৩০ নভেম্বর ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ৯:৪১

এমন উপলব্ধির জন্য ধন্যবাদ

ছাত্র জীবনে অনেক বিষয়েই আমরা বক্তৃতা শুনেছি। একটি বিষয় ছিল ‘শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড’। সেই মেরুদন্ড এখন নানা আঘাতে ক্ষতবিক্ষত। এমন মেরুদ-ের ওপর ভর করে জাতি কতদূর এগুতে পারবে? যে সব আঘাতে মেরুদ- ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে তার একটি হলো প্রশ্ন ফাঁস। ২৩ নভেম্বর পত্রিকান্তরে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল, ‘প্রশ্ন ফাঁসের বাজার’। প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়, কালো বাজারের নতুন সংযোজন প্রশ্নপত্র ফাঁসের বাজার। পরীক্ষার মওসুমে কোটি টাকা লেনদেন হয় এই বাজারে। কর্মকর্তা-কর্মচারি, ছাত্র-ছাত্রনেতা, শিক্ষক, কোচিং সেন্টার, প্রেসের কর্মচারি এরাই বাজারের নিয়ন্ত্রক। আর ক্রেতা ভর্তি ইচ্ছুক শিক্ষার্থী, চাকরিপ্রার্থী ও তাদের অভিভাবক। প্রশ্নপত্র ফাঁসের এই বাজারে প্রযুক্তি সবচেয়ে বড় মাধ্যম।

শিক্ষাতো মানুষকে আলো দেয়, চলার পথ দেখায়। কিন্তু অবাক ব্যাপার হলো, যারা শিক্ষা দেন, যারা শিক্ষা গ্রহণ করেন তারাই এখন চলছেন অন্ধকারের পথে। আমাদের শিক্ষা কি এখন প্রাণহীন হয়ে পড়েছে? এমন কাগুজে শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড হবে কেমন করে? সম্প্রতি প্রশ্নপত্র ফাঁস ও পরীক্ষায় জালিয়াতির সঙ্গে যুক্ত সন্দেহে ছাত্রলীগের ২ নেতাসহ ১৪ জনকে গ্রেফতার করার পর পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) কর্মকর্তারা জেনেছেন শিক্ষা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা অপরাধের সাথে জড়িত। ওই ১৪ জনের মধ্যে ১০ জনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তাদের ৫ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও সিআইডি সূত্রগুলো জানিয়েছে, ভর্তি বা চাকরির বড় পরীক্ষার আগের রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে ও ফেসবুকে প্রশ্ন খোঁজাখুঁজি করেন অনেকে। প্রশ্নপত্র পাওয়া যেতে পারে এই আশায় অনেকে পরীক্ষার আগের দিনই ক্যাম্পাসে চলে আসেন। কোটি টাকার প্রশ্নপত্র ফাঁস আর জালিয়াতির ইন্ডাস্ট্রি গড়েছে কয়েকটি চক্র। একটি ফাটকা বাজারে যত রকমের উপকরণ থাকে, তার সবই রয়েছে এই বাজারে। ক্রেতা-বিক্রেতা, দালাল, সেবাদানকারী সবাই এখানে কাজ করেন কঠোর গোপনীয়তা রক্ষা করে।

অবাক লাগে, দেশের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস এখন প্রশ্নপত্র ফাঁসের কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। এত জানাজানির পরও অপরাধমূলক এই কাজটি বছরের পর বছর ধরে চলছে কেমন করে? কর্মকর্তারা বলছেন, প্রশ্নপত্র ফাঁস ও জালিয়াতি বাজারের সদস্যরা জানেন ধরা পড়লেও কারো কিছু হবে না। অতীত বলছে, প্রশ্নপত্র ফাঁস করে ধরা পড়লেও কারও সাজা হয় না। প্রথম আলোর হিসেবে, ২০১০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন পরীক্ষায় জালিয়াতি ও প্রশ্নপত্র ফাঁস করতে গিয়ে ধরা পড়া ৭০টি ঘটনায় ‘পাবলিক পরীক্ষা (অপরাধ) আইনে’ মামলা হলেও কারোই সাজা হয়নি। তবে এবার কেবল ‘পাবলিক পরীক্ষা আইন’ নয়, মানি লন্ডারিং আইনে মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে সিআইডি। এখন দেখার বিষয় হলো অপরাধীরা শাস্তি পায় কিনা। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, ক্ষমতার আশেপাশে যারা থাকে তারা ওইসব অন্যায় কাজে বেশ বেপরোয়া। তাই সরকারও শিক্ষামন্ত্রণালয়ের এ ক্ষেত্রে করণীয় আছে।

সব সময় না হলেও কোন কোন সময় রাজনীতিবিদরা সঠিক কথা বলে ফেলেন। যেমন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, যারা রাজনীতি করি তাদের মধ্যে কয়জন বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবেন যে আমি সৎ, আমি শতভাগ সৎ মানুষ? এখানেই সমস্যা। আমরা রাজনীতিকরা যদি দুর্নীতিমুক্ত থাকি, তবে দেশের দুর্নীতি অটোমেটিক্যালি অর্ধেক কমে যাবে। তিনি আরো বলেন, বারবার যে বেশি কথা বলে সে বেশি বাজে কথা বলে। ২৫ নবেম্বর রাজধানীর বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের ওপর আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

২৬ নবেম্বর তারিখে বাংলাদেশ প্রতিদিনে মুদ্রিত প্রতিবেদনে ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের আরো কিছু বিষয় মুদ্রিত হয়। ওবায়দুল কাদের বলেন, সততা ও সাহসিকতায় বিরল দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন বঙ্গবন্ধু। আমরা যারা রাজনীতি করি এখান থেকে অনেক শিক্ষা নিতে পারি। তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুর কথা বলে, বঙ্গবন্ধুর নাম নিয়ে অপকর্ম করে, এ ধরনের বঙ্গবন্ধুপ্রেমী আওয়ামী লীগের কোন প্রয়োজন নেই। বঙ্গবন্ধুর নামে সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে ভূমি-জমি দখল করবো, চাঁদাবাজি করবো, এ ধরনের সংগঠন, প্রতিষ্ঠান যারা করে তাদের আওয়ামী লীগ ঘৃণা করে। এদের বহিষ্কার করা হবে এবং এদের সঙ্গে কোন সম্পর্ক রাখা যাবে না। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যটি বর্তমান সময়ে খুবই প্রাসঙ্গিক বলে আমরা মনে করি। তিনি একদিকে রাজনীতিবিদদের সততা, সংকট ও দুর্নীতি নিয়ে সমালোচনা করেছেন, অন্যদিকে বঙ্গবন্ধুর নাম ভাঙ্গিয়ে যারা অপকর্ম করছেন তাদের বহিষ্কারের হুমকি দিয়েছেন। আমরা জানি, দুর্বৃত্তায়নের রাজনীতি বর্তমান সময়ে জাতির জন্য এক বড় সংকট হয়ে দেখা দিয়েছে। দলে যদি আদর্শের ও ত্যাগের রাজনীতি মুখ্য না হয় তাহলে আগাছায় ভরে যাবে রাজনীতির ময়দান। ক্ষমতায় থাকার কারণে সরকারি দলে এই সংকট বড় হয়ে দেখা দিলেও বিরোধী দলের এতে খুশি হওয়ার কারণ নেই। কারণ তাদের নেতাকর্মীরা যদি আদর্শনিষ্ঠ ও সৎ না হন তাহলে তাদেরও পদে পদে মাশুল দিতে হবে। ওবায়দুল কাদের বলেছেন, রাজনীতিকরা দুর্নীতিমুক্ত থাকলে দেশের দুর্নীতি অটোমেটিক্যালি অর্ধেক কমে যাবে। এমন উপলব্ধির জন্য ধন্যবাদ। তবে এখানে বলে রাখা ভাল যে, যারা ক্ষমতায় থাকেন দুর্নীতির সুযোগটা কিন্তু তাদেরই বেশি থাকে।

http://www.dailysangram.com/post/309552