৩১ জুলাই ২০২৩, সোমবার, ১১:৩০

জুলাইয়ে ডেঙ্গুতে মৃত্যু দুই শ’

- হাসপাতালে ভর্তি ৪১,১৬০

জুলাই মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা দুইশ’ ছাড়িয়েছে। এর আগে এক মাসে দেশে ডেঙ্গু রোগে এতো অধিক সংখ্যক মৃত্যু আর কখনো ঘটেনি। এছাড়া এ মাসে হাসপাতালে ভর্তি অতিক্রম করেছে ৪১ হাজারের ঘর। গতকাল সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে মৃত্যু হয়েছে ৮ জনের। এ সময়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ২ হাজার ৭৩১ জন।

২০০০ সালে বাংলাদেশে ডেঙ্গু সংক্রমণ শুরুর পর থেকে এ বছর শুধু এক মাসেই মৃত্যুতে ২০১৯ সালকে ছাড়িয়ে গেল। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালে ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছিল ১৭৯ জনের। স্বাস্থ্য অধিদফতরের গতকাল রোববারের তথ্য অনুসারে, চলতি জুলাই মাসের গত ৩০ দিনে ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ২০০ জনের। গত কয়েক দিন থেকে দেশে দৈনিক ৮ থেকে ১০ জন করে মৃত্যু হচ্ছে। এ থেকে আজ আরো কমপক্ষে ৮ জনের মৃত্যু হলে জুলাই মাসে ডেঙ্গুর মৃত্যু ২০৮ জন হতে পারে। এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদফতরই আশঙ্কা প্রকাশ করেছে যে, ডেঙ্গুর সংক্রমণও ২০১৯ সালকে ছাড়িয়ে যেতে পারে আগামী আগস্ট মাসেই।

কয়েকটি হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ডে কর্মরত চিকিৎসকরা (সঙ্গত কারণেই তারা নাম প্রকাশ করতে চাননি) বলছেন, ‘ডেঙ্গু সংক্রমণ হয়তো ঠেকানো যাবে না কিন্তু আরো বেশি তৎপর হলে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা কমিয়ে আনা সম্ভব। তারা বলছেন, ডেঙ্গুতে শক সিনড্রোমে বেশি রোগী মারা যাচ্ছে। কারণ রোগীরা হাসপাতালে আসছেই দেরি করে। এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদফতর হাসপাতালের সাধারণ বেড ও আইসিইউ-সিসিইউ বেড বাড়িয়ে রোগীদের আরো বেশি সেবা দিতে পারে। আমরা কোভিডের সময় খুব দ্রুততার সাথে হাসপাতালে সাধারণ ও আইসিইউ বেড বাড়িয়েছিলাম। ডেঙ্গু এখন মহামারীর আকারেই ছড়িয়ে পড়েছে। অতএব দেশে ‘ডেঙ্গু জরুরি অবস্থা’ ঘোষণা করে হাসপাতালে ডেঙ্গু ছাড়া সাধারণ অন্য রোগের চিকিৎসা কিছুটা কমিয়ে ডেঙ্গুর চিকিৎসাকে অগ্রাধিকার দিতে পারে সরকার। ডেঙ্গুর জন্য আরো বেড বাড়িয়ে সব ধরনের ডেঙ্গু আক্রান্তকে ভর্তি করতে পারলে মৃত্যু কমে যাবে। কারণ হাসপাতালে চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থাকলে রোগের অবস্থা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হবে। কারণ ডেঙ্গু চিকিৎসা এখন কঠিন কিছু নয়, সব ডাক্তাররাই এ চিকিৎসাটি দিতে পারেন। এ ব্যবস্থাটি নিলে রোগী মৃত্যু যেমন কমে যাবে তেমনি রোগের অবস্থাও খারাপের দিকে যাবে না।’ ডেঙ্গু ওয়ার্ডে কর্মরত চিকিৎসকরা বলছেন, ‘এ কাজটি করা হলে সরকারের খুব বেশি খরচ বাড়বে না। নতুন কিছু বেড বাড়ালে ও সরকারি হাসপাতালে রোগীদের রেখে চিকিৎসা দিলে সরকারের বাড়তি কয়েক কোটি টাকা খরচ বাড়বে কিন্তু চিকিৎসা করতে না পেরে মৃত্যু হচ্ছে এই বদনামটি থেকে সরকার বেঁচে যাবে।’

চলতি বছর ডেঙ্গুর মৃত্যু ও সংক্রমণ নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, ‘এবার ডেঙ্গু সংক্রমণ ২০১৯ সালকেও ছাড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা: এম মোজাহেরুল হক বলেন, ‘ডেঙ্গু মৌসুম শুরু হয় আগস্ট থেকে। এবার জুলাই মাসেই যেভাবে ডেঙ্গু সংক্রমণ বেড়েছে তাতে আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে যে এর চেয়ে বেশি বাড়বে তা ধরে নেয়া যায়। এমতাবস্থায় সরকার এ বিষয়টিতে আরো বেশি গুরুত্ব দিলে জনগণের উপকার হবে। ডেঙ্গু জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে সামনের দিনগুলোতে মশক নিধনে গুরুত্ব দেয়ার পাশাপাশি হাসপাতালে আরো অধিক বেড ও চিকিৎসক বাড়িয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারে। সবচেয়ে ভালো হয়, মশক নিধনে বেশি গুরুত্ব দিলে। কারণ চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধ ব্যবস্থা উত্তম। অতীতে কি হয়েছে কার সফলতা, কার ব্যর্থতা সেদিকে না তাকিয়ে বিষয়টিতে অধিক গুরুত্ব দিলে মানুষ উপকৃত হবে।

গতকাল রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় কেবল ঢাকায় এক হাজার ১৮৪ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে এবং ঢাকার বাইরে ভর্তি হয়েছে এক হাজার ৫৪৭ জন। একই সময়ে ঢাকায় মারা গেছে ৪ জন এবং ঢাকার বাইরে ৪ জন। দেশে চলতি বছর ৪৯ হাজার ১৩৮ জন মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে এবং মৃত্যু হয়েছে ২৪৭ জনের।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/766186