৩১ জুলাই ২০২৩, সোমবার, ১১:৩৩

মাতুয়াইলে পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষ

যানজট কেন, দেখতে সামনে গিয়ে গ্রেপ্তার লেগুনাচালকের সহকারী: চালক

ঢাকার মাতুইয়ালে পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতা–কর্মীদের সংঘর্ষের মামলায় গ্রেপ্তার ১৮ জনকে আদালতে হাজির করেছে পুলিশ। তাঁদের মধ্যে একজন জাহিদ হাসান (২০) পেশায় লেগুনাচালকের সহকারী বলে তাঁর পরিবারের দাবি।

রোববার বিকেলে যখন জাহিদসহ ওই মামলায় গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে হাজির করা হয়, তখন তাঁর মা–বাবা আদালত প্রাঙ্গণে উপস্থিত ছিলেন। ছেলের জন্য কাঁদতে কাঁদতে জাহিদের মা আয়েশা বেগম বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। রাজনীতি বুঝি না। আমার স্বামী ডাব বিক্রি করে সংসার চালায়। আর গরিবের সংসারে ছেলেরা কাজ করে যে টাকা পায়, তা দিয়ে সংসার চালাই। সকালে কাজে বেরিয়ে ছেলে এখন মামলার আসামি।’

জাহিদের বাবা সিরাজুল ইসলাম জানান, তিন ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকার ডেমরার সাদ্দাম মার্কেট এলাকায় থাকেন। তিনি ডাব বিক্রি করেন। কিন্তু সেই টাকা দিয়ে সংসার চলে না। তাই বড় ছেলে জাহিদকে লেগুনার সহকারী হিসেবে কাজে দেন। আর মেজ ছেলে রিয়াদ হাসান (১৭) এলাকায় একটি বৈদ্যুতিক মিস্ত্রির দোকানে কাজ করে। ছোট ছেলে জুনায়েদ হাসান (১১) একটি মাদ্রাসায় পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে।

সিরাজুল ও আয়েশা বেগম দম্পতি জানান, তাঁদের ছেলে জাহিদ শনিবার বেলা ১১টার দিকে বাসা থেকে বের হয়ে যাত্রাবাড়ীতে আসেন। পরে লেগুনায় চালকের সহকারীর কাজ শুরু করেন। লেগুনাটি যাত্রী নিয়ে যখন রায়েরবাগ পার হয়ে মাতুয়াইল শিশু মাতৃ ইনস্টিটিউটের দিকে যেতে থাকে, তখন যানজটে আটকা পড়ে। এরপর ঝামেলার মধ্যে পড়ে তিনি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে।
সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলনে থাকা বিএনপি শনিবার ঢাকার প্রবেশপথগুলোতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। এর অংশ হিসেবে ওই দিন সকালে বিএনপির নেতা–কর্মীরা মাতুইয়ালের শিশু মাতৃ ইনস্টিটিউটের সামনে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেন। পরে পুলিশের সঙ্গে তাঁদের সংঘর্ষ হয়। এ সময় ওই এলাকায় তিনটি বাসে আগুন দেওয়া হয়। এ ঘটনায় তিনটি মামলা হয়েছে, যার একটিতে জাহিদ হাসান এজাহারভুক্ত আসামি।

জাহিদের বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছিল লেগুনার চালক শাহীন মোল্লার কাছে। তিনি রোববার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি যাত্রাবাড়ী থেকে চিটাগাং রোডে লেগুনা চালাই। গতকাল সকালে যাত্রাবাড়ী থেকে যাত্রী নিয়ে রওনা হয়ে রায়েরবাগ পার হওয়ার পর জ্যাম (যানজট) দেখি। তখন আমার হেলপার (চালকের সহকারী) জাহিদকে সামনে কী হয়েছে, তা দেখতে বলি। জাহিদ যাওয়ার পর তার আর কোনো খবর নেই। পরে আমি ফোন দিই। তখন জাহিদ বলে, (ওস্তাদ) মাতুয়াইলে অনেক গ্যাঞ্জাম (ঝামেলা)। পুলিশ টিয়ার গ্যাস মারছে। এরপর জাহিদের মোবাইল বন্ধ পাই।’

শাহীন মোল্লা জানালেন, জাহিদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারায় তিনি মূল সড়ক ছেড়ে হাশেম রোড হয়ে ডেমরার ডগাই দিয়ে চিটাগাং রোডে (কাঁচপুর ব্রিজের আগে) যান। পরে জাহিদের খোঁজ না পাওয়ার বিষয়টি তাঁর মা–বাবাকে জানান।
জাহিদের মা আয়েশা বেগম বলেন, কোথাও ছেলের খোঁজ না পেয়ে তিনি, তাঁর স্বামী কদমতলী ও যাত্রাবাড়ী থানায় যান। কিন্তু রাত ১০টা পর্যন্ত ছেলেকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে, তা জানতে পারেননি। রাত ১১টার সময় যাত্রাবাড়ী থানা থেকে ফোন দিয়ে তাঁকে জানানো হয়, জাহিদ মাতুয়াইলে পুলিশ হত্যাচেষ্টার মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে থানা হেফাজতে আছে।

ঢাকার আদালত প্রাঙ্গণে জাহিদের বাবা সিরাজুল ইসলামছবি: দীপু মালাকার
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার পর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের আসমা আলী সিএনজি পাম্পের সামনে দেশি অস্ত্রশস্ত্র, ইটপাটকেল, বাঁশের লাঠি ও ককটেল নিয়ে রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ করে দেন আসামিরা। বাসেও আগুন ধরিয়ে দেন তাঁরা।

এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ১০৯ জনের নাম উল্লেখ করে যাত্রাবাড়ী থানায় এ মামলা হয়। আসামির তালিকায় জাহিদ হাসানের নাম ১৮ নম্বরে রয়েছে। এজাহারে আসামিদের বেশ কয়েকজনের বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের পদ উল্লেখ করা হয়েছে। তবে জাহিদের বিষয়ে কিছু লেখা হয়নি।

পুলিশ আসামিদের আদালতে হাজির করে সবার সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করে। উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে আদালত জাহিদসহ ১৬ জনের এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

জাহিদের বিষয়ে জানতে চাইলে যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মফিজুল আলম রোববার রাতে টেলিফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘জাহিদ হাসানকে আমরা ঘটনাস্থল থেকে গ্রেপ্তার করেছি। সুনির্দিষ্ট অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। মামলার তদন্ত চলমান। তবে জাহিদ হাসান পেশায় লেগুনাচালকের সহকারী কি না, সেই বিষয়টি জানা নেই।’

জাহিদের আইনজীবী ফয়সাল আহমেদ লিখিতভাবে আদালতকে বলেছেন, তাঁর মক্কেল পেশায় লেগুনাচালকের সহকারী। তিনি মাতুয়াইলের ঘটনার সঙ্গে প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে জড়িত ছিলেন না। তিনি পরিস্থিতির শিকার।

জানতে চাইলে ফয়সাল আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, জাহিদের মা ও বাবার সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছেন, জাহিদ বিএনপি কিংবা এর কোনো অঙ্গসংগঠনের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন। তিনি আদালতের কাছ থেকে ন্যায়বিচার পাবেন বলে আশা করছেন।
জাহিদের মা–বাবাও আদালতের কাছে ন্যায়বিচার চেয়েছেন। বাবা সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘ডাব বিক্রি করে সংসার চালাই। গতকালের ঘটনার পর থেকে থানা-পুলিশ আর উকিলের চেম্বারে ঘুরছি। আমরা ন্যায়বিচার চাই।’

https://www.prothomalo.com/bangladesh/0pomqeje74