১৩ আগস্ট ২০২৩, রবিবার, ১২:৫৪

কমেনি দুর্ভোগ, খাদ্য ও পানির সংকট

টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি পানির ঢলে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার পর ধীরগতিতে পানি কমতে শুরু করলেও কমেনি দুর্ভোগ। নদ-নদী ও বেড়িবাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে মানুষ আতঙ্কের মধ্যে দিনাতিপাত করছেন। দেখা দিয়েছে খাদ্য ও সুপেয় পানির সংকট। বান্দরবানে সংকট নিরসনে ভ্রাম্যমাণ ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট চালু করা হয়েছে। নাইক্ষ্যংছড়িতে নিখোঁজ রয়েছেন একজন। এছাড়া কৃষিজমি ডুবে যাওয়ায় ফসল নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন কৃষকরা। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

বান্দরবান ও নাইক্ষ্যংছড়ি : স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় বান্দরবান জেলার অধিকাংশ এলাকা প্লাবিত হয়। বন্যায় ময়লা-আবর্জনায় স্বচ্ছ পানির উৎসস্থলগুলো নষ্ট হয়ে যাওয়ায় জেলায় সুপেয় পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। সংকট নিরসনে কয়েকদিন ধরেই গাড়িতে করে বন্যাদুর্গত এলাকাগুলোয় সুপেয় পানি সরবরাহ করে আসছে সেনাবাহিনী। পৌরসভার পক্ষ থেকেও গাড়িতে করে পানি সরবরাহের কাজ চালানো হচ্ছে। বন্যায় জনস্বাস্থ্যের পৌর পানি সরবরাহ ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় পানি সরবরাহ ব্যবস্থা বিকল হয়ে পড়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সংকট নিরসনে ভ্রাম্যমাণ ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট চালু করেছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ।
স্থানীয় ভুক্তভোগী মো. শাহাজালাল ও মেহেদী হাসান বলেন, বন্যা পরবর্তী প্রধান সমস্যায় পরিণত হয়েছে সুপেয় পানি। স্বচ্ছ পানির উৎসস্থলগুলো বন্যায় প্লাবিত হওয়ায় দুর্গত এলাকাগুলোতে বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট তীব্র হয়ে উঠেছে। সেনাবাহিনী, পৌরসভার পক্ষ থেকে সুপেয় পানি দেওয়া হলেও চাহিদার বিপরীতে পর্যাপ্ত নয়। তাই দ্রুত পানি সরবরাহ কেন্দ্র চালুর দাবি জানাচ্ছি।

বিষয়টি নিশ্চিত করে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কনভেনার মোজাম্মেল হক বাহাদুর বলেন, বন্যায় জনস্বাস্থ্যের পৌর পানি সরবরাহ কেন্দ্রটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে বিকল হয়ে পড়েছে। ত্রুটিপূর্ণ মেশিনগুলো ও সংযোগ লাইন মেরামতের মাধ্যমে পানি সরবরাহ ব্যবস্থা দ্রুত চালু করতে আপ্রাণ চেষ্টা চালানো হচ্ছে।

বান্দরবান জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী অনুপম দে বলেন, বন্যায় পৌর পানি সরবরাহ কেন্দ্রে পানি বিশুদ্ধকরণের জন্য মজুত রাখা প্রায় ছয় টন ফিটকিরি, দুই টন ব্লিচিং পাউডার এবং তিনটি উচ্চক্ষমতার মোটরসহ বিভিন্ন যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে গেছে। এতে প্রায় কোটি টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে। বিদ্যুৎ ব্যবস্থা সচল হওয়ায় ত্রুটিগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। আগামী দু-একদিনের মধ্যে পৌর পানি সরবরাহ ব্যবস্থা চালু করা সম্ভব হবে আশা করছি।

নাইক্ষ্যংছড়িতে ডুবে রয়েছে উপজেলার নিচু এলাকাসহ আগাম রবিশস্য বীজতলা। ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উপজেলার বিভিন্ন সড়ক। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে নাইক্ষ্যংছড়ি আলীকদম সড়কের বিভিন্ন আংশে।

উপড়ে গেছে সড়কের করুকং এলাকার রাস্তার গাইডওয়াল, পেলাসাইডিং ও ড্রেন। এছাড়াও নাইক্ষ্যংছড়ি ঘুমধুম সড়কের বিভন্ন অংশে ভাঙন দেখা দিয়েছে। উপজেলার দৌছড়ি ইউনিয়নে পানির স্রোতে নিখোঁজ রয়েছে মেমপই ম্রো নামে এক ব্যক্তি।

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারী ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলম কোম্পানি বলেন, তার ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড করিম্মার ঝিরিতে পাহাড় ধসে একই পরিবারের শিশুসহ ৪ জন আহত হয়েছে। পাহাড় ধসে কয়েকটি বাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া বাইশারী আলিক্ষ্যং সড়ক চাক হেড়ম্যান পাড়া সড়কে কয়েকটি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে।

লোহাগাড়া (চট্টগ্রাম) : জেলা প্রশাসকের নির্দেশনা মোতাবেক উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের নিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভায় জানানো হয়, পানিবন্দি দুর্গত মানুষের জন্য ৫০ টন চাল, ১০০০ প্যাকেট শুকনো খাবার ও তিন লাখ টাকার আর্থিক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি মানুষকে নিরাপদ রাখতে। উপজেলা প্রশাসন থেকে সহযোগিতা করা হচ্ছে। জনপ্রতিনিধিদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

উপজেলার ৯ ইউনিয়নের মধ্যে ৮ ইউনিয়নের চিত্র ভয়াবহ। খালের বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে ঢুকে পড়েছে পানি। পানিবন্দি মানুষের মাঝে খাবার সংকট দেখা দিয়েছে। গ্রামীণ সড়কগুলো ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেছে। টানা বর্ষণে লোহাগাড়ায় বিভিন্ন নদ-নদীতে ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে। বন্যা দেখা দিয়েছে। ফলে এলাকাবাসী দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন বলে সংশ্লিষ্ট মেম্বার-চেয়ারম্যান ও স্থানীয়রা জানিয়েছেন।

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/706299