১২ আগস্ট ২০২৩, শনিবার, ১২:৩৬

ঢাকার সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী বেশি মৃত্যুও বেশি

নতুন আক্রান্ত ২০৪৬ মৃত্যু ৯

ঢাকার সরকারি হাসপাতালে যেমন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী বেশি তেমনি মৃত্যুও বেশি। চলতি বছর গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত দেশে মৃত্যু হয়েছে ৩৭৩ জন ডেঙ্গু আক্রান্তের। এর মধ্যে ঢাকায় মৃত্যু হয়েছে ২৮৯ জনের। এই সংখ্যক মৃত্যুর মধ্যে ঢাকার ২০ সরকারি হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে ২১৩ জনের। সরকারি হাসপাতালে যেমন রোগী বেশি তেমনি মৃত্যুর সংখ্যাও বেশি। গতকাল পর্যন্ত ঢাকার ২০ সরকারি হাসপাতালে রোগী ভর্তি হয়েছে ২৩ হাজার ৯১৪ জন। অন্য দিকে গতকাল পর্যন্ত বেসরকারি হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে ৭৬ জনের এবং এ বছরের শুরু থেকে গতকাল পর্যন্ত ঢাকার বেসরকারি হাসপাতালে রোগী ভর্তি ছিল ১৬ হাজার ৮৫০ জন।

এ দিকে গতকাল দেশে এক দিনে দুই হাজার ৪৬ জন ডেঙ্গু রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এবং সারা দেশে মারা গেছেন ৯ জন। ঢাকার সরকারি হাসপাতালে রোগী ভর্তি ও মৃত্যুর সংখ্যা বেশি হওয়ার পেছনের কারণ হিসেবে চিকিৎসকরা বলছেন, সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যয় কম। ফলে বেশি রোগী ভর্তি হচ্ছে। অন্য দিকে ক্রিটিকেল (মারাত্মকভাবে আক্রান্ত) কোনো রোগী বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় না অনাকাক্সিক্ষত কোনো দুর্ঘটনা এড়াতে। অন্য দিকে সরকারি হাসপাতালে সব ধরনের রোগী ভর্তি করা হয়ে থাকে। সে কারণে ঢাকা ছাড়াও দেশের সব সরকারি হাসপাতালের একই অবস্থা। দেশের সব সরকারি হাসপাতালে রোগী বেশি মৃত্যুও বেশি।

ঢাকার সরকারি হাসপাতালের মধ্যে ঢাকায় সবচেয়ে বেশি রোগী ভর্তি করা হয় মুগদা জেনারেল হাসপাতালে। এই হাসপাতালে মোট মৃত্যুর সংখ্যাও বেশি। এ বছরের জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত মুগদা হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর ভর্তি হয়েছিল সাত হাজার ১৯৪ জন এবং এদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৭২ জনের। এরপরই ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে রোগী ভর্তি করা হয়েছে তিন হাজার ৩৭০ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ৬১ জনের। অপর দিকে পুরান ঢাকা মিটফোর্ড হাসপাতালে রোগী ভর্তি হয়েছিল ৩ হাজার ৩২১ জন এবং তাদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ২৮ জনের। এখানে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রায় সমান রোগী ভর্তি হলেও মৃত্যু হয়েছে ঢাকা মেডিক্যালের অর্ধেকেরও কিছুটা বেশি ২৮ জন।

মুগদা হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ডের একজন চিকিৎসক জানান, মিটফোর্ডে হয়তো ভালো ব্যবস্থাপনা করেছে রোগীদের, একই সাথে অন্যান্য হাসপাতালের রোগী ব্যবস্থাপনা একই রকমই। খুব সম্ভবত ক্রিটিক্যাল রোগীরা বেশি থাকায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বেশি মৃত্যু হয়েছে। কারণ সরকারি হাসপাতালে হোক কিংবা বেসরকারি হাসপাতালে হোক, রোগীরা দেরি করে হাসপাতালে আসেন বলেই মৃত্যুর সংখ্যা বেশি। কারণ যারা মারা গেছে, তাদের মধ্যে বেশির ভাগই ডেঙ্গু শক সিনড্রোমে মারা গেছে। শক সিনড্রোম হলে ইন্টারনাল হেমোরেজ (অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ) হয়ে থাকে। এসব রোগীর বেশির ভাগই হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার আগেই অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ নিয়ে আসে। ফলে তাদের বাঁচানো সম্ভব হয় না চিকিৎসকদের সমস্ত প্রচেষ্টা সত্ত্বেও।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জিন্সি অপারেশন সেন্টার অ্যান্ড কনট্রোল বলছে, ঢাকায় সরকারি হাসপাতালের চেয়ে বেসরকারি হাসপাতালে রোগী ভর্তি তিন গুণের কাছাকাছি। বেসরকারি ও সরকারি হাসপাতালের মধ্যে এখন রোগী ভর্তি খুব একটা পার্থক্য নেই। সরকারি হাসপাতালে গতকাল পর্যন্ত ভর্তি রোগী ছিল ২ হাজার ৩৩৫ জন। অন্যদিকে গতকাল পর্যন্ত ৫৬ বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি ডেঙ্গু রোগী ছিল দুই হাজার ৮৬ জন। চিকিৎসকরা বলছেন, সরকারি হাসপাতালে বেশি রোগীর মৃত্যু হলেও মানুষের উচিত সরকারি হাসপাতালেই আসা। কারণ এখানে খুবই স্বল্প খরচে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যাওয়া যায়।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার অ্যান্ড কনট্রোল বলছে, এ বছর এডিস মশাবাহিত এ রোগ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া মানুষের সংখ্যা ইতোমধ্যে ৮০ হাজার ছাড়িয়েছে। যে ৯ জন মারা গেছেন, তাদের ছয়জন ঢাকার, বাকিরা ঢাকার বাইরের। ডেঙ্গুতে কেবল আগস্টের প্রথম ১১ দিনেই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২৮ হাজার ২৪২ জন, মৃত্যু হয়েছে ১২২ জনের।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/769229