১ আগস্ট ২০২৩, মঙ্গলবার, ৪:৪৫

ডেঙ্গুর মৌসুম আজ থেকে শুরু বাড়বে এডিসের বিস্তার

গতকাল ভর্তি ২৬৯৪ মৃত্যু ৪

আজ মঙ্গলবার থেকে বাংলাদেশে ডেঙ্গুর মৌসুম শুরু। এ সময়ে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব অন্যান্য যেকোনো মাসের চেয়ে অনেক বেশি হয়। কীটতাত্ত্বিকরা আগস্ট ও সেপ্টেম্বর এ দুই মাসকে ডেঙ্গুর মৌসুম হিসেবে ধরে থাকেন। এ সময়ের বৃষ্টি, পরিবেশের তাপমাত্রা এবং এডিস মশার প্রজনন বিবেচনায় ঠিক এই দুই মাসকে ডেঙ্গুর মৌসুম হিসেবে ধরেন তারা। ডেঙ্গু মৌসুম শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত দেশে মোট ৫১ হাজার ৮৩২ জন মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে এবং মৃত্যু হয়েছে ২৫১ জনের। অপর দিকে মৌসুম শুরুর আগে কেবল জুলাই মাসেই দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছে ৪৩ হাজার ৮৫৪ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ২০৪ জনের। এ ছাড়া গতকাল জুলাই মাসের শেষ দিনে দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে দুই হাজার ৬৯৪ জন এবং মৃত্যু হয়েছে চারজনের।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গু জীবাণুবাহী এডিস মশার বিস্তার ঘটার জন্য যেমন সিটি করপোরেশনের অবহেলা দায়ী, একই সাথে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা বৃদ্ধিও দায়ী। বর্তমানে দেশে যে তাপমাত্রা বিরাজ করছে তা এডিস মশার ডিম ফুটিয়ে লার্ভা হওয়ার উপযুক্ত। এই তাপমাত্রাতে এডিস মশার বংশ সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। একটা সময় ছিল বাংলাদেশে এডিস মশার অস্তিত্ব ছিল না। ১৯৬৪ সালে ঢাকা ফিভার হিসেবে রোগটিকে চিহ্নিত করা হলেও এরপর ২০০০ সালের আগে আর এডিস মশার অস্তিত্ব ছিল না বললেই চলে। ২০০০ সালে এসে হঠাৎ করে দেশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব শুরু হয় এবং এ রোগটিকে ডেঙ্গু হিসেবে শনাক্ত করা হয়।

এ ব্যাপারে জনস্বাস্থ্যবিদ ডা: আহমদ পারভেজ জাবীন নয়া দিগন্তকে বলেন, ‘বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের ছোঁয়া বাংলাদেশেও লেগেছে ভালোভাবেই। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশে পরিবেশে যে তাপমাত্রা বেড়েছে সে কারণে বাংলাদেশ এডিস মশার বংশবিস্তারে আদর্শ স্থানে পরিণত হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘বর্তমানে এডিসের দুইটা ধরনের (এডিস অ্যালবুপিকটাস ও এডিস ইজিপ্টাই) বিস্তারের কারণে দেশে ডেঙ্গু রোগের বিস্তার ঘটেছে। এই দুই ধরনের মশার বেঁচে থাকা এবং বংশ বিস্তারের জন্য ২৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা লাগে। বাংলাদেশে গত জুলাই মাসে তাপমাত্রা এই রেঞ্জের মধ্যেই ছিল বলে মশার ডিম ফুটে লার্ভা হয়ে প্রচুর পরিমাণে পুর্ণাঙ্গ মশা হতে পেরেছে। অন্য দিকে মশার ডিম ফোটার জন্য বাতাসে একটু বেশি আর্দ্রতা থাকা প্রয়োজন; সেটিও বাংলাদেশে রয়েছে। ফলে আদর্শ পরিবেশ থাকায় মশার বংশ বিস্তারে কোনো ধরনের বাধাপ্রাপ্ত হয়নি। এই পরিবেশ আগস্ট ও সেপ্টেম্বরেও পুরোপুরি থাকে বলে এই দুই মাসকে এডিস মশার মৌসুম বলা হয়ে থাকে। অন্য দিকে শীতে তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতা কমে যায় বলে এডিসের বংশ বিস্তার কমে যায় এবং ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবও কমে আসে। কারণ শীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রাই ২০ ডিগ্রির কাছাকাছি থাকে।

ডা: আহমদ পারভেজ জাবীন আরো বলেন, ‘এডিস মশার বংশবিস্তারের আদর্শ পরিবেশ থাকলেও সঠিকভাবে পরিকল্পিত উপায়ে ফগিং ও লার্ভিসাইডিং করতে পারলে মশার ঘনত্ব কমিয়ে আনা সম্ভব। এটা করা হলে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবও কমে যেতে বাধ্য। শুধু প্রয়োজন আন্তরিকতার সাথে মশক নিধন কর্মসূচি জোরদার করা।’

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রসঙ্গে মেডিসিনের ডাক্তার মোশাররফ হোসেন বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের পরিবেশ একই ধরনের। পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতায় ডেঙ্গু খুব একটা নেই। একই ধরনের পরিবেশ থাকার পরও সেখানে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছে। কারণ সেখানে মশক নিধন অভিযান বেশ জোরদার। তারা মশার নিধনে যে কীটনাশক ব্যবহার করে তা খুবই কার্যকর এবং সেখানে কীটনাশকে ভেজাল মেশানোর কোনো অভিযোগ শোনা যায় না। অপর দিকে বাংলাদেশে কীটনাশকে ভেজাল মেশানোর অভিযোগ প্রায়ই শোনা যায়। ফলে ঢাকা এডিস মশার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার অ্যান্ড কন্ট্র্রোল রুমের তথ্য বলছে, গতকাল পর্যন্ত দেশের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ৯ হাজার ৩৮৬ জন ডেঙ্গু চিকিৎসাধীন ছিল। গতকাল সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে যে দুই হাজার ৬৯৪ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে; এর মধ্যে ঢাকায় ভর্তি হয়েছে এক হাজার ১৬৮ জন এবং ঢাকার বাইরে সারা দেশে এক হাজার ৫২৬ জন ভর্তি হয়েছে। ঢাকার ২০ সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৬৪৫ জন এবং ৫৬ বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৫২৩ জন। ঢাকার কয়েকটি সরকারি হাসপাতালেই সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু রোগী রয়েছে। এর মধ্যে গতকালও সবচেয়ে বেশি ১২০ জন ভর্তি হয়েছে মুগদা হাসপাতালে। এর বাইরে পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালে ১১৩ জন, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৬৫ জন, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ৫৮ জন, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ৫২ জন, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ৪২ জন এবং মহাখালীর ডিএনসিসি হাসপাতালে ৮৮ জন ভর্তি হয়েছে। এ ছাড়া ঢাকার অন্যান্য হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা ৩০-এর কম। এ ছাড়া ঢাকার বাইরে ইতোমধ্যে সম্মিলিতভাবে ডেঙ্গুর রোগী বাড়ছে।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/766431