৬ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ১০:৫২

ঈদ সামনে রেখে পরিবহন সেক্টরে নৈরাজ্য

ঈদ সামনে রেখে পরিবহন সেক্টরে শুরু হয়েছে নৈরাজ্য। ভাড়া বৃদ্ধি ও অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহনসহ নানা অনিয়ম করছেন পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা। কোনো কোনো রুটে দ্বিগুণেরও বেশি ভাড়া আদায় হচ্ছে বলে অভিযোগ মিলেছে। পুলিশসহ প্রশাসনের শীর্ষ সারির অনেকেই ঈদকে সামনে রেখে বর্ধিতভাড়া আদায়কারীদের বিরুদ্ধে অ্যাকশন নেয়ার কথা বললেও কেউ তাদের নির্দেশনা মানছে না। অনেকে বলেছেন, এত টাকা ভাড়াগুনে এবার ঈদে তাদের বাড়ি যাওয়া হবে না।

ঈদকে সামনে রেখে অধিকাংশ পরিবহনই ভাড়া বাড়িয়েছে। পরিবহন সূত্র জানায়, ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে ঝালকাঠীর রাজাপুর পর্যন্ত পালকি পরিবহনের ভাড়া ছিল সাড়ে ৬০০ টাকা। ঈদ উপলক্ষে এই পরিবহনটি ১০০ টাকা বাড়িয়ে ভাড়া নির্ধারণ করেছে সাড়ে ৭০০ টাকা। এটাকে কোন কোন যাত্রী যৌক্তিক বলে মন্তব্য করেছেন। শাকুরার আগের ভাড়া ছিল ৬০০ টাকা। ঈদকে সামনে রেখে এখণ ভাড়া নির্ধারণ করেছে ৯০০ টাকা। লাবিবা পরিবহনে ভাড়া ছিল ৭৫০ টাকা। এখন ভাড়া আদায় হচ্ছে ১১০০ টাকা।

বরিশাল এক্সপ্রেসের ভাড়া ছিল ৬০০ টাকা। এখন নির্ধারণ করেছে ৯৫০ টাকা। যমুনা লাইনের ভাড়া ছিল ৬০০ টাকা। এখন আদায় হচ্ছে ১২০০ টাকা। ইসলাম পরিবহনের ভাড়া ছিল ৬০০ টাকা। এখন আদায় হচ্ছে ১২০০ টাকা। রাজাপুরের এক কাউন্টার মালিক জানান, একমাত্র এনা পরিবহন ছাড়া সবাই ভাড়া বাড়িয়েছে। যা নিয়ে প্রতিদিন যাত্রীদের সাথে তর্ক-বিতর্ক হচ্ছে। ওই কাউন্টার মালিক জানান, এতে কাউন্টারের কোনো লাভ নেই। ভাড়া যখন ৬০০ টাকা ছিল তখনো কাউন্টার টিকিট প্রতি ৫০ টাকা পেতো। আর এখন ১২০০ টাকা টিকিটের মূল্য রেখেও ৫০ টাকা কমিশন পায় কাউন্টার মালিকরা।

শুধু যে দূরপাল্লার বাসে ভাড়া বাড়ানো হয়েছে তাই নয়। ঢাকায় যেসব পরিবহন চলাচল করছে তাতেও বাড়তি ভাড়া আদায় হচ্ছে। গতকাল তুরাগ পরিবহনের একটি বাসে সায়েদাবাদ এলাকায় ভাড়া নিয়ে বাগি¦তণ্ডা হচ্ছিল। ওই বাসের মালিক নিজেও তখন গাড়িতে ছিলেন। তিনি জানালেন, ঈদ উপলক্ষে সবাইকে টাকা দিতে হয়। পুলিশকে প্রতিদিন টাকা দিতে হয়। এই টাকা তারা কোত্থেকে আয় করবেন। যে কারণে বাড়তি ভাড়া নিতে হয় যাত্রীদের কাছ থেকে। ওই মালিক জানান, এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে টাকা দিতে হয় না। থানা পুলিশ, ফাঁড়ি পুলিশ, বক্সে পুলিশ। সবাই তাকিয়ে থাকে টাকার জন্য। রাজধানীর এমন কোনো পরিবহন নেই যে পরিবহনে ভাড়া বাড়ানো হয়নি।

পরিবহন মালিকদের কেউ কেউ বলেছেন, ঈদ আসলে তাদেরকেও বকশিশ গুনতে গুনতে অস্থির হতে হয়। যে কারণে তারাও ভাড়া বাড়িয়ে দেন। পুলিশের আইজি, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনারসহ অনেকেই এবারে ঈদ যাত্রায় বাড়তি ভাড়া আদায়কারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু তাদের কোনো নির্দেশনাই কার্যকর হচ্ছে না। পরিবহন মালিকরা ঠিকই তাদের মতো করে ভাড়া বাড়াচ্ছেন। এ দিকে নির্দেশ মানানোর জন্য কার্যকর পদক্ষেপও পরিলক্ষিত হচ্ছে না। একাধিক যাত্রী বলেছেন, যদি প্রশাসনের পক্ষ থেকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হতো তাহলে মানুষ অতটা ভোগান্তির শিকার হতো না।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/826858