১১ আগস্ট ২০২৩, শুক্রবার, ১২:০২

উজানের ঢল ও ভারীবর্ষণে তিস্তার পানি বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই

উজানের ঢল ও ভারীবর্ষণে পানির প্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় তিস্তা নদীর ডালিয়া পয়েন্টে পানি বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। ফলে নীলফামারীর তিস্তাপাড়ে আবারও বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে পানি আরও বেড়ে বিপৎসীমা অতিক্রমের আশঙ্কা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। আগামীকাল শনিবার থেকে বৃষ্টির তীব্রতা আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। চট্টগ্রাম ও বান্দরবান জেলার নি¤œাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তবে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নদ-নদীর পানি সময়বিশেষে দ্রুত বাড়তে পারে। বৃহস্পতিবার উজানের ঢল ও ভারীবর্ষণে পানির প্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় তিস্তা নদীর ডালিয়া পয়েন্টে পানি বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। ফলে নীলফামারীর তিস্তাপাড়ে আবারও বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক সরদার উদয় রায়হান বলেছেন, ‘আগামী দুইদিন চট্টগ্রাম অঞ্চলে ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস নেই, নদীর পানিও কমতে শুরু করেছে। আমরা আশা করছি, দু’তিনদিনের মধ্যেই বন্যার পানি অনেক নেমে যাবে। এবার শ্রাবণের শেষে এসে ভারি বর্ষণকে বর্ষার ‘পরিপূর্ণ রূপ’ হিসেবে দেখছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। তার মধ্যে বান্দরবানের বৃষ্টি ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি, যাতে তলিয়ে যায় এ জেলা শহর। নয় দিনে এ জেলায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৬৩ মিলিমিটার। বৃহস্পতিবার আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে বলা হয়, রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ঢাকা ও খুলনা বিভাগের কিছু জায়গায় হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।

এ ছাড়া বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় মাঝারি থেকে ভারী বা অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, মৌসুমি বায়ুর অক্ষ ভারতের পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ থেকে বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর মোটামুটি সক্রিয়।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সব প্রধান নদীর পানি বাড়ছে। আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এতে এই সময়ে এ অঞ্চলের সুরমা, কুশিয়ারা, মনু, খোয়াই, সারি, গোয়াইন, ঝালুখালি, ভোপাই-কংস, সোমেশ্বরী ও যাদুকাটা নদ-নদীর পানি সময়বিশেষে দ্রুত বাড়তে পারে। ব্রহ্মপুত্র, যমুনা ও ভারতের গঙ্গা নদীর পানিও বাড়ছে, যা আরও তিন দিন বাড়তে থাকবে বলেও জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র।

এদিকে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার নদীপাড়ের নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে বেশ কয়েকটি চরের বাসিন্দারা। ডুবে গেছে বোরো ফসলের খেত। চরাঞ্চলের কিছু রাস্তাঘাট ডুবে যাওয়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

উপজেলার কিসামত চরের বাসিন্দা আরিফুল ইসলাম বলেন, নদীতে পানি বাড়লেই চরাঞ্চলের মানুষ বন্দী হয়ে পড়ে। রাত থেকে পানি বাড়ছে তিস্তাপাড়ে। বন্যার আশঙ্কা করছি। টেপাখড়িবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ময়নুল হক বলেন, পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তিস্তাপাড়ের মানুষ বন্যার আশঙ্কায় সতর্কাবস্থায় রয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) তিস্তা ব্যারেজ ডালিয়া শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী আসফা উদ দৌলা বলেন, উজানের ঢলে আর বর্ষণে তিস্তার পানির প্রবাহ বেড়েছে। সবগুলো জলকপাট খুলে পানির প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। বিপৎসীমা অতিক্রম না করলেও ছুঁই ছুঁই করছে। তবে আপাতত বন্যার কোনো আশঙ্কা নেই।

https://www.dailysangram.com/post/532381