১ আগস্ট ২০২৩, মঙ্গলবার, ৪:৫৪

জ্বালানিসংকট : তীব্র গরমে বাড়ছে লোডশেডিং

দাবদাহ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে লোডশেডিং। এখন দেশে দুই হাজার মেগাওয়াটের বেশি লোডশেডিং হচ্ছে। রাজধানী ঢাকায় লোডশেডিং দেখা না গেলেও বাইরের জেলা শহর ও গ্রামাঞ্চলে ঘন ঘন লোডশেডিং হচ্ছে। অসহনীয় গরমের মধ্যে দিনের বেলা ও রাতে লোডশেডিংয়ে ভোগান্তিতে পড়ছে ঢাকার বাইরের মানুষ।

কলকারখানার উৎপাদনও কমে গেছে। এই তীব্র গরম না কমলে লোডশেডিং পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, সারা দেশে আবার তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় বিদ্যুতের চাহিদাও অনেক বেড়ে গেছে। জ্বালানির সংকটের কারণে চাহিদা অনুযায়ী বাড়তি বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারছে না বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)।
এতে দেশে এখন দুই হাজার মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুতের ঘাটতি তৈরি হয়েছে। এই ঘাটতি পূরণে ঢাকার বাইরের জেলা শহর ও গ্রামাঞ্চলে লোডশেডিং করা হচ্ছে।

এদিকে গত রবিবার ভোররাত থেকে কয়লাসংকটে বন্ধ রয়েছে রামপাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির উৎপাদন। কেন্দ্রটির একটি ইউনিট থেকে ৫০০ মেগাওয়াটের মতো বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হচ্ছিল।

কেন্দ্রটি থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় লোডশেডিং পরিস্থিতি আরো বেড়েছে।
বিপিডিবির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গতকাল বলেন, ‘এখন কয়লা, গ্যাস, ডিজেল ও ফার্নেস অয়েলের সংকট রয়েছে, যার কারণে আমরা চাইলেই বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়াতে পারছি না।’

বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সঞ্চালনের একমাত্র রাষ্ট্রীয় সংস্থা পাওয়ার গ্রিড কম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি)। প্রতিষ্ঠানটির সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সকাল ১০টার দিকে লোডশেডিং ছিল এক হাজার ৫৫৫ মেগাওয়াট। তখন দেশে চাহিদা ছিল ১৩ হাজার ৯০০ মেগাওয়াট, উৎপাদন হয়েছিল ১২ হাজার ৩৪৫ মেগাওয়াট।

গত রবিবার রাত ১টার সময় দেশে লোডশেডিং ছিল এক হাজার ৮০১ মেগাওয়াট। তখন বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১৪ হাজার ৭০০ মেগাওয়াট, উৎপাদন হয় ১২ হাজার ৮৯৯ মেগাওয়াট।

গতকাল কালের কণ্ঠ’র প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য ও লোডশেডিংয়ের সার্বিক চিত্র বলছে, বর্তমানে চাহিদা ও লোডশেডিং পিজিসিবির এই তথ্যের চেয়ে প্রায় এক হাজার মেগাওয়াট বেশি। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, পিজিসিবি মূলত উৎপাদনের সঙ্গে সমন্বয় রেখে বিদ্যুতের চাহিদা তৈরি করে প্রকাশ করে, যার কারণে বাস্তবতার সঙ্গে তাদের তথ্যে গরমিল রয়েছে।

ঢাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) বিকাশ দেওয়ান গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের বিতরণ এলাকায় কোনো লোডশেডিং নেই। আমরা আমাদের বিদ্যুৎ চাহিদার পুরোটাই পাচ্ছি। আজ (গতকাল) সন্ধ্যায় আমাদের চাহিদা ছিল এক হাজার ৮৯৮ মেগাওয়াট, চাহিদার পুরোটাই সরবরাহ করা হয়েছে।’

দেশের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎ বিতরণ কম্পানি পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি)। প্রতিষ্ঠানটি গ্রামাঞ্চলে সবচেয়ে বেশি বিদ্যুৎ বিতরণ করে। গতকাল সন্ধ্যায় বিতরণ কম্পানিটির লোডশেডিং ছিল প্রায় দেড় হাজার মেগাওয়াট।

আরইবির এক পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘প্রচণ্ড গরমের কারণে এসির ব্যবহার অত্যধিক বেড়ে গেছে। ফলে বিদ্যুতের চাহিদাও আগের চেয়ে বেড়েছে। কিন্তু বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানো হচ্ছে না, যার কারণে আমরা চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ পাচ্ছি না। তাই লোডশেডিং বাড়িয়ে সরবরাহ করা হচ্ছে।’

নীলফামারী
নীলফামারীতে দিনের বেলা ও রাতে ফের বেড়েছে বিদ্যুতের লোডশেডিং। তীব্র গরমের মধ্যে ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে মানুষজন। গতকাল দুপুরে জেলা সদরের বাস টার্মিনাল এলাকার গ্রাহক মোকছেদুল ইসলাম বলেন, এখন রাতে চার-পাঁচবার লোডশেডিং হচ্ছে। অসহনীয় গরমের কারণে ঘরে ঘুমাতে কষ্ট হচ্ছে। দিনেও একই হারে লোডশেডিং হওয়ায় বিভিন্ন কাজকর্মে ব্যাঘাত ঘটছে।

জেলা শহরের নুহা অটো রাইস মিলের মালিক ও জেলা চালকল মালিক সমিতির সহসভাপতি সৈয়দ রাকিব হাসান মিশুক বলেন, ‘ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে আমাদের উৎপাদন কমেছে ৪০ শতাংশ। উৎপাদন কমলেও পুরো বেতন দিতে হচ্ছে শ্রমিকদের। এতে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।’

ডোমার নেসকো কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী নওশাদ আলম জানান, চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম পাওয়ায় লোডশেডিং দিয়ে চালাতে হচ্ছে। সরবরাহ বাড়লে সমস্যার সমাধান হবে।

মৌলভীবাজার
লোডশেডিংয়ে চা উৎপাদন ও প্রক্রিয়াকরণ ব্যাহত হচ্ছে জেলার বেশির ভাগ চা-বাগানে। চা উৎপাদন ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ কম হচ্ছে। বিদ্যুৎ বিতরণ কম্পানি জানিয়েছে, চাহিদার অর্ধেকও বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে না। বৃষ্টি হলে লোডশেডিং কমে আসবে। রাঙাটিলা গ্রামের বাসিন্দা জাকারিয়া হোসেন এবং পীরেরবাজার এলাকার বাসিন্দা রহমান খান বলেন, বিদ্যুৎ চলে গেলে আর আসার খবর থাকে না। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১২ ঘণ্টাই এখন বিদ্যুৎ থাকে না।

মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার নজরুল ইসলাম মোল্লা বলেন, ‘জেলায় ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা অথচ পাচ্ছি ৬০ থেকে ৭০ মেগাওয়াটের মতো। আবার অনেক সময় ৬০ মেগাওয়াটও পাচ্ছি না।’

https://www.kalerkantho.com/online/national/2023/08/01/1304162