২৫ জুন ২০২৩, রবিবার, ৯:২৭

চামড়ার বাজার স্থিতিশীল রাখতে সতর্ক পদক্ষেপ

যথাযথ প্রক্রিয়ায় সংগ্রহ ও সংরক্ষণের ঘাটতির ফলে দীর্ঘ সময় দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানি আয়ের খাত চামড়াশিল্পের বেহাল চলমান। বিশ্ববাজারে বিশাল চাহিদার পরও সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে সম্ভাবনাময় এই শিল্প যথাযথভাবে কাজে লাগানো যাচ্ছে না। কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় গত বছরও অব্যবস্থাপনায় প্রায় ৩০ শতাংশ চামড়া নষ্ট হয়।

দেশে প্রাপ্ত পশুর কাঁচা চামড়ার অর্ধেকই সংগ্রহ করা হয় ঈদুল আজহায় কোরবানির মাধ্যমে।
কিন্তু এ সময় নায্য দাম না পেয়ে প্রান্তিক ব্যবসায়ীদের লোকসানের মুখে পড়তে হয়। এ জন্য এবারের আসন্ন ঈদুল আজহায় চামড়ার বাজার স্থিতিশীল রাখতে বিশেষ সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। আজ রবিবার এবারের চামড়ার মূল্য ঘোষণা করবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

কোরবানির চামড়ার বাজার স্থিতিশীল রাখতে সম্প্রতি বাণিজ্যসচিবের নেতৃত্বে মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে অংশীজনদের সঙ্গে বৈঠক হয়।
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, গত বছর কোরবানির সময় সারা দেশ থেকে এক কোটির বেশি চামড়া সংগ্রহ করা হয়। কিন্তু দেশের ট্যানারিগুলো এসব চামড়ার বেশির ভাগই প্রক্রিয়াকরণ করতে পারেনি।

বৈঠকে বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ জানান, যথাযথভাবে চামড়া সংগ্রহ, সংরক্ষণ এবং সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা বেশ চ্যালেঞ্জিং। চাহিদার চেয়ে কাঁচা চামড়া বেশি থাকায় চামড়ার বাজার স্থিতিশীল রাখা যায় না।

ফলে প্রান্তিক ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হন। এবার যৌক্তিক মূল্যে কাঁচা চামড়া ক্রয়-বিক্রর বিষয়ে মন্ত্রণালয় থেকে কঠোর নজরদারি রাখা হবে। এ ছাড়া কাঁচা চামড়া সংগ্রহ, সংরক্ষণ, ক্রয়-বিক্রয় এবং ব্যবস্থাপনার বিষয়ে দেশব্যাপী পর্যবেক্ষণ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
ওই বৈঠক সূত্র আরো জানায়, কোরবানির চামড়ার যথাযথ সংগ্রহে চলতি বছর মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সারা দেশে জেলা ও উপজেলায় এক দিনের জন্য কসাইদের প্রশিক্ষণ দেবে। এতে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনকে (বিটিএ) সম্পৃক্ত করা হবে।
সাভারের কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধানাগার (সিইটিপি) কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রতিষ্ঠানটির দক্ষতা বাড়ানোর কার্যক্রম শুরু হয়েছে, যা ঈদুল আজহার আগেই শেষ হবে।

সাত দিন স্থানীয়ভাবেই চামড়া সংরক্ষণ করতে হবে : বণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত, কাঁচা চামড়া যাতে নষ্ট না হয় তার জন্য কোরবানির পর সাত দিন স্থানীয়ভাবেই সংরক্ষণ করতে হবে। এই সাত দিন বাইরে থেকে ঢাকায় এবং ঢাকা থেকে বাইরে কোনো চামড়া পরিবহন করতে দেওয়া হবে না। এ জন্য সরকারের জননিরাপত্তা বিভাগ, বিজিবি এবং পুলিশের সর্বোচ্চ নজরদারি থাকবে। চামড়ার চোরাচালান ঠেকাতে সীমান্তসহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় তদারকি বাড়ানো হবে। এ ছাড়া সচেতনতামূলক পোস্টার ব্যবহারসহ সরকারি-বেসরকারি টেলিভিশনে প্রচার বাড়ানো হবে।

চামড়া রপ্তানিতে বিশ্বে দ্বিতীয় বাংলাদেশে : বিটিএর তথ্য অনুসারে চামড়া রপ্তানিতে বাংলাদেশ দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। দেশের শিল্প আয়ে চামড়া খাতের অবদান ২ শতাংশ। মোট রপ্তানি আয়ের প্রায় ৩.৮ শতাংশ আসে চামড়াজাত পণ্য থেকে। দেশের প্রবৃদ্ধিতে চামড়া খাতের অবদান ০.৬০ শতাংশ এবং চামড়া খাতে মূল্য সংযোজন প্রায় ৮ শতাংশ।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ট্যানারি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. শাহীন আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ছোট ও মাঝারি ট্যানারিগুলো সক্ষমতার চেয়ে বেশি কাঁচা চামড়া ক্রয় করায় গত বছর ৩০ শতাংশ কাঁচা চামড়া নষ্ট হয়েছিল। দেশের অনেক ট্যানারি ক্লাসিফাইড (শ্রেণিবদ্ধ) হয়ে গেছে। সচল আছে ১০ থেকে ১৫টি। যেসব ট্যানারি ক্লাসিফাইড হয়ে গেছে, সেসব ট্যানারি কিভাবে সচল করা যায়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠকে সে বিষয়ে সরকারকে পদক্ষেপ নেওয়ার আহবান জানিয়েছি।’

তিনি বলেন, কোরবানির চামড়া সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য ঈদের দিন থেকে আগামী তিন মাস নিরবছিন্ন বিদুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার উদ্যোগ নিতে হবে। এ ছাড়া ঈদের সময় লবণের কৃত্রিম সংকট যাতে না হয় সে জন্য লবণ আমদানির অনুমতি দেওয়ার আহবান জানানো হয়েছে।

তবে বৈঠকে লবণ ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, গত বছর দেশে সর্বোচ্চ ২২ লাখ ৩২ হাজার ৮৯০ টন লবণ উৎপাদন হয়েছে। ফলে এবার লবণের সংকট হবে না এবং দামও কম হবে।

এক কোটি ৩০ লাখ পশু প্রস্তুত : প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, এ বছর এক কোটি ৩০ লাখ পশু কোরবানির জন্য প্রস্তুত আছে। এর মধ্যে ৮৫ লাখ গরু এবং ১৫ লাখ ছাগল, মহিষ ও ভেড়া রয়েছে।

অধিদপ্তরের আরো তথ্য, দেশে এক কোটির বেশি কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করা হয় কোরবানির সময়। দেশে চামড়ার চাহিদার ৪৮ শতাংশ সংগ্রহ করা হয় কোরবানির ঈদে, ১০ শতাংশ রোজার ঈদে এবং শবেবরাত ও কালীপূজার সময় ২ শতাংশ করে সংগহ হয়। বাকিটা আসে সারা বছরের জবাই করা পশু থেকে।

https://www.kalerkantho.com/print-edition/last-page/2023/06/25/1293178