১২ আগস্ট ২০২৩, শনিবার, ১২:৪৬

ডিম নিয়ে সেই পুরনো খেলা

ফের অস্থির ডিমের বাজার। সস্তা ও সহজলভ্য আমিষের ভরসা এই ডিম কিনতেই এখন হিমশিম খেতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। আগের সকল রেকর্ড ভেঙে এখন খুচরা বাজারে ডজনপ্রতি ফার্মের মুরগির ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায়। সেই হিসাবে এক হালি ডিমের বাজার মূল্য ৬০ টাকা। যা ডিমপ্রতি ১৫ টাকা। গত সপ্তাহেও এক হালি ফার্মের ডিম বিক্রি হয়েছিল ৪৮ থেকে ৫০ টাকায়। গতকাল রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত তালতলা বাজার, বিএনপি বাজার ও কাওরান বাজার ঘুরে দেখা যায় এমন চিত্র। এ ছাড়া প্রতিডজন দেশি মুরগির ডিম বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২১০ টাকায়। হাঁসের ডিম ২৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বাড়ানো হচ্ছে ডিমের দাম।

ডিমের মূল্যবৃদ্ধির জন্য বড় খামারি মালিকদের দায়ী করছে বাংলাদেশ পোল্ট্রি এসোসিয়েশন।
আগারগাঁও তালতলা বাজারে ডিম কিনতে আসা শিক্ষার্থী নাহিন বিন মাহমুদ বলেন, মাছ-মাংস ও সবজির দাম হাতের নাগালে না থাকায় আমিষের একমাত্র উৎস হিসেবে আমরা ডিমকে প্রাধান্য দেই। এই ডিম এখন ৬০ টাকা হালি। এখন তো ডিম খাওয়ারও উপায় নেই। খুচরা বিক্রেতা মো. আনিস বলেন, আমাদের বেশি দামে ডিম কিনতে হচ্ছে। মানুষ তো সেটা বুঝতে চায় না। বড় ব্যবসায়ীরা ডিম বাজারে না ছেড়ে দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।

ক্ষুদ্র খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ পোল্ট্রি এসোসিয়েশনের (বিপিএ) সভাপতি সুমন হাওলাদার মানবজমিনকে বলেন, প্রান্তিক পর্যায়ের খামারিরা ন্যায্যমূল্য না পেয়ে অধিকাংশই মুরগি বিক্রি করে দিয়েছে। যার কারণে বাজারে ডিমের সংকট। এই সংকটের মধ্যে কর্পোরেট গ্রুপ দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। তারা মাত্র ২০ শতাংশ ডিম উৎপাদন করে। অন্যদিকে আমরা ৮০ শতাংশ ডিম উৎপাদন করি। এই সংকট সমাধানে সরকার শুধু কর্পোরেটদের নিয়ে বৈঠক করে। অথচ আমাদের কোনো মতামত নেয়া হয় না। সময় অসময়ে ডিম ও মুরগির দাম বাড়িয়ে দিয়ে তারা লাভবান হলেও প্রান্তিক পর্যায়ের খামারিরা হুমকির মুখে পড়ছে। মাঝে ভোক্তাদের পকেট ফাঁকা হচ্ছে।

শুধু ডিম নয়, সপ্তাহ ব্যবধানে বেড়েছে পিয়াজ, মরিচ, সবজি ও মাছের দামও। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিকেজি কাঁচা পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকা, ভারতীয় পিয়াজ ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি। এসব বাজারে গত সপ্তাহে প্রতি কেজি দেশি পিয়াজ ছিল ৮০ টাকা ও ভারতীয় পিয়াজ ৫০ টাকা। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকায়, যা গত সপ্তাহেও ছিল ২০০ টাকা। দেশি রসুন বিক্রি হচ্ছে ২৪০ টাকা কেজি দরে, ভারতীয় রসুন ২২০ টাকা। আদা প্রতি কেজি ২০০ থেকে ২২০ টাকা।
খুচরা বাজারে অধিকাংশ সবজির দামই আকাশ ছোঁয়া। প্রতি কেজি শিম বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকায়, বরবটি ১০০ টাকা, ঢেঁড়স ৮০ টাকা, টমেটো ২৮০ টাকা, গাজর ১৫০ টাকা ও করলা ৬০ থেকে ৮০ টাকায়। এ ছাড়া প্রতিটি লাউ আকার অনুযায়ী ৭০ থেকে ৮০ টাকায় ও ফুলকপি ৫০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়। আলুর দামে তেমন কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। প্রতি কেজি আলু ৪০ থেকে ৪৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

ভরা মৌসুমে এক কেজি বা তার আশপাশের ওজনের ইলিশ মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৬০০ থেকে ১৮০০ টাকায়। রুই ও কাতলা মাছের কেজি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। এ ছাড়া তেলাপিয়া ও পাঙ্গাশ প্রতি কেজি ২০০ থেকে ২৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বড় চিংড়ির কেজি ৮০০ টাকা, ছোট চিংড়ি বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকায়।

বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি বয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ১৯০ টাকায়। এ ছাড়া পাকিস্তানি মুরগি ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা, দেশি মুরগি ৫০০ থেকে ৫২০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা যায়। এ ছাড়া প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকা এবং খাসির মাংস ১ হাজার টাকায়।

https://mzamin.com/news.php?news=68985