১৪ জুন ২০২৩, বুধবার, ১০:৪৪

বাজারে সিন্ডিকেট এখনও সক্রিয় আমদানির পরও পেঁয়াজের দাম চড়া

কিছুতেই কমছে না পেঁয়াজের দাম। প্রতিদিন ভারত থেকে পেঁয়াজ আসলেও দেশি পেঁয়াজের দামের ঝাঁজ এখনো ঊর্ধ্বমুখী। পেঁয়াজ আমদানি করলেও বাজারে সিন্ডিকেট এখনও সক্রিয় রয়েছে। আর এ কারণেই পেঁয়াজের দাম কোনভাবেই কমছে না। কুরবানির ঈদকে সামনে রেখে সরকার যদি এ সিন্ডিকেট ভাঙতে না পারে তাহলে পেঁয়াজের দাম আরও বাড়বে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, প্রতিবেশি ভারতে পেঁয়াজের মূল্য এখনও ১৮/২০ টাকা। বাংলাদেশে পেঁয়াজ রফতানি করার জন্য তারা দীর্ঘ অপেক্ষায় ছিল। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ধারণা ছিল পেঁয়াজ আমদানি করলে দাম ৫০ টাকা কেজি হতে পারে। প্রথম কয়েক দিন ৫০/৬০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন আবারও ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দাম বৃদ্ধির এ কারণ কেউ জানে না। সিন্ডিকেটের কারণে পেঁয়াজের সরবরাহ এখনও স্বাভাবিক হয়নি।

ইতোমধ্যে ভারত থেকে প্রায় তিন লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছে। তারপরেও পেঁয়াজের দাম কমছে না। বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ কম মনে হচ্ছে। যখন দাম ঊর্ধ্বমুখী ছিল তখনও পাড়ায় মহল্লায় ভ্যান গাড়িতে পেঁয়াজ দেখা গেছে। কিন্তু আমদানি করার পরে আর তেমন ভ্যান গাড়িতে পেঁয়াজ বিক্রি করতে দেখা যায় না।

সরকার পেঁয়াজ আমদানি করলেও পেঁয়াজের দাম বেধে দেয়নি। এতে করে সিন্ডিকেট নিজেদের মত করে দাম নির্ধারণ করছে। একই সাথে বাজারে কোন ধরনের মনিটরিং নেই। সরকার কৃষকের কথা চিন্তা করেই এর আগে অনুমতি দেয়নি। কিন্তু আরও দু মাস আগেই কৃষকের ঘর থেকে সব পেঁয়াজ ক্রয় করে নেয় মধ্যস্বত্বভোগীরা। আর তাদের মাধ্যমেই এ পেঁয়াজ এখন সিন্ডিকেটের হাতে। আর আমদানি করা পেঁয়াজও তাদের নিয়ন্ত্রণে। তাহলে পেঁয়াজের দাম কমবে কি করে।

রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা কেজি। আর ভারতীয় পেঁয়াজ ৬০ টাকা কেজি। পাইকারি বাজারে দাম বেশি থাকায় চড়া দামে পেঁয়াজ বিক্রি করতে হচ্ছে বলে জানান খুচরা বিক্রেতারা।

তবে পাইকারি বিক্রেতারা বলেছেন, কৃষকরা মজুত করে রাখায় দেশি পেঁয়াজের দাম কমছে না। তবে বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, পেঁয়াজের বাজারের সিন্ডিকেট এখনো ভাঙেনি। ঈদুল আজাহাকে সামনে রেখে পেঁয়াজ থেকে বাড়তি মুনাফা সংগ্রহ করে নেওয়ার চেষ্টা করছে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী। ফলে পেঁয়াজের দাম তারা নিচে নামতে দিচ্ছেন না।

গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মহাখালী বউবাজার, বিজয় সরণির কলমিলতা বাজার ও সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজারসহ বেশ কিছু বাজার ঘুরে এমন চিত্র পাওয়া গেছে। প্রায় সব বাজারেই দেশি পেঁয়াজ অভিন্ন দামে, অর্থাৎ ৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। আর ভারতীয় পেঁয়াজের দাম প্রায় সব বাজারেই ৬০ টাকা কেজি।

রাজধানীর মহাখালী বউ বাজারের দোকানি শাকিব বলেন, দেশি পেঁয়াজ পাইকারিতেই ৭৩ টাকা কেজি কেনা লাগছে। কেজিতে ২ টাকা করে খরচ আছে। তাই আমরা ৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি করছি। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বাজারে পেঁয়াজের দাম কমেনি, কমেছে কেবল টিভিতে। খুচরায় ভারতীয় পেঁয়াজ ৬০ টাকা ও দেশি ৮০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। পেঁয়াজের দাম কমলো কোথায়?
একই বাজারের ভাই ভাই স্টোরের মালিক আব্দুর রহিম বলেন, আজ সকালে কাওরান বাজার থেকে দেশি পেঁয়াজ ৭৬ টাকা করে কিনেছি। পাইকারিতে ৭৬ টাকা হওয়ায় খুচরায় ৮০ টাকা বিক্রি করছি। ভারতীয় পেঁয়াজ কিনেছি ৫০ টাকা কেজিতে, বিক্রি করছি ৬০ টাকায়।

এদিকে বিজয় সরণির কলমিলতা বাজারেও একই চিত্র দেখা গেছে। বাজারটিতে ভারতীয় পেঁয়াজ ৬০ টাকা ও দেশি পেঁয়াজ ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এই বাজারের দোকানদার শাহাদাত বলেন, পাইকারিতে দেশি পেঁয়াজ ৭৪ টাকা কেজিতে কিনেছি। বিক্রি করছি ৮০ টাকায়। ভারতীয় পেঁয়াজ ৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

রাজধানীর সেগুনবাগিচা কাাঁচাবাজারেও অভিন্ন চিত্র। বাজারটির মামা-ভাগিনা জেনারেল স্টোরের কর্মচারী রহমান বলেন, আমরা ১০ তারিখ ৭১ টাকা কেজিতে দেশি পেঁয়াজ এনেছি। এরচেয়ে কমে কিনতে পারিনি। ৮০ টাকা করে বিক্রি করছি। এই বাজারের আল আমিন জেনারেল স্টোরের মালিক মাসুদ বলেন, আজকেও শ্যামবাজার থেকে ৭২ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ কিনেছি। বিক্রি করছি ৭৮ থেকে ৮০ টাকা কেজিতে।

রাজধানীর কাওরান বাজারে পাইকারিতে ৭২ থেকে ৭৬ টাকা কেজিতে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। আর ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪৪ থেকে ৫০ টাকা কেজিতে। এই বাজারের একজন আড়তদার আশরাফ বলেন, পাইকারিতে ৭৬ টাকা কেজিতে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি করছি। বেশি দাম দিয়ে পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে, তাই বেশি দামেই বিক্রি করছি। পাবনা থেকে পেঁয়াজ কিনে আনি। সেখানেই দাম বেশি।
এই বাজারের আরেক আড়তদার মের্সাস মাতৃভা-ারের মালিক কালাম শেখ বলেন, দেশি পেঁয়াজ ৭০ থেকে ৭২ টাকা কেজিতে বিক্রি করছি। এক বস্তা পেঁয়াজ নিলে এমন দাম রাখা হচ্ছে। আর ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি করছি ৪৪ থেকে ৪৫ টাকায়। কৃষক পেঁয়াজ বিক্রি না করায় পেঁয়াজের দাম বাড়তি। দেশি পেঁয়াজ সর্বনিম্ন ৬০ থেকে ৬৫ টাকা কেজি নেমে ছিল।

এদিকে সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যমতে, রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে দেশি পেঁয়াজ ৭৫ থেকে ৮০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছিল ৮০ থেকে ৯০ টাকা কেজি।

প্রসঙ্গত, দেশে দাম বেড়ে যাওয়ায় পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। গত ৫ জুন থেকে দেশে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়। আমদানি শুরুর পর দেশে এক লাফে পেঁয়াজের দাম কমে যায়। দেশি পেঁয়াজ ৬০ টাকা কেজিতেও নেমে আসে। আর ভারতীয় পেঁয়াজ ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজিতেও বিক্রি হয়েছে। তবে রহস্যজনক কারণে ফের পেঁয়াজের বাজার ঊর্ধ্বমুখী।

https://dailysangram.info/post/527404