২৫ জুন ২০২৩, রবিবার, ৯:২৪

লোডশেডিংয়ে চার শতাধিক হিমাগারে রক্ষিত মালামালের গুণগত মান নষ্ট হচ্ছে

বিদ্যুৎ উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হওয়ার কারণে সারাদেশে চলছে লোডশেডিং। জেলা, উপজেলা পর্যায়ে যার প্রভাব পড়ছে বেশি। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের অভাবে, কোল্ড স্টোরেজ বা হিমাগারে সংরক্ষিত পচনশীল দ্রব্যসামগ্রী নষ্ট হওয়ার ঝুঁকিতে পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে, হিমাগার শিল্পের জন্য নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন এ খাতের উদ্যোক্তারা। সম্প্রতি এ বিষয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি পাঠিয়েছে হিমাগার মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ এসোসিয়েশন (বিসিএসএ)।

বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ এসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, ছোট-বড় মিলিয়ে চার শতাধিক হিমাগার রয়েছে সারাদেশে। এসব হিমাগারে সাধারণত খাবার আলু, বীজ আলু, রপ্তানিযোগ্য আলু, শিল্পে ব্যবহৃত আলু, ফলমূল, মাছ, মাংস সহ অন্যান্য পচনশীল দ্রব্যসামগ্রী সংরক্ষণ করা হয়ে থাকে যা সারা বছর বাজার চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ করা হয়।

এফবিসিসিআইয়ের সিনিয়র সহসভাপতি এবং বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ এসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু জানান, লোডশেডিংয়ের কারণে হিমাগারের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে সংরক্ষণ করা পণ্যের গুণগত মান নষ্ট হচ্ছে, এমনকি পণ্যসামগ্রী পচনের ঝুঁকিতে পড়েছে যা কৃষক, ব্যবসায়ী এবং হিমাগার মালিকের আর্থিক ক্ষতির কারণ হয়ে দাড়িয়েছে। হিমায়িত দ্রব্যসামগ্রী ক্ষতিগ্রস্ত হলে এসব পণ্যের বাজার অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে, হিমাগার শিল্পে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখার লক্ষ্যে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য সরকারকে অনুরোধ জানান তিনি।
এদিকে আড়াই হাজার থেকে সাড়ে তিন হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের যে লোডশেডিং,তা দুই এক দিনের মধ্যে কমে আসবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই সময়ের মধ্যে পাঁচশ মেগাওয়াট জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে জানিয়ে তিনি বলেছেন, ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে পরিস্থিতির উন্নতি হবে।

জানা গেছে, বিদ্যুৎ নিয়ে ফুরফুরে মেজাজে থাকা সরকার ধাক্কা খায় গত বছরের শেষ দিকে। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর জ্বালানির দাম ব্যাপকহারে বেড়ে যাওয়ার কারণে পরিকল্পনা করে উৎপাদন কমানোর ঘোষণা আছে। দুই মাস ভোগান্তির পর শীতকাল ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত পরিস্থিতি সরকারের জন্য স্বস্তি নিয়ে আসে।

তবে মজুদ ফুরিয়ে আসার পরও ডলার সংকটে কয়লা আমদানি নিয়ে অনিশ্চয়তা, জ্বালানি তেল ও গ্যাস সরবরাহের অভাবে আবার ফিরে এসেছে দেড় দশক আগের লোডশেডিংয়ের স্মৃতি। রাজধানী ঢাকাতেই দিনে রাতে বিদ্যুৎ যাচ্ছে বারবার। মফস্বল ও গ্রামের পরিস্থিতি আরও খারাপ। কয়লার অভাবে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে।
এদিকে দেশের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে গত মে মাসের শেষ সপ্তাহে পরীক্ষামূলকভাবে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করে চট্টগ্রামের বাঁশখালীর গন্ডামারায় স্থাপিত এসএস পাওয়ার প্ল্যান্ট। এরপর বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ধারাবাহিকভাবে সর্বোচ্চ ৩০০ থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করে গেছে।

প্রথম ইউনিটে সফলভাবে পরীক্ষামূলক বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর পরিকল্পনা অনুযায়ী বিদ্যুৎকেন্দ্রটি গত ৮ জুন সাময়িকভাবে বন্ধ করা হয় এবং যথাসময়ে দ্বিতীয় ইউনিটের উৎপাদনে যেতে কমিশনিং কার্যক্রম শুরু করা হয়। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, আসন্ন ঈদুল আজহার পর এ পাওয়ার প্ল্যান্টটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হবে। এরপরই পূর্ণ সক্ষমতায় বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করবে এসএস পাওয়ার।

https://dailysangram.info/post/528384