২৮ আগস্ট ২০২৩, সোমবার, ৫:৩১

টানা বর্ষণে চট্টগ্রামে আবারও পানিবদ্ধতা পরীক্ষার্থীদের চলাচলে দুর্ভোগ

টানা বর্ষণে চট্টগ্রামে গতকাল রোববার আবারো পানিবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। ছবিতে চট্টগ্রাম মহানগরী ও হাটহাজারির কয়েকটি এলাকার দৃশ্য
চট্টগ্রাম ব্যুরো: টানা বর্ষণে গতকাল রোববার চট্টগ্রামে আবারও ব্যাপক পানিবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া পাহাড় ধসে বাবা মেয়েসহ দুই জন নিহত হয়। পানিবদ্ধতায় জন দুর্ভোগ বেড়ে যায়। রাস্তাঘাটে পানি জমে থাকায় বিশেষ করে পরীক্ষার্থী ও চাকরিজীবীদের চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। জানা গেছে, রোববার সকাল ১০টা থেকে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও পানিবদ্ধতার কারণে এক ঘণ্টা দেরিতে শুরু করার নির্দেশ দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

ষোলশহরে পাহাড় ধসে দুইজনের মৃত্যু: গতকাল রোববার সকাল সাড়ে সাতটার দিকে চট্টগ্রাম মহানগরীর পাঁচলাইশ থানাধীন ষোলশহর এলাকার আইডব্লি¬উ কলোনির ভিতরে পাহাড় ধসে পাহাড়ধসে শিশুকন্যাসহ এক বাবা নিহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন- মো. সোহেল (৩৫) ও তার শিশু কন্যা বিবি জান্নাত (৭ মাস)। স্থানীয়রা জানান, আই ডব্লি¬উ কলোনির পাহাড়টি অন্তত ৫০ ফুট উঁচু। পাহাড়ের নিচে কাঁচা ঘর বানিয়ে নিম্ন আয়ের লোকজন থাকতেন। সকালে অতি বৃষ্টিতে পাহাড় থেকে মাটি ধসে নিচে ঘরের ওপর পড়ে। এতে একই পরিবারের চারজন চাপা পড়েন। স্থানীয় লোকজন ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা তাদের উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। তাদের মধ্যে দুইজনকে হাসপাতালের চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

চমেক হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই নুরুল আলম আশেক জানিয়েছেন, সোহেল ও তার মেয়েকে হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন। এদিকে পাহাড় ধস ঘটনার পর নগরীর বিভিন্ন পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে থাকা বাসিন্দাদের সরিয়ে নিতে মাইকিং করার খবর পাওয়া গেছে।

এদিকে গতকাল রোববার ভোররাতে চট্টগ্রাম মহানগরীতে কয়েকদফা টানা বর্ষণে বিভিন্ন এলাকায় পানিবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এতে রাস্তা ঘাট, দোকানপাট, বাসাবাড়ি পানিতে ডুবে যায়। বেশিরভাগ নিচু এলাকাগুলোর সড়ক ও অলিগলিতে কোমড় থেকে হাঁটু সমান পানি জমেছিল।বিভিন্ন এলাকায় যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। জানাগেছে, গতকাল রোববার বৃষ্টিতে নগরীর চকবাজার, কাতালগঞ্জ, শুলকবহর, বাদুরতলা, শান্তিনগর, রসুলবাগ, ফুলতলা, বউবাজার, রাহাত্তার পুল, কালা মিয়া বাজার, তুলাতলী, ষোলশহর রুবি গেট, মুরাদপুর, বিবিরহাট সুন্নিয়া মাদ্রাসা রোড,বাকলিয়া ডিসি রোড, বহদ্দারহাট, খাজা রোড, ফরিদারপাড়া, ঘাসিয়াপাড়া, খতিবেরহাট, বারইপাড়া, মাইজপাড়া, খরমপাড়া, বাকলিয়া, মিয়া খান নগর, দেওয়ান বাজার, খলিফাপট্টি, কে বি আমান আলী সড়ক, সৈয়দ শাহ সড়ক, চাক্তাই, দুই নম্বর গেট, আল ফালাহ গলি, পুরোনো চান্দগাঁও থানা এলাকা, রিয়াজউদ্দিন বাজার, জুবিলী রোড তিনপোলের মাথা, হালিশহর, সাগরিকা ও আকমল আলী সড়ক এলাকায় ব্যাপক পানিবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এসব এলাকা হাঁটু থেকে কোমর পানিতে তলিয়ে যায়। সকালেও পানি না নামায় বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা ভোগান্তিতে পড়েন। পানিবদ্ধতা ও বৃষ্টির কারণে চট্টগ্রাম বোর্ডের এইচএসসি পরীক্ষা এক ঘন্টা দেরিতে অনুষ্ঠিত হয়।

টানা বর্ষণে চট্টগ্রাম-হাটহাজারী-রাঙ্গামাটি মহাসড়কের নন্দীরহাট ও বড়দিঘীর পাড় এলাকায় সড়ক ডুবে যাওয়ায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে ভোগান্তিতে পড়ে এ পথে যাতায়াতকারীরা। রোববার সকাল থেকে এমন চিত্র দেখা যায়। জানা যায়, মহাসড়কের নন্দীরহাট অংশের এশিয়ান পেপার মিলের সামনে থেকে জগন্নাথ মন্দিরের সামনে পর্যন্ত প্রায় ৫০০ মিটার এলাকা বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে। যান চলাচল করতে না পারায় সড়কের উভয় প্রান্তে দেখা দেয় তীব্র যানজট। অফিসগামী যাত্রীরা পায়ে হেঁটে হাঁটু পানি মাড়িয়ে নৌকা নিয়ে গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে। এদিকে, সড়কে পানি উঠে যাওয়ায় সময়মত পরীক্ষার হলে যেতে ভোগান্তিতে পড়ে পরীক্ষার্থীরা। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবরেটরি কলেজের এক পরীক্ষার্থী জানান, আজ এইচএসসি পরীক্ষা। বৃষ্টি হচ্ছে দেখে একটু তাড়াতাড়ি বের হয়েছিলাম। কিন্তু নন্দীরহাটে এসে আটকে পড়েছি। ফতেয়াবাদ কলেজে আমাদের পরীক্ষার কেন্দ্র। এখানে পানিতেই আটকে আছি সাড়ে ১০টা পর্যন্ত। ওই শিক্ষার্থী আরও জানান, আমাদের কলেজের শিক্ষকরা পরীক্ষাকেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। উনারা ১১টায় পরীক্ষা শুরু করার কথা জানান।

চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা থেকে বৃষ্টিপাত ও পানিবদ্ধতার খবর পাওয়া গেছে। এদিকে টানা বর্ষণের কারণে খাগড়াছড়ির গুইমারার সিন্দুকছড়ি নামক এলাকায় পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে। এতে সিন্দুকছড়ি হয়ে গুইমারা মহালছড়ির সড়ক যোগাযোগ বন্ধ ছিল।তবে এ ধসের ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি। রোববার সকাল ৭টার দিকে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে।

পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, শনিবার রাত ১২টা থেকে রোববার সকাল ৯টা পর্যন্ত আট ঘণ্টায় ৭৬.৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, গত রাত ১২টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত নগরীতে ১৪৪ দশমিক ৬ মিলিমিটার এবং রোববার (২৭ আগস্ট) সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত ৩৪ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আমবাগান আবহাওয়া অফিস। একইসময়ে ৭৬ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস। পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়া পূর্বাভাস কর্মকর্তা মাহমুদুল আলম বলেন, বাংলাদেশের উপর মৌসুমী বায়ু সক্রিয় থাকার কারণে আগামী দুয়েকদিন এমন টানা বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এ সময় কোথাও কোথাও পাহাড় ধসেরও ঝুঁকি রয়েছে।

https://www.dailysangram.info/post/533888