২৯ জুলাই ২০২৩, শনিবার, ৮:৩০

মার্কিন ভিসানীতি ও খরগোসের স্বপ্নবিলাস

ইবনে নূরুল হুদা

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে অনাকাক্সিক্ষত ও অযাচিত বক্তব্যের কারণেই উভয় দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের টানাপড়েন শুরু হয়েছে বেশ আগেই। এমনটি শুরু হয়েছিল ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন-পূর্ব বাংলাদেশে নিয্ক্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূূত ড্যান ডব্লিউ ডি মোজেনা সম্পর্কে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত আশরাফুল ইসলামের বক্তব্য থেকেই। তিনি তার বক্তব্যে মি. মোজেনাকে ‘কাজের বেটি মর্জিনা’ বলে রীতিমত কটাক্ষ করেছিলেন। তারপরেই তিনি আবারও বিতর্কিত মন্তব্য করে বসেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ-এশিয়া বিষয়ক উপ-সহকারীমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়ালকে নিয়ে।

তিনি তাকে ‘দুই আনার মন্ত্রী’ বলে রীতিমত উপহাস করেছিলেন। আর ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটের গাড়ি বহরে হামলার মাধ্যমে এই তিক্ততার ষোলকলা পূর্ণ হয়েছিল বলে মনে করেন কূটনৈতিক বোদ্ধামহল। ক্ষমতাসীনরা হয়তো ধরেই নিয়েছিল যে, মার্কিনীরা অনেক সহনশীল ও উদার জাতি। তাই তারা বিষয়টিকে কথার কথা হিসাবে বিবেচনা করবে। কিন্তু তাদের সে ধারণা এখন ভুল বলে প্রমাণিত হচ্ছে। বাংলাদেশের কয়েকজন নিরাপত্তা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তার ওপর মার্কিন স্যাংশন এবং সাম্প্রতিক বাংলাদেশী নাগরিকদের জন্য মার্কিন ভিসানীতি সে কথার দিকেই অঙ্গুলি নির্দেশ করে। সরকারে শীর্ষ পর্যায় থেকে মার্কিনীদের নিয়ে এ ধরনের মন্তব্য তাৎক্ষণিকভাবে সাহসী উচ্চারণ বলে মনে করা হলেও তা এখন রীতিমত ‘গোদের ওপর বিষফোঁড়া’ হয়ে দেখা দিয়েছে। যা ক্ষমতাসীনদের অনেকটাই কোণঠাসা করে ফেলেছে বলেই মনে করা হচ্ছে।

বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের পর্যবেক্ষণ এবং ক্ষমতাসীনদের সাথে মনস্তাত্ত্বিক দূরত্বের কারণেই উভয় দেশের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্কের অবনতি হয়েছে বলেই মনে করা হয়। তার সর্বশেষ প্রতিক্রিয়া হলো মার্কিন ভিসানীতি। মূলত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জন্য স্বতন্ত্র ভিসানীতি ঘোষণা দিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে বেশ ডামাডোলই ফেলে দিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানাভাবেই বিশ্লেষণ হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। নতুন এই মার্কিন ভিসানীতি ঘোষণা দেয়ার জন্য বিরোধী মহলে চাঙ্গাভাব লক্ষ্য করা গেছে। বিষয়টি তাদের কাছে মেঘ না চাইতে বৃষ্টির মতই অনুভূত হয়েছে। ফলে চলমান সরকার বিরোধী আন্দোলন কিছুটা হলেও গতি পেয়েছে। আগামী দিনে কী হবে তা অবশ্য এখনই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।

সঙ্গত কারণেই বিরোধী মহল ধরেই নিয়েছে যে, এই নতুন ভিসানীতি সরকারের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে এবং এতে তারা এক ধরনের চাপে পড়বে। কারণ, প্রায় দেড় দশক ধরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে দেশের নির্বাচনগুলোতে ব্যাপক ভোট নয়-ছয়ের অভিযোগ রয়েছে। তা এখন দেশের গ-ি পেড়িয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। এমতাবস্থায় বিশ্বসম্প্রদায় এখন এই ধরনের বিতর্কিত নির্বাচনের পুনরাবৃত্তি চাচ্ছে না বরং তারা একটি অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পক্ষেই ওকালতি করছে। বিরোধীমহল মনে করছে যে, সরকার যাতে আগামী নির্বাচনগুলোতে বিশেষ করে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবারো আলীবাবার জাদুর চেরাগের দ্বৈত্যরূপে আবির্ভূত না হয় সে জন্য ওয়াশিংটন বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি প্রণয়ন করেছে। ফলে তারা এখন সরকার বিরোধী আন্দোলনে বেশ প্রত্যয়ী বলেই মনে হচ্ছে।

বিষয়টি নিয়ে সরকার পক্ষ কিছুদিন নীরব থাকলেও এই নীরবতা ভাঙতে খুব বেশি সময়ের প্রয়োজন হয়নি বরং সরকারি দলের নেতাদেরকে বিষয়টি নিয়ে বেশ কোরাস গাইতে শোনা গেছে। অতি উৎসাহী এই নেতারা দাবি করে বসেন যে, নতুন মার্কিন ভিসানীতিতে সরকার পক্ষের চিন্তিত হওয়ার কোন কারণ নেই বরং সরকার বিরোধীদের জন্যই এই ভিসানীতি প্রণয়ন করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ফলে সরকারি দলেরই পোয়াবারো হয়েছে। এতে বিরোধী দল আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাঞ্চাল করার জন্য তারা কোন সহিংস বা নাশকতামূলক কর্মসূচি দিতে পারবে না। দিলে বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীরা মার্কিন ভিসানীতির আওতায় পড়বে। আর সে সুযোগ কাজে লাগিয়েই সরকার দ্বাদশ সংসদের নির্বাচন নির্বিঘ্নে করে আবারো পাঁচ বছরের জন্য তাদের ক্ষমতার লাইসেন্স পাকাপোক্ত করে ফেলবে।

মূলত, মার্কিন ভিসানীতি নিয়ে সরকার ও বিরোধী পক্ষের ভিন্নমাত্রিক মূল্যায়ন মহল বিশেষে বেশ হাস্যরসের সৃষ্টি করলেও সাধারণ মানুষের মধ্যে তা বেশ তালগোল পাকিয়েছে। তারা উভয়বিধ মূল্যায়ন পর্যালোচনা করে কোন স্থির সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারছেন না যে, মার্কিন ভিসানীতি কোন পক্ষের জন্য ‘সাপেবর’ হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে। তবে এজন্য তাদেরকে খুব বেশিদিন অপেক্ষা করতে হয়নি বরং খোদ সরকার প্রধানের বক্তব্য থেকেই মার্কিন ভিসানীতির মাজেজা ও প্রভাব স্পষ্টভাবেই খোলাসা করা হয়েছে। তিনি গত ৩ জুন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করে বলেছেন, ভিসা এবং নিষেধাজ্ঞার মতো বিষয়গুলো নিয়ে তারা চিন্তা করতে চান না। তার ভাষায়, ‘কে আমাদের ভিসা দেবে না, কে আমাদের স্যাংশন দেবে, ওনিয়ে মাথাব্যথা করে কোন লাভ নেই’। মার্কিন ভিসানীতির প্রতিক্রিয়ায় তিনি আরো বলেন, ‘বিশ ঘণ্টা প্লেনে জার্নি করে, আটলান্টিক পার হয়ে, ঐ আমেরিকায় না গেলে কিচ্ছু আসে যায় না। পৃথিবীতে আরো অনেক মহাসাগর আছে, অনেক মহাদেশ আছে। সেই মহাদেশের সাথে মহাসাগরেই আমরা যাতায়াত করবো আর বন্ধুত্ব করবো।’ এর আগে তিনি যারা ভিসা দেবেন তাদের দেশ থেকে কিছু কেনা হবে না বলে সতর্ক করে দিয়েছিলেন। যা রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপকভাবে আলোচিত ও সমালোচিত হয়েছে।

সরকার প্রধানের বক্তব্য থেকে একথা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, মার্কিন নতুন ভিসা নিষেধাজ্ঞা সরকারকে বেশ ভাবিয়ে তুলেছে। যদিও তারা বিষয়টি সরাসরি স্বীকার করেননি বরং তাদের সাম্প্রতিক কিছু কথাবার্তা, বাচনভঙ্গী ও দেহাবয়ব দেখে একথা মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে যে, তারা বিষটি নিয়ে বেশ উদ্বেগ-উৎকন্ঠার মধ্যেই পড়েছেন। পর্যবেক্ষক মহল মনে করছেন যে, যদি মার্কিন ভিসানীতি বিরোধী দলের বিরুদ্ধে হয় তাহলে তো সরকার পক্ষের রীতিমত বগল বাজানোর কথা। তাহলে বিষয়টি নিয়ে তারা মাথা ঘামাচ্ছেন কেন? কিন্তু সরকার প্রধানের বক্তব্য থেকে একথার প্রমাণ মেলে যে, নতুন ভিসা নিষেধাজ্ঞা সরকারকে ছেড়ে কথা বলছে না বরং এতে তারাই বেশি সমস্যায় পড়বেন। এমনকি সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে ক্ষমতা হারানোর আশঙ্কাও করা হয়েছে। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে সরকার পক্ষ বরাবরই পাশ কাটানোর চেষ্টা করেছে। তবে বাস্তবতা কোনভাবেই উপেক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে সরকারের মন্ত্রীদের মাঝেমধ্যেই অসংলগ্ন কথা বলতে শোনা যাচ্ছে। যা তাদের উদ্বেগেরই বহিঃপ্রকাশ।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নতুন ভিসানীতি নিয়ে কোন অস্পষ্টতা রাখেনি। মূলত, বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের লক্ষ্যে নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র-এমনটিই দাবি করা হয়েছে। এই নীতিতে বিশেষ কোন দল বা গোষ্ঠীকে টার্গেট করা হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন ঘোষিত এই ভিসা নীতিতে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে মনে করা যে কোনো বাংলাদেশী নাগরিকের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে। এ বিষয়ে কিছু প্রশ্নের উত্তর জানিয়েছে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস। যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের ওয়েবসাইটে এসব প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হয়।

জানা গেছে, এই নীতি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িতদের যে কোনো ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। অন্য অনেকের সঙ্গে বাংলাদেশের বর্তমান বা সাবেক কর্মকর্তা/কর্মচারী, সরকারের সমর্থক এবং বিরোধীদলীয় সদস্যরা এর অন্তর্ভুক্ত হবেন। এ ধরনের ব্যক্তিদের নিকটতম পরিবারের সদস্যরাও এর অন্তর্ভুক্ত থাকবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বেশ দৃঢ়তার সাথেই বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের ভিত্তিতে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে একটি শক্তিশালী অংশীদারিত্ব গড়ে তুলতে অঙ্গীকারবদ্ধ।

এই ভিসা বিধিনিষেধ কি সরকার বা আওয়ামী লীগের দিকে নির্দেশ করছে? এমন প্রশ্নের উত্তরে ওয়াশিংটন কর্তৃপক্ষ বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র কোনো বিশেষ রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করে না। এই নতুন নীতির অধীনে বিধিনিষেধগুলো সংশ্লিষ্টতা নির্বিশেষে সেইসব ব্যক্তিকে লক্ষ্য করে পরিচালিত, যারা গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে এমন আচরণে/কর্মকা-ে জড়িত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিশ্চিত করেছে যে, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত যে কোনো ব্যক্তির ক্ষেত্রে এই নীতি প্রযোজ্য হবে।

তবে সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বিষয়টি আরো স্পষ্ট করে বলেছেন, একটি গণতান্ত্রিক সমাজে মুক্তভাবে সবার ভূমিকা চর্চা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই সমর্থন করে। মানবাধিকারকে বাধাগ্রস্ত করে এমন যেকোন বিষয়ের বিরোধিতা করা হয়। ম্যাথিউ মিলার আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ বা অন্য কোনো দেশের কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্র কোনো অবস্থান নেয় না। তবে আমরা বিশ্বাস করি বাংলাদেশ এবং সারাবিশ্বের সব দেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া উচিত’।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পুরো বাংলাদেশে গণবিক্ষোভ চলছে। এতে লাখ লাখ মানুষ বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করছেন। বিরোধী দলের শান্তিপূর্ণ র‌্যালিতে হামলা করছে ক্ষমতাসীনরা। সংশ্লিষ্ট এলাকায় ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। মোবাইল ফোন চেক করা হচ্ছে। গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। বিরোধীদলীয় নেতাদের ও কর্মীদের বিরুদ্ধে হাজারো মামলা দেয়া হচ্ছে। এমনকি মৃত বিরোধীদলীয় নেতাদেরকেও বর্তমান শাসকগোষ্ঠী ছাড় দিচ্ছে না। তার ভাষায়, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে যে-ই বাধাগ্রস্ত করবে তার বিরুদ্ধেই নিষেধাজ্ঞা দেবে যুক্তরাষ্ট্র। তিনি আরও বলেন, গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে যেসব বিষয় বাধাগ্রস্ত করে তার মধ্যে আছে ভোট জালিয়াতি, ভোটারদের ভীতিপ্রদর্শন, জনগণকে মুক্তভাবে ও শান্তিপূর্ণভাবে সভাসমাবেশের স্বাধীনতা চর্চা প্রতিরোধে সহিংসতার ব্যবহার। এ ছাড়া আছে রাজনৈতিক দলগুলো, ভোটার, নাগরিক সমাজ বা মিডিয়াকে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ থেকে বিরত রাখতে বিভিন্ন পদক্ষেপের ব্যবহার।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের ভিসানীতিতে বাংলাদেশের কোন রাজনৈতিক দল বা গোষ্ঠীর কথা উল্লেখ না করলেও সরকারি দলের নেতাদের সাম্প্রতিক প্রতিক্রিয়া, কথাবার্তা ও আত্মস্বীকৃতি পর্যালোচনা করলে মনে হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধেই এই ভিসানীতি প্রণয়ন করেছে। সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে মন্ত্রীরাও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ যারাই বাংলাদেশে অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পক্ষে কথা বলছেন তাদেরকে ছেড়ে কথা বলছেন না বরং নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতার বিষয়টি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় হিসাবে উল্লেখ করে সবকিছু পাশ কাটানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু একথা সত্য যে, সন্তান হত্যা করে কেউ বিষয়টিকে নিজেদের পারিবারিক বিষয় বলে দাবি করে পার পেতে পারে না বরং তা দ-বিধিতে ৩০২ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

সরকার আমাদের দেশের চলমান রাজনৈতিক সঙ্কটকে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিকভাবে সমাধানের পথে অগ্রসর না হয়ে আবারো স্বেচ্ছাচারিতা ও অরাজনৈতিক পথই বেছে নিচ্ছে বলেই মনে করা হচ্ছে আত্মসচেতন মহলের পক্ষ থেকে। মার্কিন ভিসানীতিতে কোন দল বা গোষ্ঠীর নাম উল্লেখ না করা হলেও তারা বিষয়টিকে অযাচিতভাবে গায়ে মাখায় মনে হচ্ছে তারা আগামী দিনে আবারো অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ার আশ্রয় নিতে চায়। ঢাকা ১৭ আসনের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে একজন প্রার্থী নাজেহালকে কেন্দ্র করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিদেশী কূটনীতিকদের যৌথ বিবৃতির প্রতিক্রিয়ায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী সেসব দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। অপরাপর মন্ত্রীদের মুখেও তার কথার প্রতিধ্বনি শোনা গেছে। সেতুমন্ত্রী তো মার্কিন ভিসানীতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে একহাত নিয়ে ফেলেছেন এবং তিনি অবলীলায় বলেই ফেলেছিলেন তারাও ভিসানীতি প্রণয়ন করতে সক্ষম। সম্প্রতি ঢাকা ১৭ আসনের উপনির্বাচনে প্রহৃত ও পরাজিত প্রার্থী হিরো আলমের পক্ষে বিবৃতি দেয়ায় ১৩ কূটনীতিককে পরারাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করে সতর্ক করার বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় এসেছে। অভিজ্ঞমহল মনে করছে বিষয়টি সরকারের জন্য খুব সুখস্মৃতি বয়ে আনবে না বরং এতে শুধু সরকার নয় বরং দেশই বন্ধুহীন হওয়ার ঝুঁকিতে পরেছে।

আমাদের সক্ষমতা ও অর্থনৈতিক সামর্থ্য নিয়ে সরকার পক্ষ নানাবিধ বাগাড়ম্বর করলেও বাস্তবতা কিন্তু সম্পূর্ণ আলাদা। আমাদের রিজার্ভ এখন সর্বনিম্ন পর্যায়ে। সর্বোপরি আমাদের দেশের মাথাপিছু বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ এখন প্রায় ১ লক্ষ টাকা। আমরা এখনও পর্যন্ত তৃতীয় বিশে^র দেশগুলোর তালিকার মধ্যেই রয়ে গেছি। এমতাবস্থায় নির্বাচন ইস্যুতে বিশ্ব পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশে^র প্রভাবশালী দেশগুলোর সাথে পাল্লা দেয়া, তাদের মানবাধিকার ও আইনশৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন তোলা ‘হস্তির মলত্যাগে খরগোসের স্বপ্নবিলাস’-এর মতই শোনায়। বিষয়টি সংশ্লিষ্টরা যত তাড়াতাড়ি উপলব্ধি করবেন ততই তাদেরই মঙ্গল!

https://dailysangram.info/post/531197