২৪ জুন ২০২৩, শনিবার, ৮:৪৪

অবৈধ আয়ের পথ বন্ধ না হওয়ায় টাকা পাচার থামছে না

অভিমত অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের

প্রতি বছরই দেশ থেকে অর্থ পাচার হয়ে যাচ্ছে। কোনোভাবেই তা ঠেকানো যাচ্ছে না। বরং দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে। এ তথ্য বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা থেকে উঠে আসছে। শুধু সুইস ব্যাংক থেকেই এক বছরে সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকা সরিয়ে ফেলেছে পাচারকারীরা। এ পরিস্থিতিতে অবৈধ অর্থ উপার্জনের পথ বন্ধ না হলে দেশ থেকে টাকা পাচার থামবে না বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, যে অর্থ উপার্জন করতে কোনো কষ্ট হয় না, ওই অর্থের কোনো মায়া থাকে না। আর এসব অর্থ দেশে রাখা নিরাপদও মনে করে না তারা। অনেকটা আস্থার সঙ্কটেই বিদেশে পাচার বেড়ে যাচ্ছে বলে তারা মনে করছেন।

এ বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিউটের নির্বাহী পরিচালক ও ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. আহসান এইচ মনসুর গতকাল নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, যারা অসদুপায়ে অর্থ উপার্জন করছে তারা দেশে অর্থ রাখতে নিরাপদ মনে করছে না। যেকোনো বিপদ-আপদে তাদের অর্থ নিরাপদ রাখার লক্ষ্যেই বিদেশে পাচার করে থাকে। অপর দিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ড. আব্দুল মজিদ এ বিষয়ে গতকাল নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, দেশ থেকে অর্থ পাচার ঠেকাতে আগে অসৎ উপায়ে অর্থ উপাজনের পথ বন্ধ করতে হবে। গুডস অ্যান্ড সার্ভিস প্রডিউসারের মাধ্যমে অর্থ উপাজন করতে হবে। এতে এ অর্থ জিডিপিতেও অবদান রাখবে।
অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, কষ্টার্জিত অর্থ অর্থাৎ কাজ করে যারা অর্থ উপার্জন করে তারা দেশ থেকে টাকা পাচার করে না। তারা তাদের অর্থ দেশে রেখেই ব্যবসা-বাণিজ্য করে। দেশের অর্থনীতিতে বিনিয়োগ করে জিডিপিতে অবদান রাখে। কিন্তু যারা অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন করে অর্থাৎ যারা কাজ না করে অর্থ উপার্জন করে তারাই মূলত দেশ থেকে টাকা পাচার করে। কারণ তারা মনে করে অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থ দিয়ে দেশে ব্যবসা করা যাবে না। আবার যেকোনো প্রতিকূল পরিস্থিতিতে তারা দেশে থাকতে পারবে না। কিভাবে চলবে? তাই প্রতিকূল পরিবেশে তারা যেন আরাম-আয়েশ করে চলতে পারে তার জন্য ঘুষের টাকা, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজির টাকা তারা বিদেশে পাঠিয়ে দেয়।

অপর দিকে আগে অবৈধ উপায়ে অর্থ উপার্জন করা সহজ ছিল না। এর পরেও যারা অনেক ফন্দিফিকির করে অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন করত তারা কোনো না কোনোভাবে, নামে-বেনামে এ দেশেই বিনিয়োগ করত। দেশের টাকা দেশেই থেকে যেত। কর্মসংস্থান হতো। এতে জিডিপিতে কিছুটা অবদান রাখত। এটা দেড় দশক আগেও ছিল। কিন্তু এখন আর এ অর্থ দেশে রাখছে না অবৈধ উপার্জনকারীরা। তারা মনে করছে, যে অর্থ তারা জনগণের পকেট মেরে নিচ্ছে, সময়ের পরিবর্তনের সাথে সে অর্থ বাজেয়াপ্ত হতে পারে। দেশে থাকলে জেল-জরিমানা হতে পারে। তখন তাদের কষ্ট করতে হবে। অর্থাৎ তারা দেশে বিনিয়োগ করতে ভরসা পাচ্ছে না। আর এ কারণে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা চিন্তা করে টাকা বিদেশে পাঠিয়ে দিচ্ছে।

বিশ্লেষকদের মতে, এ ছাড়া বিভিন্ন দেশ বিদেশীদের অবৈধ অর্থ নিজেদের দেশে বিনিয়োগে আকৃষ্ট করতে নানা অফার দিয়েছে। কেউ সেকেন্ড হোম, কেউ বাড়ি করাসহ বিভিন্ন অফার ছিল। অবৈধ উপার্জনকারীরা তাদের অর্থ ওইসব দেশে বিনিয়োগ করত। কিন্তু এখন অনেক দেশই অন্য দেশের নাগরিকদের অবৈধ অর্থ তাদের নিজ দেশে রাখতে পারছে না। তারা নানা বিতর্কের সম্মুখীন হচ্ছেন। এমনকি পাচারকারীদের অর্থ ওইসব দেশের অর্থনীতিতেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। আর এ কারণেই পাচারকারীদের অর্থ রাখার জায়গা কমে যাচ্ছে। এ কারণেই সুইস ব্যাংক থেকে এক বছরে সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকা সরিয়ে নিয়েছেন। তার অর্থ এসব অর্থ দেশে আসেনি, হয়তো নিরাপদ কোনো দেশে আবার তা নিয়ে গেছে।

অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, অর্থ পাচার ঠেকানোর জন্য নৈতিক মূল্যবোধ বাড়াতে হবে। সবধরনের অবৈধ আয় অর্জনের ক্ষেত্র বন্ধ করতে হবে। অপরদিকে এসব অর্থ উপার্জনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। যা দেখে অন্যরা ভয় পায়। তা না হলে দেশ থেকে টাকা পাচার বন্ধ হবে না। আর টাকা পাচার বন্ধ না হলে দেশে বিনিয়োগ বাড়বে না। বাড়বে না কর্মসংস্থান। এতে দেশে বেকারত্বের হার আরো বেড়ে যাবে। আর তাহলে সামাজিক বিপর্যয় এড়ানো সম্ভব হবে না বলে তারা মনে ক

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/757779