২০ অক্টোবর ২০১৭, শুক্রবার, ৩:৪৫

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে বঙ্গভবনের চিঠি

রাষ্ট্রীয় উপহার সামগ্রী নষ্ট হচ্ছে বৃষ্টিতে

বৃষ্টির পানিতে নষ্ট হচ্ছে বঙ্গভবনে জমা হওয়া রাষ্ট্রীয় উপহার সামগ্রী। রক্ষণাবেক্ষণের জন্য জরুরি ভিত্তিতে এসব উপহার সামগ্রী বঙ্গভবন থেকে অন্যত্র স্থানান্তরের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে চিঠি দিয়েছে বঙ্গভবন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য।

বঙ্গভবন থেকে সম্প্রতি দেয়া ওই চিঠিতে বলা হয়- মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের জমা হওয়া রাষ্ট্রীয় উপহার সামগ্রী বঙ্গভবনের মানুক হাউস ও কিচেন ব্লকের দ্বিতীয়তলায় একটি কক্ষে সংরক্ষণ করা হয়ে থাকে। বঙ্গভবনের ‘মানুক হাউস’ ভবনটি অত্যন্ত পুরনো। ভবনের টেম্পার বহু আগেই নষ্ট হয়ে গেছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই ভবনটির ভেতরে পানি প্রবেশ করে মেঝে, আসবাবপত্র ও উপহার সামগ্রী রাখার গ্যালারি নষ্ট হয়। অপর দিকে কিচেন ব্লকের দ্বিতীয়তলায় সংরক্ষিত উপহার সামগ্রীগুলোর স্থান সঙ্কুলান না হওয়ায় একটি কক্ষে গাদাগাদি করে রাখা হয়েছে। সঠিক তত্ত্বাবধান করা যাচ্ছে না। ধুলাবালি ও আর্দ্রতার কারণে উপহার সামগ্রী নষ্ট হচ্ছে। এ অবস্থায় বঙ্গভবনের তোষাখানায় জমা রাখা রাষ্ট্রীয় উপহার সামগ্রী সুন্দর ও সুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষণের জন্য জরুরি ভিত্তিতে অন্যত্র সরিয়ে নিতে অনুরোধ জানানো হয় চিঠিতে।

বিষয়টি নিয়ে নাম প্রকাশ করে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি বঙ্গভবন ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বঙ্গভবনের এক কর্মকর্তা যুগান্তরকে জানান, শত বছরের পুরাতন হওয়ায় বঙ্গভবনের ‘মানুক হাউস’ অনেকটা জরাজীর্ণ ও স্যাঁতসেঁতে। সামান্য বৃষ্টি হলেই ছাদ চুইয়ে পানি পড়ে মেঝে ভিজে যায়। ফলে রাষ্ট্রীয় উপহার সামগ্রীও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। যেহেতু উপহার সামগ্রী মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের। এ উপহার সামগ্রী যে দেশ থেকেই যার মাধ্যমে (রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ অন্যান্য মন্ত্রী বা রাষ্ট্রীয় প্রতিনিধি) আসুক, তা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মাধ্যমে বঙ্গভবনে পাঠানো হয়। তাই বিষয়টি তাদের জানানো হয়েছে। সেনাবাহিনীর জাদুঘরের কাছে নতুন তোষাখানা নির্মাণের কাজ চলছে। সেখানে উপহার সামগ্রী স্থানান্তর করা হতে পারে বলে আভাস দেন ওই কর্মকর্তা। বঙ্গভবন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপ্রধানের (রাষ্ট্রপতি) সরকারি বাসভবন, যা যুক্তরাষ্ট্রের হোয়াইট হাউস ও ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনের সমমর্যাদা বহন করে। রাজধানীর মতিঝিলের দিলখুশায় (বর্তমান দিলকুশা) অবস্থিত প্রাসাদটি মূলত ব্রিটিশ ভাইসরয় অব ইন্ডিয়ার অস্থায়ী বাসস্থান হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত স্থাপনাটি পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নরের বাসস্থান হিসেবে ব্যবহৃত হয়। স্বাধীনতাযুদ্ধের পরে ১৯৭২ সালের ১২ জানুয়ারি গভর্নর হাউসের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘বঙ্গভবন’। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিরা এটিকে বাসভবন হিসেবে ব্যবহার করেন। জানা গেছে, বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী কোনো দেশে রাষ্ট্রীয় সফরে গেলে সেই দেশের পক্ষ থেকে নানা ধরনের ঐতিহ্যবাহী জিনিস উপহার দেয়া হয়। এসবই রাষ্ট্রীয় উপহার সামগ্রীর অন্তর্ভুক্ত। এ ছাড়া কোনো আন্তর্জাতিক সম্মেলন বা রাষ্ট্রীয় কোনো অনুষ্ঠানে পাওয়া যে কোনো ধরনের দ্রব্য রাষ্ট্রীয় উপহার সামগ্রী হিসেবে বঙ্গভবনে সংরক্ষণ করা হয়। স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত পাওয়া সব উপহার সামগ্রী বঙ্গভবনে সংরক্ষিত রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে নানা আকৃতির ক্রেস্ট, মেডেল, রেপ্লিকা, দুর্লভ দৃশ্য বা কোনো ব্যক্তির ছবি ও ওয়ালমেট, নানা আকৃতির স্বর্ণের বিভিন্ন বস্তুর রেপ্লিকা, শাড়ি, জায়নামাজ, টুপি, পবিত্র গ্রন্থসহ বিভিন্ন দেশের জাতীয় পর্যায়ের স্থাপনার রেপ্লিকা।

ইতিহাস থেকে জানা যায়, বঙ্গভবন এলাকায় মানুক হাউস নামে একটি ইমারত ছিল। জনশ্রুতি আছে ব্রিটিশ রাজত্বের সময় আর্মেনীয় জমিদার মানুকের নামানুসারে এর নামকরণ করা হয়। ঢাকার নবাব খাজা আবদুল গনি মানুকের কাছ থেকে স্থানটি কিনে নেন এবং এখানে একটি বাংলো তৈরি করেন, যার নাম দেয়া হয় দিলখুশা। ব্রিটিশ আমলের অন্যান্য স্থাপত্যের মতো বঙ্গভবনও অনেকটা ভিক্টোরিয়া স্থাপত্যে নির্মিত। ১৯৬১ ও ১৯৬৪ সালে সংস্কারের পর এখানে ইসলামী স্থাপত্য ও বাঙালি স্থাপত্যের সমন্বয় ঘটানো হয়। চার দিকে লম্বা প্রাচীর ঘেরা মূল ভবন ত্রিতল প্রাসাদোপম চত্বরের চার পাশে সবুজ ও বৃক্ষরাজিতে আবৃত। নিচতলার মেঝের চত্বরের ক্ষেত্রফল ছয় হাজার ৭০০ বর্গমিটার। রাষ্ট্রপতির বাসভবন উত্তর-পূর্ব দিকে অবস্থিত। এর দ্বিতীয়তলায় পাঁচটি সুদৃশ্য শয়নকক্ষ রয়েছে। রাষ্ট্রপতির দফতর, সামরিক ও বেসামরিক সচিবালয়, অন্যান্য কর্মকর্তা ও দর্শকদের জন্য ভিন্ন ভিন্ন কক্ষ নিচতলায় অবস্থিত। এছাড়া রয়েছে আসবাবপত্র রাখার কক্ষ, একটি দরবার কক্ষ, একটি ছোট ভোজন কক্ষ ও স্থানীয় দর্শনার্থীদের জন্য একটি ছোট সভাকক্ষ। এ ছাড়া দ্বিতীয়তলায় পাঁচটি অফিস কক্ষ, একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ ও একটি স্টুডিও আছে। তৃতীয়তলায় বৈদেশিক কূটনীতিক ও সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের জন্য রয়েছে চারটি আলাদা কক্ষ। বঙ্গভবনে রয়েছে ৪৭ একর খোলা জায়গা, এখানে রয়েছে নিরাপত্তা অফিস, ডাকঘর, ব্যাংক, ক্যান্টিন, দর্জির দোকান, একটি তিন গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদ। রাষ্ট্রপতির নিরাপত্তা রেজিমেন্টের জন্য একটি ব্যারাক রয়েছে, যা বঙ্গভবনের প্রধান ফটকের কাছাকাছি অবস্থিত। বঙ্গভবনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের থাকার জন্য কোয়ার্টার রয়েছে বঙ্গভবনের আলাদা তিনটি স্থানে। এখানে সামরিক সচিব ও সহকারী সামরিক সচিবের জন্য রয়েছে আরও দুটি বাংলো।

https://www.jugantor.com/last-page/2017/10/20/164797