২৮ আগস্ট ২০২৩, সোমবার, ৫:৩৪

ডেঙ্গু রোগীদের স্যালাইন সঙ্কট তীব্র : বেশি দামে কিনতে হচ্ছে

ডেঙ্গু রোগীদের জন্য এখনো ডিএনএস স্যালাইন পাওয়া যাচ্ছে না। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সময় ডাক্তাররা বলছেন বাইরে থেকে স্যালাইন নিয়ে আসতে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ স্যালাইন সঙ্কটের কথা না বললেও রোগীর স্বজনরা অভিযোগ করছেন, হাসপাতালে ভর্তির সময়েই স্যালাইন লাগবে বলে ডাক্তারের সহকারীরা বলে দিচ্ছেন। সব ফার্মেসিতে এখন স্যালাইন পাওয়া যাচ্ছে না। ফার্মেসিগুলোতে গেলেই সাথে সাথে বলে দেয়া হচ্ছে তাদের কাছে স্যালাইন নেই। কিন্তু কিছু ফার্মেসি থেকে বের হয়ে গেলেই একশ্রেণীর লোক পেছনে পেছনে আসছে। কানে কানে বলছে, কিছু বেশি দিলে স্যালাইন দেয়া যাবে। রোগীর স্বজনরা কোনো কথা না বলে বেশি টাকা দিয়ে স্যালাইন কিনছেন।

রাজধানীর শাহবাগের ফার্মেসির দোকানগুলোতে এ ধরনের পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এটা ঠিক, সব দোকানে ডিএনএস স্যালাইন সরবরাহ নেই। রামপুরা, বনশ্রীর একজন ওষুধ বিক্রেতা জানিয়েছেন, জুলাই মাসেও তার দোকানে ডিএনএস স্যালাইন ছিল। ১০৫ থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি করেছেন তিনি। এরপর আর তাকে স্যালাইন দিচ্ছে না কোনো কোম্পানি। স্যালাইন উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলো এখন হাসপাতালগুলোতে স্যালাইন সরবরাহ করছে। ফলে ফার্মেসিতে কোনো স্যালাইনের সরবরাহ তারা পায় না।

স্যালাইন সংগ্রহে ভয়াবহ সঙ্কটের কথা জানিয়েছেন এক ডেঙ্গু রোগীর স্বজন শামীমা রহমান। তিনি বলেন, ‘আমি রামপুরার একটি বেসরকারি হাসপাতালে আমার ভাইকে ভর্তি করিয়েছিলাম। হাসপাতালে ভর্তির সময়েই হাসপাতালের কর্মীরা ডিএনএস স্যালাইন নিয়ে আসতে বলে দেন।’ হাসপাতালের কর্মীরা তাকে জানান, ‘ডিএনএস স্যালাইন না পেলে কিন্তু রোগীর অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে, আমরা কিছু করতে পারব না। যে করেই হোক, বেশি দাম দিয়ে হলেও স্যালাইন নিয়ে আসুন।’ শামীমা রহমান জানান, রমাপুরা, মালিবাগ এলাকার ফার্মেসি ঘুরে কারো কাছে স্যালাইন তিনি পাননি। পরে শাহবাগের একটি ফার্মেসি থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় একজন পেছন থেকে এসে বললেন, কিছু বেশি টাকা দিলে তিনি এক ব্যাগ স্যালাইন দিতে পারবেন। পরে দামাদামি করে ৩০০ টাকা করে দুই ব্যাগ স্যালাইন নিয়ে যান তিনি। শামীমা রহমান জানান, ‘তারপরও তিনি হ্যাপি যে, তার ভাই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে।’ তবে শামীমা রহমান বলছেন, সরকারের সংশ্লিষ্টদের ব্যাপারটি দেখা উচিত।

এ দিকে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম বলছেন, দেশে এখন স্যালাইন সঙ্কট নেই। স্যালাইন উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলো পর্যাপ্ত স্যালাইন উৎপাদন করছে। যদি সঙ্কট হয়ে থাকে তাহলে মজুদদাররা এটা করছে বেশি মুনাফার জন্য। ওষুধ প্রশাসন এ ব্যাপারে খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নেবে।

ওষুধ প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন, চাহিদা বাড়ার কারণে ওষুধ কোম্পানিগুলো শুক্রবার বন্ধের দিনেও স্যালাইন উৎপাদন ও সরবরাহ করছে। এ স্যালাইনের বেশির ভাগই হাসপাতালগুলোতে দেয়া হচ্ছে, যেখানে ডেঙ্গুর চিকিৎসা হয়। ফার্মেসিতেও দেয়া হচ্ছে প্রয়োজন অনুযায়ী।

মেডিসিন বিশেষজ্ঞ মাহমুদুল হাসান জানান, ‘ডিএনএস স্যালাইন সোডিয়াম ক্লোরাইড-সমৃদ্ধ। ডেঙ্গু রোগীর হাইপোগ্লাইসেমিয়া হলে এ স্যালাইনটি দেয়া হয়। ফলে রোগীদের রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে রোগীদের দেহে গ্লুকোজের মাত্রা কমে গেলে এ স্যালাইন দিয়ে গ্লুকোজের মাত্রায় ভারসাম্য আনা হয়।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/773091