২৯ জুলাই ২০২৩, শনিবার, ৮:৩৯

কুয়াকাটা রক্ষায় ৮ কোটি টাকার জিও ব্যাগ সাগরে বিলীন

বড় বড় গর্তে দুর্ঘটনার শিকার পর্যটকরা

অনন্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধার পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটার সৈকত রক্ষার নামে জরুরিভাবে জিরো পয়েন্টের দুই পাশে বালু ভরে জিও ব্যাগ ফেলে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। এ জন্য চার বছরে ৮ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। এই জিও ব্যাগে ব্যবহার করা হয়েছে সৈকতেরই বালু। পরে সেসব ব্যাগের বড় অংশই সাগরে চলে গেছে। বাকিটাও যাওয়ার পথে। এতে সৈকতে বড় বড় গর্ত তৈরি হওয়ায় বাড়ছে দুর্ঘটনা। সেই সাথে জোয়ার-ভাটার কাছে অসহায় হয়ে পড়ছেন পর্যটকরা। এর পরও জিও-টিউব ব্যাগ দিয়ে প্রতিরক্ষা বাঁধের কাজ অব্যাহত রেখেছে পাউবো।

জানা গেছে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বালুক্ষয়ের কারণে প্রতি বছর সৈকতের প্রস্থ কমে আসছে। বিলীন হচ্ছে নানা স্থাপনা, নষ্ট হচ্ছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। এ সময়ে সৈকত রক্ষার নামে পাউবো ৮ কোটি টাকা ব্যয় করলেও তা বাস্তবে তেমন কাজে আসেনি। উল্টো খানাখন্দের কারণে পর্যটকরা দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন।

পাউবোর কলাপাড়া দফতর সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালে ১ কোটি ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে সৈকতের দুই কিলোমিটার এলাকায় জিও টিউব ও জিও ব্যাগ ফেলা হয়। এগুলো কিছু দিন পর সমুদ্রে বিলীন হয়ে যায়। ২০২১ সালে ৩ কোটি ৫৯ লাখ টাকা এবং গত বছর ২ কোটি ৫৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ফের জিও ব্যাগ ও টিউব ফেলা হয়েছে। সেগুলো কাজে না এলেও চলতি বছর ১ কোটি ৯৭ লাখ টাকায় দেড় কিলোমিটার এলাকায় জিও টিউব ও ৩৭ হাজার জিও ব্যাগ দিয়ে অস্থায়ী প্রতিরক্ষা বাঁধ দেয়া হচ্ছে।
সম্প্রতি সরেজমিন ঘুরে ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, কয়েক বছর ধরে সৈকত রক্ষায় হাজার কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়নের আশ্বাস দিচ্ছে পাউবো, অথচ আবারো ২ কোটি টাকা ব্যয়ে জিও টিউব বসাচ্ছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, শিডিউলে অন্য স্থান থেকে বালু এনে জিও টিউব ও ব্যাগ ভরার কথা থাকলেও সৈকতে ড্রেজার বসিয়ে বালু তুলে বস্তায় ভরা হচ্ছে। অভিযোগ পেয়ে প্রশাসন এটি বন্ধ করে দিলেও পরে বাইরে থেকে বালু আনার শর্তে কাজ করা হচ্ছে। বরিশাল থেকে বেড়াতে আসা পর্যটক কাজী সাইফুল জানান, তিনি পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কুয়াকাটা এসেছেন। কিন্তু জিরো পয়েন্ট থেকে নামতে গিয়ে ছেঁড়া-ফাটা বস্তায় দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন। কিছু এলাকায় খানাখন্দ রয়েছে, যাতে সৌন্দর্য নষ্ট হওয়ায় হতাশ হয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে স্থানীয় বাসিন্দা ও পর্যটক ব্যবসায়ীদের দাবি, গ্রোয়েন বাঁধের মাধ্যমে সৈকত রক্ষায় টেকসই পরিকল্পনা নিতে হবে। পর্যটন ব্যবসায়ী কে এম বাচ্চু বলেন, সমুদ্র থেকে বালু কেটে টিউবে ভরা হয়। জোয়ারের সময়ে বালু ক্ষয় হয়ে বস্তার মাঝে খানাখন্দ তৈরি হচ্ছে। ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব কুয়াকাটার (টোয়াক) প্রেসিডেন্ট রুমান ইমতিয়াজ তুষার বলেন, বর্ষা মৌসুম এলেই পাউবো সৈকত রক্ষার নামে অস্থায়ী প্রকল্প হাতে নেয়, যা কোনো কাজে আসে না। কুয়াকাটার জন্য দরকার স্থায়ী প্রকল্প হাতে নেয়া। এখন যা হচ্ছে তা অর্থের অপচয় ছাড়া কিছুই না। এ বিষয়ে কুয়াকাটা পৌরসভার মেয়র আনোয়ার হাওলাদার বলেন, সৈকত রক্ষায় যে পদ্ধতি নেয়া হয়েছে তা সাময়িক। এক বছরের মধ্যে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। মহাপরিকল্পনার মাধ্যমে কুয়াকাটা সৈকত রক্ষার দাবি জানান তিনি। ট্যুরিস্ট পুলিশের কুয়াকাটা জোনের পরিদর্শক হাসনাইন পারভেজ বলেন, বস্তা ও টিউবের কারণে যে খানাখন্দ তৈরি হয়েছে, তাতে অনেক পর্যটক দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন। গত বর্ষায় ঢাকা থেকে আসা এক পর্যটকের মৃত্যু হয়েছে।

এ বিষয়ে পাউবোর কলাপাড়া সার্কেলের নির্বাহী প্রকৌশলী খালিদ বিন অলীদ বলেন, চার বছরে জিও টিউবের মাধ্যমে অস্থায়ীভাবে সৈকত রক্ষার চেষ্টা করা হয়েছে। এতে আগের চেয়ে ভাঙন রোধ হচ্ছে। পর্যটকদের দুর্ঘটনার শিকার হওয়া ও সৌন্দর্য নষ্টের বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, কুয়াকাটা সৈকত রক্ষা ও উন্নয়ন প্রকল্প নামে ৭৫০ কোটি টাকার একটি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) তৈরি করে আমরা পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছি। প্রকল্পটি অনুমোদিত হলে স্থায়ীভাবে কুয়াকাটা সৈকত রক্ষার কাজ শুরু হবে।

কুয়াকাটা সৈকত ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য সচিব ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, সৈকত রক্ষায় জিও টিউব ও ব্যাগ ব্যবহার হচ্ছে নদী রক্ষার ডিজাইনে। এগুলো সমুদ্র রক্ষার ডিজাইনে করা উচিত। সঠিকভাবে কাজ করার জন্য তদারকি চলছে।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/765853/