২৮ জুলাই ২০২৩, শুক্রবার, ৬:৩১

ঢাকার বাইরে বাড়ছে ডেঙ্গু মৃত্যু ১০, ভর্তি ২৩৬১

ঘনবসতিপূর্ণ ঢাকায় এককভাবে ডেঙ্গু সংক্রমণ বেশি হলেও ধীরে ধীরে বাড়ছে ঢাকার বাইরে দেশের অন্যান্য অঞ্চলে। গত কয়েকদিন থেকে সম্মিলিতভাবে বাড়তে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে ডেঙ্গু জীবাণুবাহী এডিস মশার জীবন চরিত্রে পরিবর্তন এসেছে। আগে বলা হতো এডিস মশা কেবল সকালে ও সন্ধ্যায় কামড়ায়। এর বাইরে কামড়ায় না। জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ অধ্যাপক কবিরুল বাশার তার গবেষণা থেকে বলেছেন, এডিস মশা এখন রাতেও কামড়ায়। কারণ রাতের বেলা এখন মানুষ দিনের মতোই আলো ব্যবহার করে নানা কাজ করছে। ফলে দিনের মতো আলো থাকায় এ মশাগুলো এখন রাতেও কামড়াচ্ছে। এ মশাটিকে শহুরে মশা বলা হলেও এখন গ্রামীণ পরিবেশেও এ মশা বেড়ে উঠছে এবং সেখানকার মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। এ ছাড়া এডিস মশা স্বচ্ছ পানিতে বেড়ে উঠলেও এখন প্রাণিবিদরা বলছেন, এই মশাটি এখন নোংরা পানিতেও বংশ বিস্তার করতে পারে। ফলে শহরের গণ্ডি পেরিয়ে এডিস মশা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে এবং বংশ বিস্তার করছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত এর আগের ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে দুই হাজার ৩৬১ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে এবং একই সময়ে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের মধ্যে ঢাকায় ছিল এক হাজার ১২২ জন এবং ঢাকার বাইরে দেশের অন্যান্য স্থানের হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে এক হাজার ২৩৯ জন। দেখা যাচ্ছে ঢাকার চেয়ে ঢাকার বাইরে ১১৭ জন বেশি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। অন্য দিকে গতকাল সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় যে ১০ জন ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়েছে এর মধ্যে পাঁচজন ঢাকায় এবং অন্য পাঁচজন ঢাকার বাইরের হাসপাতালে মারা গেছে।

জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, ধীরে ধীরে হলেও ঢাকার বাইরে বেড়ে চলছে ডেঙ্গু সংক্রমণ ও হাসপাতালে ভর্তি, এটা বাড়তেই থাকবে। কারণ ইতোমধ্যে এ মশাটির বৈশিষ্ট্যে যেমন পরিবর্তন হয়েছে তেমনি ঢাকার বাইরে শহুরে পরিবেশ গ্রামেও বিরাজ করছে। ঢাকার বাইরে প্রত্যন্ত অঞ্চলেও উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চলছে। বিশেষ করে প্রবাসীরা ভবিষ্যতের জন্য টেকসই বাসস্থান করতে বিল্ডিং নির্মাণ করে চলেছেন। ফলে নতুন ভবনের আশপাশে জমে থাকছে বৃষ্টির পানি এবং যেখানে পানি জমে থাকছে সেগুলো বেশ স্বচ্ছ অবস্থায় দীর্ঘ দিন থাকে। ফলে সেখানে এডিস মশা ডিম পাড়তে পারছে।

বর্তমানে ডেঙ্গুতে দেশের সব বয়সী মানুষেরই মৃত্যু হচ্ছে। এ বছর গতকাল পর্যন্ত মোট ২২৫ জন মানুষ মারা গেছে ডেঙ্গুতে। এর মধ্যে ৮০ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে তিনজন এবং ৭০ থেকে ৮০ বছর বয়সীরা দু’জন মারা গেছেন। আবার পাঁচ বছরের কম বয়সীদের মধ্যে মৃত্যুর সংখ্যা ১১।

বর্তমানে সারা দেশে আট হাজার ৪৬৭ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে। এদের মধ্যে কেবল ঢাকা শহরের ২০ সরকারি হাসপাতাল ও ৫৫ বেসরকারি হাসপাতালসহ মোট ৭৫ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ডেঙ্গু রোগী আছে চার হাজার ৮০৯ জন। এদের মধ্যে ২০ সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত হাসপাতালে ভর্তি আছে দুই হাজার ২৩৫ জন। ঢাকার ৫৫ বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে দুই হাজার ২৭৪ জন।

ঢাকার বাইরে সবচেয়ে বেশি আছে ঢাকা বিভাগের অন্যান্য জেলায় চিকিৎসাধীন ৯১৪ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে চিকিৎসাধীন আছে ৮৬২ জন, রাজশাহী বিভাগে আছে ২৫০ জন, খুলনা বিভাগের জেলাগুলোর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে ৩৩০ জন, বরিশাল বিভাগে ৭৬৬ জন, সিলেট বিভাগে জেলাগুলোর হাসপাতালে ১১১ জন, রংপুর বিভাগে ১৭৩ জন এবং ময়মনসিংহ বিভাগের জেলাগুলোর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে ২৫২ জন।

ঢাকার বাইরে সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন আছে ঢাকা বিভাগ ও চট্টগ্রাম বিভাগের জেলাগুলোর হাসপাতালে। এ ছাড়া জেলাগুলোর হাসপাতালে গতকাল সকাল পর্যন্ত সর্বোচ্চ ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন ছিল ফরিদপুর জেলায় ২২৫ জন। এ ছাড়া এককভাবে গাজীপুরে ১৫৫ জন, চট্টগ্রামে ১৭৪ জন, চাঁদপুরে ১৪৫ জন, লক্ষ্মীপুরে ১২০ জন, পটুয়াখালীতে ১৯২ জন, বরিশাল জেলায় ১২৮ জন, কেবল বরিশাল মেডিক্যাল কলেজে ১৯০ জন চিকিৎসাধীন আছে। এর বাইরে অন্যান্য জেলার সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ১০০-এর বেশি রোগী নেই।

রাজবাড়ী জেলায় গত বুধবার রুমা বিশ্বাস (২৬) নামের একজন অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে ডেঙ্গুতে বলে আমাদের রাজবাড়ী প্রতিনিধি জানিয়েছেন। রাজবাড়ী জেলায় রুমা বিশ্বাসই ডেঙ্গুতে প্রথম মারা গেছেন।

স্বাস্থ্য অধিদফতর ইতোমধ্যে ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য স্থানের হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসার জন্য বেড বাড়ানোর ব্যবস্থা করেছে। যেসব ওয়ার্ডে রোগী কম অথবা ডেঙ্গু ওয়ার্ডে নতুন বেড বসিয়ে বসিয়ে ফ্লোরে বিছানা পেতে চিকিৎসা দেয়ার জন্য গত ২৫ জুলাই স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বাস্থ্য অধিদফতরকে নির্দেশ দিয়েছেন।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/765590