২৮ নভেম্বর ২০১৭, মঙ্গলবার, ১০:২৫

প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের মূল হোতা ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রভাবশালী নেতা

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের অপচেষ্টায় লিপ্ত চক্রের মূল হোতা ছাত্র লীগের কেন্দী কমিটির এক নেতা। ঐ নেতার প্রচ্ছন্ন নির্দেশ ও সহযোগীতায়ই প্রশ্নপত্র ফাঁস বাণিজ্য করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষার্থী বরিশালে এসেছিল। ববি’র বিজ্ঞান বিভাগে সম্মান প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের প্রস্তুতিকালে আটক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন ছাত্র আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এসব তথ্য জানিয়েছে। এছাড়াও ঐ ঘটনায় আটক ববি’র তিন ছাত্রকে আরো জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। বরিশালের চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের বিচারক অমিত কুমার দে জবানবন্দি গ্রহন সহ রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

গত শনিবার বরিশাল বিশ্ববিদ্যালরে ভর্তি পরীক্ষার দিন নগরীর পুলিশ লাইনের অদূরে আর্শেদ আলী ক্রন্টাক্টর গলির একটি ভাড়া বাসার মেস থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন ছাত্র সহ ৬ জনকে আটক করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।
জবানবন্দির উদ্ধৃতি দিয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বরিশাল মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক মাহবুব উল আলম সাংবাদিকদের জানান, ঢাবি’র তিন ছাত্র মারুফ, শাহিন ও আবিদ প্রশ্নপত্র ফাঁসের সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। তারা ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির এক নেতার নির্দেশে বরিশালে আসার কথাও জানিয়েছে। তবে ওই ছাত্রলীগ নেতার নাম গণমাধ্যমে প্রকাশ করতে অপারগতা প্রকাশ করেন তদন্ত কর্মকর্তা। এ ব্যপারে তিনি বলেন, ‘অভিযুক্তরা কারো নাম বললেই তো হবে না, বিষয়টি তদন্ত করে নিশ্চিত হতে হবে। তাদের দেয়া স্বীকারোক্তি নিয়ে অনুসন্ধান করা হচ্ছে। তদন্তে যা পাওয়া যাবে, তাই প্রতিবেদনে আসবে বলেও জানান তিনি।
এদিকে ঢাবি’র তিন ছাত্র জবানবন্দি দিলেও একইসাথে আটক বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন ছাত্র কোন কথা বলেনি। তাই আরো জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ড আবেদনের প্রেক্ষিতে বিচারক অমিত কুমার দে তিন দিন পুলিশ হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছে। জবানবন্দি দেয়া ঢাবি’র তিন ছাত্রকে বরিশাল কেন্দ্রীয়ল কারাগারে পাঠানো হয়েছে। রিমান্ডের জন্য ববি’র তিন ছাত্রকে ডিবি পুলিশ হেফাজতে নিয়েছে।

অপরদিকে, শনিবার রাতে আটক ৬ ছাত্রসহ অজ্ঞাত আরো অনেককে উল্লেখ করে কোতয়ালী মডেল থানায় মামলার করেছে ডিবি’র এসআই আশীষ পাল। তাদের বিরুদ্ধে পরস্পর যোগ সাজসে অবৈধভাবে লাভবান হওয়ার জন্য এটিএম কার্ড ও বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস’র মাধ্যমে প্রশ্নের উত্তর পরীক্ষার্থীদের সরবরাহের প্রস্তুতি ও সংগ্রহ করার অভিযোগ আনা হয়েছে।

শনিবার ভর্তি পরীক্ষার দিন সকাল ৭টার দিকে নগরীর আর্শেদ আলী কন্ট্রাক্টর গলির নাহার ম্যানশনের ভাড়াটিয়া ববি’র সমাজবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র মুয়ীদুর রহমান বাকী’র ঘরে অভিযান চালায় ডিবি পুলিশ। সেখান থেকে ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের সাথে জড়িত সন্দেহে ৬ জনকে আটক করা হয়। এছাড়াও উদ্ধার করা হয় পাঁচটি ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস, পাঁচটি উন্নতমানের ইলেকট্রনিক্স ম্যাগনেটিক বøুটুথ ইয়ার ফোন ও ১১টি মোবাইল সেট। আটককৃতরা হলো- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভ‚-তত্ত¡ বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র এবং যশোরের বাঘারপাড়া থানাধীন নারিকেল বাড়ীয়া ইউপির বলরামপুরের বাসিন্দা মুরাদ মোল্লার ছেলে মো. মারুফ হোসেন মারুফ (২২), মৃত্তিকা পানি ও পরিবেশ বিভাগের ৪র্থ বর্ষের ছাত্র এবং পটুয়াখালীর দুমকী উপজেলার লেবুখালী ইউনিয়নের কার্তিকপাশা গ্রামের বাসিন্দা মৃত আব্দুল কাদের এর ছেলে মো. আলমগীর হোসেন শাহিন (২৪), গণিত বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ও পটুয়াখালীর গলাচিপা পৌর এলাকার কলেজপাড়া এলাকার বাসিন্দা মো. জাহিদুল ইসলামের ছেলে মো. মাহমুদুল হাসান আবিদ (২৩)। এরা তিনজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অমর ২১-এ হলের শহীদ বরকত ভবনের ৪০১, ৩০১ ও ৩০২ নম্বর কক্ষের আবাসিক ছাত্র। আটককৃত মো. আলমগীর হোসেন শাহিন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য।

আটককৃত অপর তিন সদস্য হচ্ছে, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ৩য় বর্ষের ছাত্র ও পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার চালিতাবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা গাজী হাফিজুর রহমানের ছেলে মুয়ীদুর রহমান বাকী (২২), পটুয়াখালীর গলাচিপা ডিগ্রী কলেজের মানবিক শাখার ৩য় বর্ষের ছাত্র ও স্থানীয় পানপট্টি গ্রামের মো. জাফর আহমেদ এর ছেলে মো. সাব্বির আহমেদ প্রিতম (২৩) এবং রাজধানীর মোহাম্মদপুর ডিগ্রী কলেজের বিবিএ ৩য় বর্ষের ছাত্র ও পটুয়াখালীর লেবুখালী গ্রামের বাসিন্দা আবুয়াল হোসেন এর ছেলে মো. রাকিব আকন।

https://www.dailyinqilab.com/article/106300