২৮ আগস্ট ২০২৩, সোমবার, ৫:৪৬

আমদানি স্বাভাবিক থাকলেও অস্থির পেঁয়াজের বাজার

দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে পেঁয়াজের আমদানি স্বাভাবিক থাকলেও নানা অজুহাতে আবারো অস্থির হয়ে উঠেছে পেঁয়াজের বাজার। দুই দিনের ব্যবধানে বন্দরে পাইকারিতে কেজিতে ১০ থেকে ১২ টাকা বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। ভারতের বাজারে শুল্ক আরোপ ও শুল্কায়ন মূল্য বাড়ানোর কারণে দাম বাড়ছে বলে দাবি আমদানিকারকদের। তবে যে পরিমাণ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে তার চেয়ে বেশি দাম বাড়ানো হচ্ছে বলে অভিযোগ পাইকারি ক্রেতাদের। বাড়তি দামের কারণে অনেক পাইকারি ক্রেতা তাদের চাহিদামাফিক পেঁয়াজ কিনতে পারছেন না। ফলে বিপাকে পড়েছেন তারা।

হিলি স্থলবন্দর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বন্দর দিয়ে ভারত থেকে নাসিক ও ইন্দোর এই দুই জাতের পেঁয়াজ আমদানি অব্যাহত রয়েছে। গত বৃহস্পতিবার বন্দর দিয়ে আমদানিকৃত ইন্দোর জাতের পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৪৭ থেকে ৪৮ টাকা আর নাসিক জাতের পেঁয়াজ ৫৩ থেকে ৫৪ টাকা দরে বিক্রি হয়েছিল। কিন্তু শুল্কায়ন মূল্য বাড়ানোর খবরে শনিবার সেই একই ১০ টাকা কেজি প্রতি বাড়িয়ে ইন্দোর জাতের পেঁয়াজ ৫৮ থেকে ৬০ টাকা আর নাসিক জাতের পেঁয়াজ ৬২ থেকে ৬৫ টাকা বিক্রি করা হয়।

হিলি স্থলবন্দরে পেঁয়াজ কিনতে আসা পাইকার ইমরান হোসেন বলেন, দেশের বিভিন্ন মোকামে ক্রেতাদের চাহিদামতো পেঁয়াজ ক্রয় করে পাঠাতাম। কিন্তু ভারত সরকার পেঁয়াজের শুল্কায়ন মূল্য বাড়িয়েছে এমন খবরে শনিবার হঠাৎ করেই পেঁয়াজের বাজার বাড়তি হয়ে গেছে। যে ইন্দোর জাতের পেঁয়াজ গত বৃহস্পতিবার বন্দর থেকে ৪৭ থেকে ৪৮ টাকা কেজি দরে ক্রয় করে পাঠিয়েছিলাম সেই ইন্দোর জাতের পেঁয়াজ দাম বেড়ে ৫৮ থেকে ৬০ টাকা হয়ে যায়। আর যে নাসিক জাতের পেঁয়াজ ৫৩ থেকে ৫৪ টাকা কেজি দরে ক্রয় করেছিলাম সেটি বেড়ে দাম চাচ্ছে প্রকারভেদে ৬২ টাকা থেকে ৬৫ টাকা।

তিনি বলেন, যে হারে পেঁয়াজের শুল্ক বসালো ভারত সেই হিসেবে দাম তো বাড়েনি দাম বেড়েছে হিসাব ছাড়া। বাড়তি দামের কারণে আমরা পেঁয়াজ কিনতেই সাহস পাচ্ছি না। এছাড়া মোকামে পূর্বের পেঁয়াজ রয়েছে যার কারণে দাম বাড়ায় পেঁয়াজের তেমন একটা চাহিদা নেই।

হিলি স্থলবন্দরের পেঁয়াজ আমদানিকারক হারুন উর রশীদ বলেন, অতিবৃষ্টি ও বন্যার কারণে ভারতেই পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। যার কারণে সরবরাহ ঘাটতি দেখা দেয়ায় সে দেশের বাজারেই পেঁয়াজের দাম আগের তুলনায় বাড়তি। যার কারণে ভারত সরকার পেঁয়াজ রফতানি নিরুৎসাহিত করতে পেঁয়াজ রফতানির ওপর শুল্ক বসিয়েছে যা কেজিপ্রতি প্রকারভেদে ১০ থেকে ১২ টাকার মতো পড়ে যাচ্ছে এতে করে দেশের বাজারেও এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে পেঁয়াজের দাম বাড়ছে।

হিলি স্থলবন্দরের অপর পেঁয়াজ আমদানিকারক শহিদুল ইসলাম বলেন, গত ১৯ আগস্ট শনিবার ভারত সরকার পেঁয়াজ রফতানিতে ৪০ ভাগ শুল্ক আরোপ করে। এতে করে কেজিপ্রতি ৫ থেকে ৭ টাকা বাড়তি দামে দেশে পেঁয়াজ আমদানি করতে হচ্ছে। কিন্তু আবারো হঠাৎ করে গত শুক্রবার ভারত সরকার পেঁয়াজ রফতানিতে শুল্কায়ন মূল্য বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

আমরা প্রতি টন পেঁয়াজের এলসি খুলতাম ১৫০ থেকে দুই শ’ মার্কিন ডলার মূল্যে সেই মূল্যকেই শুল্কায়ন মূল্য ধরে তার ওপরেই ৪০ ভাগ শুল্ক নিতো তারা। কিন্তু গত ২৫ আগস্ট শুক্রবারে এবার তারা প্রতি টন পেঁয়াজের শুল্কায়ন মূল্য ৩২৫ ডলার নির্ধারণ করার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু সে সংক্রান্ত কোনো নির্দেশনা কাস্টমসে না আসায় শনিবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ভারতীয় কাস্টমস কোনো টেন্ডার করেনি।
বর্তমানে ভারতীয় কাস্টমস রফতানিকারকদের কাছ থেকে বন্ড নিয়ে পেঁয়াজ রফতানিতে অনুমতি দিচ্ছে। ভবিষ্যতে ৩২৫ মার্কিন ডলার নির্ধাণ করা হলে বাকি শুল্ক পরিশোধ করতে হবে। ৩২৫ মার্কিন ডলার শুল্কায়ন মূল্য সেটি যদি কার্যকর হয় তাহলে কেজি প্রতি পেঁয়াজের শুল্ক আরো ৭ টাকা করে বেড়ে যাবে। এতে করে আমাদের পেঁয়াজ আমদানিতে মূল্য দাঁড়াবে কেজি প্রতি ৬২ থেকে ৬৩ টাকার মত যে কারণে পেঁয়াজের দাম আরো বাড়বে।

পানামা হিলি পোর্ট কর্তৃপক্ষ জানায়, গত শনিবার হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ৩৭টি ট্রাকে এক হাজার ৯৩ টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/773088