২৯ নভেম্বর ২০১৭, বুধবার, ১০:৪২

রোহিঙ্গা ঢল কমলেও থামছে না

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে আসা কয়েকজন নারী ও শিশুকে গাড়িতে করে টেকনাফের রোহিঙ্গা শিবিরে নেওয়া হচ্ছে। গতকাল উপজেলার সাবরাং হারিয়াখালী ত্রাণকেন্দ্রে l গিয়াস উদ্দিনমিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের পরও রোহিঙ্গা আসা বন্ধ হচ্ছে না। রাখাইনের আরও ২৩৩ জন রোহিঙ্গা গতকাল মঙ্গলবার কক্সবাজারের টেকনাফে এসেছে। তারা বলছে, দেশটির নেত্রী অং সান সু চির কথায় তাদের ভরসা নেই। আর ওই দেশের সেনাবাহিনী না চাইলে কোনো রোহিঙ্গা ফিরতে পারবে না।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, টেকনাফের বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আসা অব্যাহত রয়েছে। গত সোমবার রাত থেকে গতকাল সকাল পর্যন্ত ৫৪টি পরিবারের ২৩৩ জন রোহিঙ্গা টেকনাফে পৌঁছায়। পরে তাদের সেনাবাহিনীর ত্রাণকেন্দ্রের মাধ্যমে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে পাঠানো হয়।
টেকনাফের সাবরাং হারিয়াখালী ত্রাণকেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করা জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি ও টেকনাফ উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা মো. আলমগীর কবির বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, নতুন আসা ২৩৩ জন রোহিঙ্গাকে প্রথমে সাবরাং ইউনিয়নের হারিয়াখালীতে সেনাবাহিনীর ত্রাণকেন্দ্রে নেওয়া হয়। সেখানে মানবিক সহায়তা ও ত্রাণ দিয়ে তাদের টেকনাফের নয়াপাড়া রোহিঙ্গা শিবিরে পাঠানো হয়েছে।
গতকাল দুপুরে সাবরাং হারিয়াখালী সেনাবাহিনীর ত্রাণকেন্দ্রে কথা হয় রাখাইন রাজ্যের বুচি দং শহরের লামারপাড়ার বাসিন্দা নুর মোহাম্মদের (৫৫) সঙ্গে। তিনি সোমবার রাতে ছোট ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে পরিবারের নয়জনের সঙ্গে বাংলাদেশে পৌঁছান। নুর মোহাম্মদ বলেন, বাংলাদেশে পালিয়ে আসার জন্য রাখাইনের মংডু শহরের দংখালী এলাকায় আরও আট হাজারের বেশি রোহিঙ্গা ত্রিপল টানিয়ে অপেক্ষা করছে।
রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে সদ্য স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকের ব্যাপারে নতুন আসা রোহিঙ্গাদের প্রতিক্রিয়া হলো, মিয়ানমার সরকারের ওপর তাদের ন্যূনতম আস্থা নেই। অং সান সু চির কথার সঙ্গে কাজের মিল নেই। আবার মিয়ানমার এখনো সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হচ্ছে। সেনাবাহিনী না চাইলে রোহিঙ্গারা ফিরতে পারবে না। তা ছাড়া মিয়ানমার সরকার আগেও অনেকবার চুক্তি করে তা পালনে গড়িমসি করেছে। এরপরও সুযোগ সৃষ্টি হলে এই রোহিঙ্গারা নিজেদের ভিটায় ফিরতে চায়।

রোহিঙ্গা নারী হামিদ বেগম বলেন, রাখাইনে তাঁদের ঘরবাড়ি, জায়গা-জমি সব আছে। ফিরতে পারলে খুশি হবেন। তিনি বলেন, ‘দেশের জন্য মন কাঁদছে। আজ না হোক কাল, আমরা নিজ ভূমিতে ফিরে যাবই।’
মোট ৮ লাখ ৩৬ হাজার
গত ছয় মাসে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশের কক্সবাজার উপকূলে মোট ৬ লাখ ২৪ হাজার ২৫১ জন রোহিঙ্গা পালিয়ে এসেছে। মিয়ানমারের রাখাইন থেকে সর্বশেষ গত এক সপ্তাহে পালিয়ে এসেছে ১ হাজার ৮০০ জন। এর ফলে বাংলাদেশে অবস্থানকারী মোট রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮ লাখ ৩৬ হাজার। গতকাল মঙ্গলবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা জানানো হয়।
জাতিসংঘের অভিবাসনবিষয়ক সংস্থা আইওএমের কক্সবাজারে দায়িত্ব পালনকারী জরুরি সমন্বয়কারী অ্যান্ড্রু লিড বলেন, মিয়ানমারে রোহিঙ্গা সংকট শুরু হওয়ার পর যে হারে রোহিঙ্গা আসত এখন তার চেয়ে কিছুটা কমেছে। তবে এখনো প্রতিদিন কয়েক শ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। তারা তাদের দেশ মিয়ানমারে হত্যা, ধর্ষণ ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার।

আইওএম সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের বেশির ভাগ সম্পূর্ণ নিঃস্ব অবস্থায় আসছে। তাদের বসবাসের জায়গা, খাবার ও পানির মতো মানবিক সহায়তা দিতে হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবিরগুলোর পানির মান নিয়ে একটি জরিপ করেছে। তাতে দেখা গেছে, সেখানকার ৬০ শতাংশ পানিতে ই-কোলি নামের জীবাণু পাওয়া গেছে, যা মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকারক।

 

http://www.prothom-alo.com/bangladesh/article/1375901