যা অত্যন্ত নিন্দনীয়।
এদিকে ঘটনার প্রতিবাদে উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মো. সানাউল হক ও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী মোফাজ্জল হোসেন খানের নেতৃত্বে বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা শহরে ‘জুতা-ঝাড়–’ নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। এ সময় এমপির বিরুদ্ধে নানা স্লোগান দেয়া হয়। পরে কালিখলায় এমপির কুশপুত্তলিকা দাহ করেন বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা।
উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বাসাসহ ৫টি ঘটনাস্থল থেকে ময়মনসিংহ গোয়েন্দা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ মো. আশিকুর রহমান ও এসআই পরিমল চন্দ্র সরকার আলামত সংগ্রহ করেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মো. খলিলুর রহমান ও পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। জেলা প্রশাসক মো. খলিলুর রহমান জানান, ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। পুলিশ সুপার মো. খলিলুর রহমান জানান, জড়িতদের শনাক্ত ও গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে।

 

https://www.jugantor.com/last-page/2017/12/01/176137