১৫ জুন ২০২৩, বৃহস্পতিবার, ১২:২৫

মজলুমের ইস্পাত কঠিন ঐক্য চাই

ড. আবদুল লতিফ মাসুম

বাংলাদেশ যেন জুলুমের দেশে পরিণত হয়েছে। যেদিকেই আপনার চোখ যায় বাজারে অথবা ভোটে, প্রশাসনে অথবা উন্নয়নে- সর্বত্রই জেল, জুলুম ও হামলা-মামলা চলছে। জুলুম যারা করে তারা হচ্ছে জালিম। আর বর্তমান সরকারকে জালিম আখ্যা দিয়ে এই সরকারের পতন না ঘটিয়ে ঘরে ফিরবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নায়েবে আমির মুফতি ফয়জুল করিম। বরিশালে ভোটের দিন দুপুরে হামলার শিকার হওয়ার পর সাংবাদিকদের দেয়া প্রতিক্রিয়ায় এ কথা বলেন তিনি। হাতপাখা প্রতীকে বরিশালের মেয়র পদে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন মুফতি ফয়জুল করিম।

এর আগে তিনি রিটার্নিং অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। তিনি অভিযোগ করেন, ‘২২ নম্বর ওয়ার্ডের ৮৭ নং কেন্দ্র পরিদর্শন করতে গিয়ে দেখি- নৌকার সমর্থকরা ভোটকক্ষে ঢুকে ভোটারদের বলছেন, নৌকায় ভোট দিলে দাও, না হলে চলে যাও। আমি প্রিজাইডিং অফিসারকে এসব বিষয় বলছিলাম। তখন নৌকার কর্মীরা এসে আমাকে এবং আমার সাথে যারা ছিলেন, তাদের ওপর হামলা চালিয়ে জখম করে। আমি রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে এসে অভিযোগ দিয়েছি।’ নির্বাচনের পর আন্দোলনের কথা বলে তিনি জানান, ‘এই সরকারের পতন না ঘটিয়ে ঘরে ফিরব না। আমি তো কোনো অন্যায় করিনি। যারা হামলা করেছে, তাদের বাবার বয়সী আমি। আমাকে মারধর করার কী কারণ? আমার দাড়িপাকা, আমি একজন আলেম মানুষ। এত বড় পিশাচ হতে পারে মানুষ? এসব কী হচ্ছে? এটি কেমন নির্বাচন? যতটুকু রক্ত আজ আমার, আমাদের ঝরেছে- এর জবাব দিতে হবে। প্রয়োজনে শরীরের সব রক্ত ঢেলে দিয়ে হলেও এই অত্যাচারী জালেম সরকারের পতন ঘটিয়ে ঘরে ফিরব আমরা।’

বাংলাদেশের গণমানুষের ওপর এ ধরনের জুলুম নতুন নয়। বিগত দেড় দশক ধরে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়ার মানুষ একই দৃশ্য দেখে আসছে। মানুষের কাছে সবচেয়ে মূল্যবান তার জীবন। তারপর তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে সম্মান। তারপর হচ্ছে সম্পত্তি। অত্যন্ত দুর্ভাগ্যের বিষয়- বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন সরকার এই দেড় যুগ ধরে এই তিনটি মৌলিক অধিকারের বিপরীতে কাজ করছে। শায়েখে চরমোনাইয়ের জীবন বিপন্ন হতে পারত। তার ধর্মীয় মর্যাদার অবমাননা করা হয়েছে। হয়তো বা এই সরকার যদি বহাল থাকে তার সম্পত্তিও বেহাত হয়ে যেতে পারে- যেমনটি বহু মানুষের হয়েছে।

মানুষের বিশ^াস ও আস্থাকে পরাজিত হতে দেখে কষ্ট হয়। গাজীপুরের নির্বাচনের পরে সবার মনে একটু আশার আলো জেগেছিল- বরিশাল ও অন্যত্র অনুষ্ঠিতব্য সিটি নির্বাচনগুলো নিরাপদ ও নিরপেক্ষ হবে। সম্ভবত মার্কিন ভিসানীতি ঘোষণার প্রাক্কালে হওয়ার কারণে এবং নিজেরা নিজেরা প্রতিদ্বন্দ্বী হওয়ার কারণে গাজীপুরে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। কিন্তু বরিশালের নির্বাচনে প্রশাসন ও দলের প্রভাব ততই বেড়েছে যতই তারা মনে করেছে যে, ভোটে তাদের স্থান নেই। স্পষ্টত হাতপাখার প্রার্থী দৃশ্যমানভাবে ও অদৃশ্যভাবে এগিয়ে ছিলেন। কিন্তু প্রশাসন মনে হয় ইজ্জতের সওয়াল মনে করে অবশেষে নৌকা জেতানোর ব্যবস্থা করেছে। সরেজমিন ও পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা গেছে, হাতপাখার বিরুদ্ধে হামলা হয়েছে, মারধর হয়েছে। কিছু কেন্দ্র থেকে এজেন্ট বের করে দেয়া হয়েছে। ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার পথে হাতপাখার লোকদেরকে বিতাড়ন করা হয়েছে।

৭ নম্বর ওয়ার্ডে চরমোনাইয়ের নেতাকর্মীদের ব্যবহার করা চেয়ার-টেবিল ফেলে দিয়ে তাদের মারধর করা হয়। ২ নম্বর ওয়ার্ডের শেরেবাংলা দিবানৈশ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে হাতপাখা প্রতীকের পুলিং এজেন্টের কার্ড ছিনিয়ে নিয়ে কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া হয়। একটি জনপ্রিয় পত্রিকায় প্রকাশিত একটি ছোট্ট প্রতিবেদনটি ছিল এরকম : ভোট দেয়ার গোপন কক্ষের পাশে বাইরের দিকে দাঁড়িয়ে নৌকা মার্কার মেয়র প্রার্থীর ব্যাচ পরা একজন কর্মী এক ভোটারকে বললেন, আগে নৌকা মার্কায় ভোটটা দেন। পরে আপনার ইচ্ছেমতো কাউন্সিলর যাকে ভালো লাগে সেই প্রার্থীকে ভোট দেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বরিশাল সিটি করপোরেশনের ১৫ নম্বর চহডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে এমন দৃশ্য দেখা গেল।

সবচেয়ে বিস্ময়কর ও লজ্জার সিইসি হাবিবুল আউয়ালের মন্তব্য। প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে হাতপাখার প্রার্থীর রক্তাক্ত হওয়াটা আপেক্ষিক মনে করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। তিনি বলেছেন, ‘উনি (প্রার্থী) কী ইন্তেকাল করেছেন? না। উনি কি কতটা... আমরা যেটি দেখেছি, উনার কিন্তু রক্তক্ষরণটা দেখিনি। যতটা শুনেছি, উনাকে কেউ পেছন দিক থেকে ঘুষি মেরেছে। উনার বক্তব্যও শুনেছি, উনিও বলেছেন, ভোট বাধাগ্রস্ত হচ্ছে না। আমাকে আক্রমণ করা হয়েছে।’ বরিশাল ও খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ১২ জুন ভোটগ্রহণ শেষে ঢাকায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সিইসি এসব কথা বলেন। তার মন্তব্য রাজনৈতিক মহলে বিস্ময় ও লজ্জার সৃষ্টি করেছে। তিনি কি ভুলে গিয়েছিলেন যে, তিনি নির্বাচন কমিশনপ্রধান। এ ধরনের মন্তব্যের পর তাকেও যদি শাসকদলের বিশেষণে ভূষিত করে মানুষ তাহলে কি খুব অন্যায় হবে?

লেট বেটার দেন নেভার। অবশেষে ইসলামী আন্দোলনের তরফ থেকে কঠিন ওই উচ্চারণে মানুষ আশ্বস্ত হয়েছে। চরমোনাইয়ের বিরুদ্ধে এতদিন ধরে ঢাকঢাক-গুড়গুড় করে যে অভিযোগটি কানে আসছিল তা হচ্ছে- সরকারের সাথে গোপন আঁতাতের কথা। চরম সরকারবিরোধী লোকেরা বলাবলি করছিল, দৃশ্যমানভাবে চরমোনাই সরকারের বিরুদ্ধে কঠিন কঠিন কথা বললেও আসলে অবশেষে সরকারের বিরুদ্ধে যাবে না। আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গুজবপটু লোকেরা হিসাব-নিকাশ করে দেখিয়ে দিচ্ছিলেন- ভাগাভাগিতে চরমোনাইয়ের পক্ষে কতটা আসন দেয়া হবে। বরিশালের ঘটনা ওইসব গুজবকে মিথ্যা প্রমাণ করেছে। আর চরমোনাই যদি সরকারের আশ^স্ততায় বিশ^াস করে থাকে, তাহলেও সেটি মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে।

বিএনপিসহ সব বিরোধীদল যখন এই সরকারের অধীনে সব নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছিল তখন চরমোনাই এই নির্বাচনকে সরকারের বিরুদ্ধে টেস্ট কেস হিসেবে ঘোষণা করেছিল। সে টেস্টেও সরকারের বিশ^াসযোগ্যতা মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। সুতরাং যারা সরকারের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন সেই সমাগত সর্বাত্মক আন্দোলনে শায়েখে চরমোনাইয়ের ‘ঘরে না ফেরার ঘোষণা’ একটি কঠিন বার্তা হিসেবে উপস্থাপিত হয়েছে। এখন সরকার নির্বাচনী খেলায় চরমোনাইকে পাওয়ার যে হীন আশা করেছিল, তা নিশ্চিতভাবেই নাকচ হয়েছে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, সরকারের পতন এখন একটি বড় ধরনের শর্তের ওপর নির্ভর করছে- আর তা হচ্ছে সব দল-মত নির্বিশেষে ইস্পাতকঠিন জাতীয় ঐক্য।

রাজনৈতিক সংস্কৃতি অনুযায়ী বাংলাদেশের কর্মরত বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে কাজ করছে। কেউ বা ডান, কেউ বা বাম, কেউ বা ইসলামী আবার কেউ বা স্রেফ সুবিধাবাদী- তবে সবার লক্ষ্য ক্ষমতা। অবশ্য আদর্শিকরা আদর্শের বিজয়ের মাধ্যমে ক্ষমতায় যেতে চান। অপরদিকে ক্ষমতাশ্রয়ী রাজনীতিবিদরা যেকোনো মূল্যের বিনিময়ে ক্ষমতায় যেতে চান। রাজনীতি বিজ্ঞানে সেই পুরনো কথা- ‘রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কোনো কথা নেই’। তাই দেখা যায় পরম শত্রু মিত্রতে পরিণত হয়। আবার পরম মিত্রও অবশেষে শত্রু বনে যায়। তবে সময়, অবস্থা পারিপাশির্^কতা ও পরিস্থিতি কোনো কোনো সময় এমন দাঁড়ায় যে, ক্ষমতা ও আদর্শ নির্বিশেষে সব রাজনৈতিক দল একটি ইস্যু বা একটি লক্ষ্যে সম্মিলিতভাবে আন্দোলনে উদ্যোগী হয়। বাংলাদেশে এই মুহূর্তে সেরকম বিরল অনানুষ্ঠানিক জাতীয় ঐক্য বিরাজ করছে। দেশে সর্ববৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপি তার নিজস্ব কৌশলে আন্দোলন করছে। সে আন্দোলনে শামিল রয়েছে ডান বাম ও ইসলামী ঘরানার সব রাজনৈতিক দল। দেখা যাচ্ছে, কোনো ধরনের সাংগঠনিক জোট ও আঁতাত ব্যতীত রাজনৈতিক দলগুলো অভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে।

এই মুহূর্তে বাম ঘরানার রাজনৈতিক দলগুলো গণতন্ত্র মঞ্চ বা বাম ফ্রন্টের নামে চলমান আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। সিভিল সোসাইটির বিভিন্ন মত-পথের বিভিন্ন বুদ্ধিজীবী নিজ নিজ ক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে সমৃদ্ধ করছে। বৈচিত্র্যের মধ্যে অনেকটা ঐক্য সাধিত হয়েছে। এতদিনে একটু দূরে থাকা বা স্বকীয় কৌশলে আন্দোলনরত চরমোনাইয়ের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলন সামগ্রিক আন্দোলনে শামিল হতে যাচ্ছে।

শায়েখে চরমোনাইয়ের ওপর যে আক্রমণ পরিচালিত হয়েছে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক বিবৃতিতে বলেন, মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করিমের ওপর হামলার ঘটনায় আবারো প্রমাণিত হলো- নিশিরাতের বর্তমান অবৈধ সরকারের অধীনে অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন কখনোই সম্ভব নয়। এদের আমলে দেশের নির্বাচনের কোনো পরিবেশ নেই। প্রকাশ্যে দিবালোকে প্রশাসনের নাকের ডগায় একজন ধর্মীয় নেতা ও মেয়র প্রার্থীর ওপর সন্ত্রাসীদের হামলার ঘটনা কাপুরুষোচিত ও ন্যক্কারজনক। আমি এই ঘটনার তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ ও ধিক্কার জানাচ্ছি। সন্ত্রাসী দ্বারা এ ধরনের বর্বরোচিত হামলায় আবারো প্রমাণিত হয়েছে, আওয়ামী লীগ তাদের ছাড়া বিরোধী দলের কোনো প্রার্থীকেই সহ্য করতে পারে না। হামলা চালিয়ে আক্রমণ করে অথবা যেকোনো প্রক্রিয়ায় তাদেরকে বিজয়ী হতে হবে। বর্তমান নির্বাচন কমিশনও সরকারের হুকুমের বাইরে চলতে পারে না। বিরোধীদলহীন এ ধরনের একটি নির্বাচনও তারা আয়োজন করতে সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। যেখানে একজন মেয়র প্রার্থী সরকারি দলের সন্ত্রাসীদের হাতে হামলার শিকার হন, সেখানে সাধারণ ভোটারদের নিরাপত্তা কোথায়। এ ধরনের নির্বাচনী পরিবেশের জন্যই বিরোধী দলগুলো নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে বিরত রয়েছে। আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই- আওয়ামী লীগের অধীনে কোনো অবস্থাতেই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। আমি অবিলম্বে মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ ফয়জুল করিমের ওপর হামলাকারী আওয়ামী সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর আহ্বান জানাচ্ছি।

এই ন্যক্কারজনক ঘটনার প্রতিবাদে জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এ টি এম মাসুম সংবাদপত্রে উদাত্ত বিবৃতিতে বলেন, মুফতি মো: ফয়জুল করিমের ওপর হামলার ঘটনায় প্রমাণিত হচ্ছে, বর্তমান সরকারের আমলে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের কোনো পরিবেশ নেই। প্রকাশ্য দিবালোকে প্রশাসনের লোকদের সামনে একজন ধর্মীয় নেতা ও মেয়র প্রার্থীর ওপর সন্ত্রাসীদের হামলার ঘটনা অত্যন্ত ন্যক্কারজনক। আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। তিনি আরো বলেন, একজন মেয়র প্রার্থীর ওপর হামলা এ দুঃখজনক ঘটনাই প্রমাণ করে- বর্তমান নির্বাচন কমিশন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করতে ব্যর্থ হয়েছে। যেখানে সরকারি দলের সন্ত্রাসীদের হামলার শিকার হয়ে একজন মেয়র প্রার্থী পুলিশের সামনে গিয়ে হাউমাউ করে কাঁদছেন সেখানে ভোটারদের জানমালের নিরাপত্তা কোথায়? এ বাস্তব অবস্থার কারণেই বিরোধী দলগুলো এ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি। অবিলম্বে মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ ফয়জুল করিমের ওপর হামলাকারীদের গ্রেফতার করে উপযুক্ত শাস্তি দেয়া জন্য জামায়াত নেতা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান।

বিএনপি ও জামায়াতের বিবৃতির ভাষা লক্ষণীয়ভাবে এক ও অভিন্ন। এ ছাড়া খেলাফত মজলিস, লেবার পার্টি, নেজামে ইসলাম পার্টিসহ প্রায় সব বিরোধী দল ঘটনার নিন্দা ও বিচার চেয়ে বিবৃতি দিয়েছে। জনগণ আশা করে শুধু বিবৃতির ভাষায় একমত হলে চলবে না, রচনা করতে হবে এক ও অভিন্ন পথ যে রাজপথের আন্দোলন ও ঐক্য জনগণকে মুক্তি দেবে। শায়েখে চরমোনাইয়ের মতো মর্যাদাবান ব্যক্তিত্ব আর কোনোভাবেই যেন কখনো অসম্মানিত না হন, জনগণ তার নিশ্চয়তা চায়।

আমরা আগেই বলেছি ‘ছোট হয়ে আসছে আওয়ামী পৃথিবী’। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষিত ভিসা বিধি-নিষেধের পরও আওয়ামী লীগের একটি মহল বোগাস নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় টিকে থাকার দুঃস্বপ্ন দেখছিল। তাদের পরিকল্পনা মোতাবেক কয়েকটি রাজনৈতিক দলকে বশীভূত করে ২০১৪ কিংবা ২০১৮ সালের স্টাইলে তারা নির্বাচন করতে পারবে। অবশ্য প্রধানমন্ত্রী এই নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জের বলে উল্লেখ করেছেন। সত্যি যদি তারা নির্বাচন করতে পারেন, তাহলে নিবন্ধনের লোভ দেখিয়ে এবং এমপি হওয়ার মুলো ঝুলিয়ে ছোট ছোট রাজনৈতিক দলগুলোকে শিখণ্ডী হিসেবে ব্যবহার করে পার পেতে চাইবে। এই বদনামের খাতায় চরমোনাইয়ের নাম বদ লোকেরা বলছিল। এখন বরিশালের পাশবিক ঘটনা গুজবের অবসান ঘটিয়েছে।

এখন টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত উচ্চারিত হতে যাচ্ছে একটি মাত্র স্লোগান- একটি মাত্র দাবি... কবে যাবি? এই লক্ষ্য অর্জন হওয়া সহজ বিষয় নয়। সরকারি দলের পলায়নপর কৌশল সত্ত্বেও তারা মরণকামড় দিতে চায়। সর্বোচ্চ মহলের বরাত দিয়ে বলা হচ্ছে- রক্তপাত যাই হোক না কেন, ক্ষমতা ছাড়া হবে না। শাসকদলের সর্বোচ্চ ব্যক্তি থেকে পাতি নেতা পর্যন্ত তর্জন গর্জন করছেন। বিরোধীদের প্রতি হামলা-মামলা ও জেল-জুলুমের কোনো কমতি ঘটেনি। এ অবস্থায় চরমোনাই পীর সাহেবের ইসলামী আন্দোলনের সাথে নতুন করে সংলাপ ও সমন্বয় প্রয়োজন। ইতঃপূর্বের দূরত্ব বা ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটাতে হবে। আন্দোলনের কৌশল, কর্মসূচি, পরিকল্পনা তথা সময়সূচি খুব শিগগিরই নির্ধারণ করতে হবে। কারণ বিরোধী দলের হাতে আর তেমন সময় নেই। সত্যি সত্যি যদি ডিসেম্বর বা জানুয়ারিতে নির্বাচন হয়, তাহলে তাদের প্রস্তুতি নেয়ার জন্য যথেষ্ট সময় নেই।

সমাগত জাতীয় নির্বাচনটি অবশ্যই তত্ত্বাবধায়ক ধরনের সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হতে হবে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করে, নরম ও গরম কৌশল এঁটে সরকার অবশেষে সমঝোতায় আসতে চাইবে। তারা জাতীয় সরকার ধরনের আদলে নিজেদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে চাইবে। সে ক্ষেত্রে শেষ কথা বলার সময় এখনো হয়নি। সে ক্ষেত্রে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির আলোকে অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বিরোধী রাজনৈতিক এলিটদের সদাসতর্ক থাকতে হবে।
লেখক : অধ্যাপক, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
Mal55ju@yahoo.com

https://www.dailynayadiganta.com/post-editorial/755479