১১ আগস্ট ২০২৩, শুক্রবার, ১২:০৩

ডেঙ্গুতে ১ দিনে সর্বোচ্চ আক্রান্ত ২৯৫৯, মৃত্যু ১২

মাস শেষে সংক্রমণ ৭০ হাজার ছাড়াতে পারে

দেশে ডেঙ্গুর সর্বোচ্চ আক্রান্ত দুই হাজার ৯৫৯ জন গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত এর আগের ২৪ ঘণ্টায়। এর আগে আর কখনো ২৪ ঘণ্টায় এত বেশি সংখ্যক মানুষ রোগটিতে আক্রান্ত হয়নি। গতকালের ২৪ ঘণ্টায় এক হাজার ৯৭ জন এবং ঢাকা শহরের বাইরে দেশের বাকি হাসপাতালগুলোতে আক্রান্ত ভর্তি হয় এক হাজার ৮৬২ জন। আক্রান্ত ও ভর্তি রোগীর মধ্যে ঢাকায় ছিল এ বছর ডেঙ্গুতে ইতোমধ্যেই আক্রান্ত ৭৮ হাজার ছাড়িয়েছে। শুধুমাত্র চলতি আগস্টের গত ১০ দিনে ডেঙ্গু আক্রান্ত ২৬ হাজার ১০০ ছাড়িয়েছে। এ ছাড়া চলতি বছর মৃত্যুর দিক থেকেও এর আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে অনেক আগেই।

উল্লেখ্য, এ বছর বাদ দিলে এর আগে বাংলাদেশে ২০১৯ সালে সবচেয়ে বেশি মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে এবং হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন এমন রোগীর সংখ্যা ছিল এক লাখ এক হাজার ৩৫৪ জন। বাংলাদেশে ২০১৯ সালের ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব মূলত এপ্রিল মাসে শুরু হয়েছিল এবং অক্টোবরের মধ্যেই শেষ হয়ে যায়। চলতি বছর হয়তো ডিসেম্বরেও ডেঙ্গু সংক্রমণ থাকতে পারে। কারণ ইতোমধ্যেই ডেঙ্গু জীবাণুবাহী এডিস মশার আচরণগত বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন হয়ে গেছে। এ মশা এখন রাতেও কামড়ায়, আগে কেবল সকালে ও সন্ধ্যার আগে কামড়াতো। আগে কেবল স্বচ্ছ পানিতে এডিস মশার লার্ভা হতো ডিম থেকে, এখন নোংরা পানিতেও ডিম ফোটে লার্ভা হচ্ছে।

সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতিতে চিকিৎসকরা ধারণা করছেন, এ মাসের শেষ দিন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ৭০ হাজার ছাড়াতে পারে। তারা বলছেন, ডেঙ্গু ভাইরাস থেকে মুক্ত থাকতে হলে দেশকে মশামুক্ত করা জরুরি। কিন্তু এত মানুষ মারা গেল এবং এত মানুষ আক্রান্ত হয়েছে রোগটিতে তারপরও ক্ষমতাসীনদের বাগাড়ম্বর ছাড়া দেশবাসীর আর পাওনা কিছু হয়নি। দেশে প্রতিদিন এখন গড়ে ১০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হচ্ছে ডেঙ্গু ভাইরাসে। স্বাস্থ্য অধিদফতর ডেঙ্গু আক্রান্তের যে তথ্য প্রতিদিন দিয়ে থাকে এটা প্রকৃত তথ্য নয়, আংশিক। ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে যারা বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হয়ে থাকে কেবল তাদের তথ্যই দেশবাসীর সামনে উপস্থাপন করা হয়। এর বাইরে অনেকে আছেন যারা হাসপাতালে ভর্তি হন না, এমনিতেই সুস্থ হয়ে যান। আবার অনেকেই কেবল চিকিৎসকের প্রাইভেট চেম্বারে গিয়ে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হচ্ছেন, তাদের তথ্যও এখানে নেই। অবশ্য সরকারের সদিচ্ছারও প্রয়োজন আছে। জন অসন্তোষের ভয়ে সরকার হয়তো চাচ্ছে না ডেঙ্গু সংক্রমণ আরো বেশি বাড়–ক।

এ ব্যাপারে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা: এম মোজাহেরুল হক বলেছেন, ‘ডেঙ্গু আক্রান্তের আরো তথ্য পাওয়া যাবে যদি সরকার ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে তথ্য সংগ্রহ করে। অনেকেই হাসপাতালে ভর্তি হন না কিন্তু ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে ডেঙ্গু টেস্ট করিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে থাকেন এবং সুস্থ হয়ে যাচ্ছেন। এদের তথ্যগুলো স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যের সাথে যোগ করলে দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা আরো বাড়বে।’

এদিকে বেসরকারি পর‌্যায়ে ডেঙ্গু টেস্টের জন্য কীটের সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। প্রতিদিন বেসরকারিভাবে অনেক মানুষ ডেঙ্গু টেস্ট করিয়ে থাকে যদিও সেখানে সরকারি হাসপাতাল থেকে দ্বিগুণের চেয়ে বেশি খরচ হয়ে থাকে। তারপরও বেসরকারি পর‌্যায়ে হাজার হাজার মানুষ টেস্ট করাচ্ছেন। কিটের সঙ্কট অব্যাহত থাকলে বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে দেখা দেবে অরাজকতা।

গতকাল দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে মোট ৯ হাজার ৭৯০ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন আছেন। ঢাকার সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে আছেন বর্তমানে চার হাজার ৪৬০ জন এবং অন্যান্য বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে পাঁচ হাজার ৩৩০ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছেন। চলতি বছর সারা দেশে ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ৩৬৪ জনের। এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে গতকাল পর্যন্ত ৭৮ হাজার ২৮ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন চিকিৎসার্থে। এর মধ্যে ঢাকায় ৩৯ হাজার ৯১১ জন এবং ঢাকার বাইরে চিকিৎসা নিয়েছেন ৩৮ হাজার ১১৭ জন। আক্রান্তদের মধ্যে হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৬৭ হাজার ৮৭৪ জন। ঢাকায় ৩৫ হাজার ১৬৮ এবং ঢাকার বাইরে ৩২ হাজার ৭০৬ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/768948