২৯ জুলাই ২০২৩, শনিবার, ৮:৪৪

রংপুরের শ্যামপুর চিনিকল

উৎপাদন বন্ধে বাড়ছে দেনা দুঃসহ জীবন কর্মীদের

উৎপাদন বন্ধ থাকায় দেনার অঙ্ক বেড়েই চলেছে রংপুরের শ্যামপুর চিনিকলের। লোকসান কমিয়ে আনাসহ কর্মীদের বিকল্প কর্মসংস্থানের প্রস্তাব বন্দি লালফিতায়। পাওনা টাকা না পেয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সন্ধ্যা হলেই মিল এলাকায় ভূতুড়ে পরিবেশ। অযত্ন-অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে মূল্যবান যন্ত্র। রোদ-বৃষ্টিতে মরিচা ধরে অকেজো হচ্ছে ট্রাক্টর।
মিল ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ বলছে, মিল এলাকায় আখ উৎপাদন কমে যাওয়া ও আধুনিক যন্ত্রপাতির অভাবে লোকসানের বোঝা বাড়ছে। তবে এমন দাবি মানতে নারাজ শ্রমিক-কর্মচারী ও আখচাষিরা। তারা বলছেন, অব্যবস্থাপনা, অদক্ষ জনবল ও কর্মকর্তাদের দুর্নীতিতে চিনিকলটির বেহাল দশা। চিনিকল কর্মচারী ইউনিয়ন ও আখচাষি কল্যাণ সমিতি আন্দোলন করেও কাজ হয়নি।

১৯৬৪ সালে রংপুরের বদরগঞ্জের শ্যামপুর এলাকায় প্রায় ১৪৫ একর জমিতে নির্মিত হয় চিনিকলটি। আখ মাড়াই শুরু হয় ১৯৬৭ সালে। মিলটির দৈনিক আখ মাড়াইয়ের সক্ষমতা ১ হাজার ১৬ টন; বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা ১০ হাজার ১৬১ টন। শুরুতে লাভের মুখ দেখলেও নানা অব্যবস্থাপনায় ২০০০ সাল থেকে লোকসান শুরু হয়। ব্যাংক ঋণ, বকেয়া বেতনসহ বর্তমানে লোকসান দাঁড়িয়েছে ৫০৫ কোটি টাকা।

বাধ্য হয়ে ২০২০-২১ মাড়াই মৌসুমে মিলের কার্যক্রম বন্ধ করে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন। এতে কর্মহীন হন ৪৯৩ কর্মকর্তা-কর্মচারী। বদলি ও অন্য কাজে কিছুসংখ্যক কর্মীকে নিয়োজিত করা হয়। অনেকে অবসরে যান। কিন্তু
প্রতিষ্ঠানের কাছে প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্র্যাচুইটি ও বকেয়া বেতন বাবদ কর্মীদের প্রায় ২২ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে।

চিনিকল এখন চারণভূমিতে পরিণত হয়েছে। পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে যন্ত্র ও পরিবহন। ফাঁকা অংশে শ্রমিকরা ভুট্টা, আলু, ধানসহ বিভিন্ন ফসল চাষ করছেন। মূল্যবান সম্পদ বেহাত হচ্ছে। সন্ধ্যার পর মাদকসেবীরা আড্ডা দেয় বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। আখচাষি সামছুজ্জামান জানান, আগে তিনি আখ আবাদ করে মিলে দিতেন। এখন সেসব জমিতে ধান, ভুট্টা ও শাকসবজি চাষ করছেন। এভাবেই ৭ হাজার একর থেকে আখ চাষ নেমে এসেছে মাত্র ১০ একর জমিতে। বাংলাদেশ সুগার মিল আখচাষি ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, মিল এলাকায় আখের উৎপাদন প্রায় শূন্যে নেমে এসেছে।
মিলের অফিস সহকারী আমিনুল হক জানান, বেতন-ভাতা বন্ধ থাকায় পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। প্রথম দিকে ধারদেনা করে সংসার চালালেও এখন সম্ভব হচ্ছে না। মেকানিক্স নুরুল ইসলাম জানান, তিন বছর অবসরে গেলেও প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা পাননি।

মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহসান হাবিব জানান, মিলটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শ্রমিক-কর্মচারী ও আখচাষিরা দুর্বিষহ দিন পার করছেন। মিলটি উৎপাদনমুখী করা ছাড়াও বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে নিজস্ব জায়গায় কোল্ডস্টোরেজ নির্মাণ, কৃষিভিত্তিক শিল্পকারখানা স্থাপন, পিপি ব্যাগ ও চিনির প্যাকেট তৈরির কারখানা স্থাপনসহ কিছু প্রস্তাবনা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে দেওয়া হয়েছে।
মিলের জেনারেল ম্যানেজার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘বকেয়ার বিষয়ে আমরা ঢাকার হেড অফিসে তাগাদা দিচ্ছি। তারা বলছেন, সরকার টাকা দিলে ব্যবস্থা হবে।’

https://samakal.com/whole-country/article/2307186233/