১৮ আগস্ট ২০১৭, শুক্রবার, ৮:২৪

বাণিজ্য ঘাটতিতে রেকর্ড

দেশের আমদানি খাতে ব্যয় বাড়লেও বাড়ছে না রপ্তানি আয়। ফলে আশঙ্কাজনক হারে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ বেড়ে রেকর্ড পরিমাণ হয়েছে। গত অর্থবছরে (২০১৬-১৭) আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ঘাটতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৪৭ কোটি ২০ লাখ ডলার। যা স্বাধীনতার পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। আমদানি ব্যয় মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে যাওয়ায় এ ঘাটতি তৈরি হয়েছে। গত অর্থবছরে (২০১৬-১৭) যে পরিমাণ বাণিজ্য ঘাটতি তৈরি হয়েছে স্বাধীনতার পর তা কখনো হয়নি। অপরদিকে বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যেও বড় ধরনের ঘাটতি তৈরি হয়েছে। এর আগে ২০১০-১১ অর্থবছরে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বাণিজ্য ঘাটতি ছিল (৯৯৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার)। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আমদানি ব্যয় যে হারে বেড়েছে, সেই তুলনায় রপ্তানি আয় না বাড়ায় বড় ধরনের বাণিজ্য ঘাটতি দেখা দিয়েছে। একই সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে রেমিট্যান্স হ্রাস ও সেবা খাতের ঘাটতি বাড়ায় ঋণাত্মক হয়ে পড়েছে চলতি হিসাবের ভারসাম্য।

বাংলাদেশ ব্যাংক বৈদেশিক লেনদেন ভারসাম্যের হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, গত ৩০শে জুন শেষ হওয়া ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বিভিন্ন পণ্য আমদানিতে বাংলাদেশ মোট ৪ হাজার ৩৪৯ কোটি ১০ লাখ ডলার ব্যয় করেছে। এই সময়ে বিভিন্ন দেশে পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশের আয় হয়েছে ৩ হাজার ৪০১ কোটি ৯০ লাখ ডলার। এই হিসাবে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে ৯৪৭ কোটি ২০ লাখ ডলার, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ৪৭ শতাংশ বেশি। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৬৪৬ কোটি ডলার। এর আগে ২০১০-১১ অর্থবছরে পণ্য বাণিজ্যে বাংলাদেশের ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৯৯৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার; সেটাই দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বাণিজ্য ঘাটতি। গত অর্থবছরে আমদানি ব্যয় বেড়েছে ৯ শতাংশ। রপ্তানি আয় বেড়েছে ১.৭৩ শতাংশ।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যে দেখা গেছে, গত অর্থবছরে রপ্তানি আয়েও কাঙ্ক্ষিত গতি আসেনি। বাংলাদেশ বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে আয় করেছে তিন হাজার ৮৪ কোটি ৩০ লাখ ডলার। আগের অর্থবছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ১.৩৫ শতাংশ। গত দেড় দশকে এত কম প্রবৃদ্ধি হয়নি। একই সময়ে আমদানিতে বাংলাদেশের ব্যয় হয়েছে ৪ হাজার ৩৪৯ কোটি ডলার, যা আগের অর্থবছরে ছিল তিন হাজার ৯৯০ কোটি ডলার। সে হিসেবে গত এক বছরে আমদানি ব্যয় বেড়েছে ৩৫৯ কোটি ডলার বা প্রায় ৯ শতাংশ।

বিশ্লেষকরা বলেন, জ্বালানি তেল এবং খাদ্যপণ্যের দাম কম থাকায় ২০১৫-১৬ অর্থবছর এবং তার আগের দুই অর্থবছরে আমদানি ব্যয় তুলনামূলকভাবে কম ছিল। অন্যদিকে রপ্তানি আয় সে সময় বাড়ছিল বলে বাণিজ্য ঘাটতি সহনীয় পর্যায়ে ছিল। কিন্তু সামপ্রতিক সময়ে জ্বালানি তেলের দাম ৫৫ থেকে ৬০ ডলারে ওঠানামা করায় এবং বেশ কয়েকটি বড় প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম আমদানি বেড়ে যাওয়ায় বাণিজ্য ঘাটতি বাড়ছে বলে মনে করেন তিনি।
ঘাটতি বেড়েছে সেবাখাতেও। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সেবা বাণিজ্যে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩২৮ কোটি ৪০ লাখ ডলার। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ঘাটতি ছিল ২৭০ কোটি ৮০ লাখ ডলার। মূলত বীমা, ভ্রমণ ইত্যাদি খাতের আয়-ব্যয় হিসাব করে সেবাখাতের বাণিজ্য পরিমাপ করা হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে গত অর্থবছরে মোট ২৯৮ কোটি ৫০ লাখ ডলারের সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) পেয়েছে বাংলাদেশ, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৯ দশমিক ৩০ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে নিট এফডিআই এসেছে ১৭০ কোটি ৬০ লাখ ডলার। আগের বছরে এসেছিল ১২৮ কোটি ৫০ লাখ ডলার। এ হিসাবে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে নিট এফডিআই প্রবাহ বেড়েছে ৩৩ শতাংশ। বাংলাদেশে বিভিন্ন খাতে মোট যে এফডিআই আসে তা থেকে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান মুনাফার অর্থ নিয়ে যাওয়ার পর যে অর্থ অবশিষ্ট থাকে তাকেই নিট এফডিআই বলা হয়।

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=79288