২৮ আগস্ট ২০২৩, সোমবার, ৬:০৪

ডলার সঙ্কটে ধারাবাহিক কমছে আমদানি

পণ্য সরবরাহ ঘাটতির শঙ্কা

ডলার সঙ্কটে ধারাবাহিকভাবে কমে যাচ্ছে পণ্য আমদানি। বিশেষ করে শিল্পে মূলধনী যন্ত্রপাতি এবং শিল্পের কাঁচামাল আমদানি কমছে বেশি হারে। এতে এক দিকে পণ্যের ঘাটতি হওয়ার শঙ্কা বাড়ছে, সেই সাথে বাড়ছে কর্মসংস্থান কমে যাওয়ার শঙ্কা। মূলধনী যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানি কমে যাওয়ার অর্থই হলো শিল্পের উৎপাদন কমে যাওয়া। এতে পণ্যের ঘাটতি হওয়ার পাশাপাশি কাক্সিক্ষত হারে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে না। এতে বেকারত্ব বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, পণ্য আমদানির জন্য আমদানি ঋণপত্র স্থাপন বা এলসি খোলার হারের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ঋণাত্মক ৩১.১৯ শতাংশ। ঋণপত্র নিষ্পত্তি বা পণ্য দেশে আসার হার কমেছে ২০.১৪ শতাংশ। এর মধ্যে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য এলসি খোলার হার কমেছে ২২.১৭ শতাংশ এবং শিল্পের কাঁচামাল আমদানির জন্য এলসি খোলার হার কমেছে ৩৬.১২ শতাংশ। ভোগ্যপণ্য আমদানির এলসি খোলার হার কমেছে ২১.০১ শতাংশ। ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, পণ্য আমদানি কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ হলো ডলার সঙ্কট। বিদায়ী অর্থবছরে পণ্য আমদানি কমেছে ৩৩.৫২ শতাংশ। যেখানে আগের বছরে বেড়েছিল ৩৫.৯৩ শতাংশ। এ হিসাবে বিদায়ী অর্থবছরে পণ্য আমদানি কমেছে প্রায় ৭০ শতাংশ। দীর্ঘ দিন ধরে ব্যাংকে ডলার সঙ্কট রয়েছে। যে হারে ডলার দেশে আসছে, তার চেয়ে বেশি হারে ডলারের প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। এর ফলে ডলারের ঘাটতি ব্যাপক হারে বেড়ে গেছে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত অর্থবছর থেকেই পণ্য আমদানিতে নিরুৎসাহিত করে আসছে। বিশেষ করে বিলাসবহুল পণ্য আমদানিতে বেশি কড়াকড়ি করা হচ্ছে। সবমিলেই সামগ্রিক প্রভাব পড়েছে পণ্য আমদানিেত।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম মাস অর্থাৎ জুলাইয়ে বিভিন্ন পণ্য আমদানির জন্য ৪৩৭ কোটি ২৪ লাখ ডলার বা ৪.৩৭ বিলিয়ন ডলারের এলসি খোলা হয়েছে, যা ২০২২-২৩ অর্থবছরের একই সময়ের (জুলাই) চেয়ে ৩১ দশমিক ১৯ শতাংশ কম। এলসি নিষ্পত্তি কমেছে ২০ দশমিক ১৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের জুলাই মাসে ৭৪৯ কোটি ১৮ লাখ ডলার বা ৭.৪৯ বিলিয়ন ডলারের ঋণপত্র বা এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে, যা গত অর্থবছরের একই মাসে (জুলাই) ৫৯৮ কোটি ৩০ লাখ ডলার বা ৫.৯৮ বিলিয়ন ডলারের এলসি নিষ্পত্তি হয়েছিল। ২০২২-২৩ অর্থবছর (জুলাই-জুন) বিভিন্ন পণ্য আমদানির জন্য ৭ হাজার ২১৯ কোটি ৮০ লাখ ডলারের বা ৭২.২০ বিলিয়ন ডলারের ঋণপত্র বা এলসি খুলেছিলেন বাংলাদেশীরা। এটি ২০২১-২২ অর্থবছরের চেয়ে প্রায় ২৬ শতাংশ কম।

ডলার বিক্রি আর আমদানির দায় মেটানোর কারণে কমতে থাকে দেশের রিজার্ভ। গত বুধবার (২৩ আগস্ট) পর্যন্ত আইএমএফের হিসাব মতে, দেশের খরচ করার মতো রিজার্ভ রয়েছে ২৩ দশমিক ১৬ বিলিয়ন ডলার বা ২ হাজার ৩১৬ কোটি ডলার। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব হিসাব মতে রিজার্ভ রয়েছে ২৯ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার বা ২ হাজার ৯৩২ কোটি ডলার। এর আগে ২০২১ সালের আগস্টে রেকর্ড ৪৮ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করেছিল রিজার্ভ। পরের বছর ২০২২ সালের ১৬ আগস্ট রিজার্ভ ছিল ৩৯ দশমিক ৫৫ বিলিয়ন ডলার। বর্তমানে ওই রিজার্ভ ৩০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে এসেছে।

রিজার্ভ থেকে চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে বিক্রি করা হয় ১১৪ কোটি ৭০ ডলার বা ১১৪৭ মিলিয়ন ডলার। আর অর্থবছরের দ্বিতীয় মাস আগস্টের প্রথম ২৩ দিনে বিক্রি করা হয় ৮১ কোটি ৬০ লাখ ডলার। এর আগে সদ্য বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ থেকে সর্বোচ্চ ১৩ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করা হয়। এর আগে ২০২১-২২ অর্থবছরে সর্বোচ্চ ৭ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলার বিক্রি হয়েছিল।

বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, পণ্য আমদানি কমে যাওয়া বিশেষ করে শিল্পে মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানি কমে যাওয়ার অর্থই হলো সরাসরি কর্মসংস্থান বাধাগ্রস্ত হওয়া। আর সেই সাথে পণ্য সরবরাহের ঘাটতি বেড়ে যাওয়া। কারণ মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি কমে গেলে নতুন নতুন শিল্প কারখানা গড়ে উঠছে না। এতে বর্ধিত হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে কর্মসংস্থান সৃষ্টি না হওয়ায় বেকারত্বের হার বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা থাকছে। পাশাপাশি কাঁচামাল আমদানি কমে গেলে বিদ্যমান শিল্পকারখানায় উৎপাদন কমে যাচ্ছে। এতে কর্মক্ষম শ্রমিক বেকার হচ্ছে। পাশাপাশি পণ্যের সরবরাহের ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। এ থেকে উত্তরণের একমাত্র উপায় হলো উৎপাদনশীল পণ্য আমদানিতে উৎসাহিত করা। অন্যথায় বেকারত্বের হার বেড়ে গেলে সামাজিক বিপর্যয় এড়ানো কঠিন হবে।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/773079