৩০ মার্চ ২০২৪, শনিবার, ১২:০১

‘নিরন্তর মিথ্যা কহে নাহি রাখে দাড়ি’

-ইবনে নূরুল হুদা

অবক্ষয় আমাদের জাতীয় জীবনকে আষ্টেপৃষ্ঠে চেপে ধরেছে। মিথ্যা বলা ও কপটতা এখন অনেকটাই ঐতিহ্য হয়ে পড়েছে। মূল্যবোধের চর্চা এখন শুধু কাগজে-কলমেই রয়েছে। বাস্তবে একেবারে নেই বললেই চলে। বিষয়টি এখন ‘কাজীর গরু কাগজে আছে; গোয়ালে নেই’-এর মতো শোনা যায়। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, সবকিছুই নষ্টের দখলে চলে গেছে। রাষ্ট্রের প্রায় ক্ষেত্রেই তেমন সুন্দর ও সুকুমার বৃত্তির চর্চা নেই। দুর্নীতি, অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা ও সীমালঙ্ঘন রাষ্ট্রীয় কাঠামোগুলোর ভিত্তি নড়বড়ে করে দিয়েছে। আমরা জাতি হিসাবে ক্রমেই ব্যর্থতার দিকেই অগ্রসর হচ্ছি। মূলত, এক্ষেত্রে আমরা রীতিমত আত্মঘাতীই বলতে হবে। দেশে সাংবিধানিক ও আইনের শাসনের বিচ্যুতিই এর অন্যতম কারণ। নেতিবাচক ও ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতিও এজন্য কম দায়ী নয়। সবকিছু দেখভাল করার জন্য সরকার নামের একটি কাঠামো থাকলেও অবক্ষয়ের জয়জয়কারের কারণেই তা ব্যর্থতার বৃত্তেই আটকা পড়েছে। কল্যাণ রাষ্ট্র বলতে যা বোঝায় তা অনেক ক্ষেত্রেই অনুপস্থিত। ফলে মানুষ রাষ্ট্রের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। লাভবান হচ্ছেন একশ্রেণির দালাল-ফরিয়া নামের রাজনীতির পাত্রমিত্ররা। যারা রাজনীতিতে মূল্যবোধের চর্চা করতে চান তারা এখন রীতিমত কোণঠাসা।

এ কথা কারো অজানা নয় যে, দেশে গণতন্ত্রের নামে স্বেচ্ছাতন্ত্র ও জুলুমবাজী চলছে। গণমানুষের ভোটাধিকারের নামে নির্মম তামাশা বিশে^র গণতান্ত্রিক ইতিহাসে আর দ্বিতীয়টি দেখা যায় না। ‘দুষ্টের দমন ও শিষ্টের লালন’ রাষ্ট্রের অলঙ্ঘনীয় ও অত্যাবশ্যকীয় দায়িত্ব হলেও সরকার নির্বাচিত হচ্ছে অনৈতিক, অগণতান্ত্রিক ও অগ্রহণযোগ্য পন্থায়। স্থানীয় নির্বাচনগুলোতেও একই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে এ ধরনের সরকারের নৈতিকতা দুর্বল ও ভঙ্গুর হওয়ায় স্বাভাবিক। হয়েছেও তাই। সঙ্গত কারণেই রাষ্ট্র পরিচালনার কোন ক্ষেত্রেই তারা বলিষ্ঠতার পরিচয় দিতে পারছেনা। ফলে রাষ্ট্রাচারের পরতে পরতে অবক্ষয় ও সীমালঙ্ঘন প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে। সুযোগ সন্ধানী ও অপরাধপ্রবণরা হয়ে পড়েছে অনিয়ন্ত্রিত। গণপ্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বিচারবিভাগসহ রাষ্ট্রের কোন সেক্টরই স্বাভাবিক কার্য সম্পাদক করতে পারছে না বরং সবকিছুতেই একটা পিছুটান ও স্থবিরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। রাষ্ট্রের কোন অঙ্গ প্রতিষ্ঠান স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে না বা করছে না। একটি কালো ছায়া ও অশরীরি স্বত্ত্বা তাদের ওপর অনাকাক্সিক্ষতভাবে আছর করছে। যা আমাদের জাতিস্বত্ত্বার ভিত্তিমূলকেই দুর্বল ও শক্তিহীন করে ফেলছে। এ থেকে পরিত্রাণের আপাতত কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। ভবিষ্যৎ নিয়েও খুব একটা আশাবাদী হওয়ার সুযোগ নেই।

দেশে একটি সরকার ও প্রশাসন আছে। আছে রাষ্ট্রীয় কাঠামোও। নাগরিকরা নিজেদের অধিকারের নিশ্চয়তার জন্য সরকারকে কর দিলেও রাষ্ট্র তাদের অধিকারের পুরোপুরি নিশ্চয়তা দিতে পারছে না। আর সরকার তো দাবি করছে তারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত। এই সরকার কতখানি নির্বাচিত তা অবশ্য দেশের আমজনতা ৭ জানুয়ারি নির্বাচনে সরাসরি প্রত্যক্ষ করেছে। জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে সে নির্বাচন বর্জন করলেও তথাকথিত নির্বাচিতরা তা নিয়েই আহলাদে আটখানা। বিষয়টিকে সরকারের আত্মপ্রতারণা হিসাবেই দেখছেন দেশের আত্মসচেতন মহল। যা বহির্বিশে^ জাতি হিসাবে আমাদেরকে অসম্মান করেছে।

অবশ্য সরকার তারপরও দাবি করছে ‘তারা জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হয়েছে। দেশে আইনের শাসন আছে। নাগরিকরা তাদের মৌলিক অধিকারসমূহ যথাযথভাবে ভোগ করছেন’। কিন্তু ইতিহাস কখনো চাপা থাকে না। পেশিশক্তি ও ক্ষমতার জোরে সবকিছু ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হলে ইতিহাসের গতিপথ কিন্তু রুদ্ধ করা যায় না বরং তা লিখিত হয় আপন মহিমায়; নিজ গতিতে। যেমনটি নিজের মনের অশান্তেই মুঘল আমলের মুসলমানদের জীবনাচার লিখে ফেলেছিলেন কবি কঙ্কন শ্রী মুকুন্দরাম চক্রবর্তী। এজন্য কেউ তাকে উদ্বুদ্ধ করেনি। প্রভাবিতও করেনি কেউ তাকে। কিন্তু সত্য কোন ভাবেই চাপা থাকেনি।

তিনি সে সময়ের মুসলমানদের জীবন চরিত নিয়ে তার চ-ীমঙ্গল কাব্যের কালকেতু উপাখ্যানে লিখেছেন,
‘বড়ই দানিসবন্দ/না জানে কপট ছন্দ/ প্রাণ গেলে রোজা নাহি ছাড়ি।
যারে দেখে খালি মাথা/তার সনে নাহি কথা/সারিয়া মারয়ে ডাঁড়া বাড়ি’॥

আমাদের দেশের ক্ষমতাসীনরা এক্ষেত্রে খুবই বেখেয়াল ও বেসামাল বলেই মনে হচ্ছে। ক্ষমতাসীনরা মনে করছে তারা নিজেদের চেহারা যেভাবে দেখছেন, ইতিহাস তাদেরকে সেভাবেই মূল্যায়ন করবে। কিন্তু সত্য কিন্তু খুবই নির্মম ও নিষ্ঠুর। ইতিহাসের গতিপথ ধরে তা একদিন উদ্ভাসিত হবেই। ক্ষমতার প্রতিভূরা তা কোন ভাবেই ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না।

একথা অস্বীকার করার সুযোগ নেই যে, দেশে এক নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। অবক্ষয়, অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতা পুরো রাষ্ট্রযন্ত্র প্রায় অকার্যকর করে ফেলেছে। মূলত, অনিয়মই এখন নিয়মে পরিণত হয়েছে। রাষ্ট্রের কোন সেক্টর বা বিভাগই এথেকে মুক্ত নয়। সে ধারাবাহিকতায় দেশে গ্যাস সংযোগ নিয়ে চলছে লুকোচুরি ও লাগামহীন স্বেচ্ছাচারিতা। তিতাস নামের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানটিতে চলছে রমরমা অবৈধ বাণিজ্য। এ বাণিজ্যে জড়িত প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাই। সরকারের ভিত্তি দুর্বল হওয়ায় এদের বিরুদ্ধে তারা কোন কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারছে না। টাকা দিয়েও গ্যাস পাচ্ছে না সরকারি প্রতিষ্ঠান। অথচ অবৈধ পথে গ্যাসের লাইন দেয়া, বাসাবাড়িতে লুকোচুরি করে অবৈধ সংযোগ দিয়ে রমরমা ব্যবসা চলছে অবলীলায়। এতে করে প্রতিমাসে বিল পরিশোধ করেও সাধারণ ভোক্তাদের চুলা জ্বলছে না। রমযানে চুলা জ্বলে না রাজধানীর অনেক এলাকায়। ফলে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে নগরজীবন। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে কারো কোন মাথাব্যাথা আছে বলে মনে হয় না।

অবৈধভাবে গ্যাসের রমরমা ব্যবসার বৈধ গ্রাহকরা ঠিকমতো গ্যাস পাচ্ছেন না বলে আত্মস্বীকৃতি রয়েছে খোদ বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর। তিনি গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘অবৈধ গ্যাস সংযোগকারীদের বিরুদ্ধে সবকটি গ্যাস বিতরণ কোম্পানিকে কঠোর অভিযান চালাতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অবৈধ গ্যাস ব্যবহারকারীদের কারণে বৈধ গ্রাহকরা ঠিকমতো গ্যাস পাচ্ছেন না। তাই যে কোনো মূল্যে অবৈধ গ্যাস ব্যবহারকারীদের চিহ্নিত করে তাদের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করাসহ আইনের আওতায় আনা হবে’। কিন্তু বাস্তবে তার কোন প্রতিফলন লক্ষ্য করা যাচ্ছে না বরং সার্বিক পরিস্থিতির দিনের পর দিন অবনতিই হচ্ছে।

রাজধানীর মতিঝিলের সরকারি আবাসিক কলোনী (এজিবি) কলোনীতে বৈধভাবে সরকারি প্রতিষ্ঠানে গ্যাস সংযোগের জন্য ৪০ লাখ ৬৩ হাজার ২৬৪ টাকা তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিসন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের নামে ব্যাংকের মাধ্যমে গণপূর্তের মতিঝিল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী গত ২০১৯ সালে ২৬ জুলাই টাকা পরিশোধ করেন। গ্যাস সংযোগের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন কলোনীর সরকারি কর্মকর্তারা এবং গণপূর্ত বিভাগের কর্মকর্তারা। প্রায় ৫ বছর ধরে ঘুরেও বৈধভাবে গ্যাস সংযোগ পাচ্ছে না। আবার অনেকেই টাকা দিয়ে গ্যাস সংযোগ ব্যবহার করলেও সব সময় গ্যাস পাচ্ছে না। অন্যদিকে যারা অবৈধভাবে গ্যাস সংযোগ নিয়ে ব্যবহার করছেন তারা ভালোই সুবিধা ভোগ করছেন। দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা অবৈধ গ্যাস সংযোগগুলোতে গ্যাসের প্রবাহ যাতে স্বাভাবিক থাকে সে ব্যাপারে তৎপর। এভাবেই রাজধানীর উত্তরা, ডেমরা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুরসহ সারাদেশে অবৈধ গ্যাস সংযোগের ছড়াছড়ি চলছে। অনেক বেসরকারি শিল্প প্রতিষ্ঠানও অবৈধভাবে গ্যাস সংযোগ নিয়েছেন। আবার গোপনে গোপনে নিচ্ছেন। এসব অবৈধ সংযোগ দেয়ার সঙ্গে তিতাসের একশ্রেণির কর্মকর্তা ও কর্মচারী জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে।

এদিকে বাসাবাড়িতে নতুন গ্যাস সংযোগ দেয়া নিয়ে এক প্রকার লুকোচুরি করছে তিতাস। বাসাবাড়িতে নতুন করে গ্যাস সংযোগ দেয়া হবে না এ মর্মে কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়নি সরকার। কোনো প্রজ্ঞাপনও জারি করা হয়নি। ফলে হাজার হাজার গ্রাহক সংযোগের জন্য গ্যাস বিতরণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে টাকা জমা দিয়ে আবেদন করছেন। তাদের বলা হচ্ছে, গ্যাসের ঘাটতি রয়েছে, এ জন্য সংযোগ এখন দেয়া হবে না। কিন্তু এর মধ্যেই প্রভাবশালীরা নানা উপায়ে ‘ঘুষ দিয়ে’ সংযোগ নিচ্ছেন-এ রকম প্রমাণও পাওয়া যাচ্ছে। সংযোগ নিয়ে সরকারের এ অস্পষ্ট অবস্থানের কারণে এ খাতে দুর্নীতি বাড়ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট সেবাদানকারী সংস্থার কর্মকর্তারা। তাদের মতামত হলো, সরকারকে এ বিষয়ে স্পষ্ট অবস্থান ঘোষণা করা উচিত, তাহলে সংযোগ নিয়ে লুকোচুরি বন্ধ হবে। নতুবা কেউ সংযোগ পাবে, কেউ পাবে না। এ অবস্থা চলতে পারে না। তাছাড়া এ অস্পষ্ট অবস্থানের কারণে সারাদেশে অবৈধ গ্যাস পাইপলাইন স্থাপন বেড়েছে। গ্যাস বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান তিতাসের এলাকায় প্রায় ৩০০ কিলোমিটার অবৈধ লাইন রয়েছে বলে তিতাসের এক প্রতিবেদনে প্রকাশ করা হয়েছে।

জানা গেছে, গত নবেম্বর থেকে চলতি ফেব্রুয়ারির ১৫ তারিখ পর্যন্ত অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্নকারী তিতাসের টিম ৯৪টি অভিযান পরিচালনা করেছে। যার মধ্যে প্রায় ৩২১টি স্পট বা এলাকা রয়েছে। এসব এলাকায় প্রায় শত কিলোমিটার অবৈধ লাইন বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। যার মধ্যে ৬২ হাজার ৪২৩টি বার্নার বা চুলা, ৫৭টি শিল্প সংযোগ ও ৫৭টি বাণিজ্য সংযোগ রয়েছে। এ ছাড়া ৪৪টি মোবাইলকোর্ট পরিচালনা করে অবৈধ গ্যাস সংযোগকারীদের ৪৭ লাখ ৭৩ হাজার ৪০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে ১৫টি ক্যাপটিভ গ্যাস সংযোগ। কর্তৃপক্ষ এখন অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন কার্যক্রম নিয়েই বেশি ব্যস্ত। ফলে তিতাসের নিয়মিত যেসব কার্যক্রম রয়েছে সেগুলো বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বিভিন্ন শেণির গ্রাহকরা এ নিয়ে এখন নিয়মিতই অভিযোগ জানাচ্ছেন।

রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে সরকারি মোট ৬টি কোম্পানি বাসাবাড়িসহ শিল্প-বাণিজ্য খাতে গ্যাস সরবরাহের দায়িত্বে রয়েছে। এগুলো হলো-তিতাস, কর্তফুলী, পশ্চিমাঞ্চল, জালালাবাদ, বাখরাবাদ ও সুন্দরবন। তিতাসের বিতরণ এলাকা হলো-রাজধানী ঢাকাসহ গাজীপুর, মানিকগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, নরসিংদী, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, জামালপুর, কিশোরগঞ্জ, শেরপুর ও নেত্রকোনা। কর্তফুলীর বিতরণ এলাকা হচ্ছে, চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের জেলাগুলো। বাখরাবাদের এলাকা হলো-বৃহত্তর নোয়াখালী ও কুমিল্লা। জালালাবাদের বিতরণ এলাকা হচ্ছে, সিলেট বিভাগের বিভিন্ন জেলা। পশ্চিমাঞ্চলের দায়িত্বে রয়েছে সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, রাজশাহী, ঈশ্বরদী, পাবনা, ভেড়ামারাসহ আশপাশ এলাকা। সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি গঠিত হলেও এখনও বিতরণের কাজ শুরু করেনি। এ কোম্পানি খুলনা, যশোর, সাতক্ষীরাসহ আশপাশ এলাকায় গ্যাস বিতরণের দায়িত্বে রয়েছে।

তিতাস সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে তিতাস গ্যাসের আবাসিক সংযোগ সংখ্যা প্রায় ২৮ লাখ ৫৮ হাজার। এছাড়া, বাণিজ্যিক সংযোগ প্রায় ১২ হাজারের মতো। যার মধ্যে প্রায় ১৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা রয়েছে। সেখানেও সরবরাহ হচ্ছে, ফলে ঘাটতি থেকেই যাচ্ছে। যে কারণে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় প্রতিদিন গ্যাস সঙ্কট দেখা যাচ্ছে। আপাতত গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর কোনো উপায় তাদের হাতে নেই। আগামী ২০২৬ সাল নাগাদ ৪৬টি কূপ খনন ও সংস্কারের যে পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে তাতে সফল হলে ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট নতুন গ্যাস পাওয়া যেতে পারে। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটা কূপে গ্যাসের সন্ধানও মিলেছে। পাশাপাশি আরও এলএনজি আমদানির জন্য সরকার যে চুক্তি করেছে তাতেও ২০২৬ সালের আগে নতুন গ্যাস আমদানির কোনো সুযোগ নেই। ২০২৬ সালে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হবে। তবে আশঙ্কার বয়েছে একাধিক কর্মকর্তা এ তথ্য জানান। তারা বলেন, পরিকল্পনা অনুযায়ী কূপ খনন ও সংস্কার করে কাক্সিক্ষত গ্যাস পাওয়া যাবে কি না, সেটা এখনই বলা মুশকিল। তাছাড়া নতুন করে উচ্চমূল্যের এলএনজি আমদানি করতে যে বিপুল পরিমাণ ডলার দরকার সেটি জোগাড় করা না গেলে আমদানি ব্যাহত হবে। এ সময়ে দেশের পুরনো কূপ থেকে গ্যাসের উৎপাদন কমে যাওয়ার পাশাপাশি চাহিদাও বেড়ে যেতে পারে। ফলে চলমান সংকট কতটা দূর হবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। নারায়ণগঞ্জের ৫৬৭টি পোশাক ও ডায়িং কারখানা পৌনে দুই মাস ধরে গ্যাস সংকটে ভুগছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

তিতাসের পরিচালক প্রকৌশলী গণমাধ্যমকে বলেছেন, অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে তিতাস সব ধরনের চেষ্টা করছে। অবৈধ গ্যাস সংযোগের এমন বিশৃঙ্খল অবস্থা তৈরি হয়েছে যে, এটি শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে অব্যাহতভাবে কাজ করে যেতে হবে। জ্বালানি বিভাগের সিদ্ধান্ত এবং আমাদের অবস্থান কঠোর। অবৈধ গ্যাস ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে। তবে অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে বেশি নজর দেয়ার কারণে অন্যান্য কাজে একটু বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। অল্প সময়ের মধ্যেই এগুলো ঠিক হয়ে যাবে। বকেয়া আদায়েও কঠোর অবস্থান নেয়া হয়েছে। কিন্তু তার এই বক্তব্যকে কথার কথা বা দায়সারা বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। কারণ, সর্ষের মধ্যেই তো ভূত রয়েছে। তাই মাঝে মাঝে কর্মকতআ বা আমলারা বেশ হম্বিতম্বি করলেও তার কোন কার্যকারিতা লক্ষ্য করা যায় না।

শুধু দেশের গ্যাস বা জ¦ালানি সেক্টর নয় বরং প্রায় সকল সেক্টরের দুর্নীতি, অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতা অনেকটাই প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে। বিষয় দেশের সকল শ্রেণি ও পোশার মানুষের মধ্যে ওপেন সিক্রেট হলেও সরকার এ সবকে দেখছে নিজেদের মত করে রঙ্গিন চশমা দিয়ে। ফলে তারা হয়তো বাস্তবতা উপলব্ধি করতে পারছে না বা সবকিছু নিজেদের প্রভাব-প্রতিপত্তি ও শক্তি দিয়ে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছে না। কিন্তু কেউ চাইলেই ইতিহাসের গতিপথ কোন ভাবেই রুদ্ধ করা যায় না বরং তা চলমান ¯্রােতের মতই গতিশীল। ইতিহাসের গতি ধারায় তা একদিন উদ্ভাসিত হবে।

কবি কঙ্কন শ্রী মুকুন্দরাম চক্রবর্তী তার কালকেতু উপাখ্যানে তদানীন্তন মুসলিম সমাজের জীবনাচারণ নিয়ে অনেক ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। তাদের ধর্মবিশ্বাস ও আদর্শ নিয়ে বলেছেন অনেক ইতিবাচক কথা। কিন্তু মুসলিম মৎস্য ব্যবসায়ীদের নেতিবাচক বৈশিষ্ট্য বলতে মোটেই ভুল করেননি। তার ভাষায়, ‘মৎস বেচিয়া নাম ধরাল্য কাবাড়ি/নিরন্তর মিথ্যা কহে নাহি রাখে দাড়ি’। বিষয়টি কি সংশ্লিষ্টদের জন্য শিক্ষণীয় নয়? কারণ, ইতিহাস বহমান নদীর মতই প্রাণবন্ত।

https://www.dailysangram.info/post/552597