১২ জুন ২০২৩, সোমবার, ৪:১১

হাতিরঝিলে ভেসে উঠল শত শত মরা মাছ

রাজধানীর হোটেল প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ের পেছনে হাতিরঝিলের পাড়ে মানুষ হাঁটছেন নাকে হাত দিয়ে। মনোরম সৌন্দর্যের প্রতীক হয়ে ওঠা একসময়ের হাতিরঝিলের এ অংশটি এখন ডোবা। নেই পানির চলাচল।

তেজগাঁওয়ের এফডিসি রেলগেট থেকে পলাশীমুখী ভায়াডাক্টের (উড়াল সড়ক) র‍্যাম্পের জন্য সোনারগাঁও হোটেলের পেছনে মাটি ভরাট করে বন্ধ করা হয়েছে ঝিলের পানি চলাচল। এখানে হচ্ছে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ৪১ পিয়ার (খুঁটি) নির্মাণ। মাটি ভরাটের পর থেকেই সোনারগাঁও হোটেলের পেছনের পানির গুণগত মান খারাপ হতে থাকে। দুর্গন্ধ ভাসতে থাকে বাতাসে। ধীরে ধীরে এ পানি জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশের জন্য হুমকি হয়ে ওঠে। রোববার গন্ধের সঙ্গে পানিতে ভেসে ওঠে ক্ষতচিহ্ন।

এদিন সকাল থেকে শত শত মরা মাছ ভেসে উঠতে থাকে। তখন পুরো এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে তীব্র দুর্গন্ধ। পরিস্থিতি সামলাতে ছুটে যান ঝিলের রক্ষণাবেক্ষণে থাকা কর্মীরা। পরে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) কর্মীরা গিয়ে মরা মাছ তুলে লেকের পাড়ে মাটিচাপা দেন। কিন্তু এতেও দুর্গন্ধ ছড়ানো বন্ধ হয়নি।

হোটেল সোনারগাঁওয়ের পেছনের অংশ ঘুরে দেখা যায়, দুর্গন্ধের কারণে সেখানে মানুষের অবস্থান ও চলাচল কমে গেছে। পথচারীরা হাঁটছেন নাক চেপে। আশপাশের বাসাবাড়িতে দরজা-জানালা বন্ধ রাখা হয়েছে।

স্থানীয়দের দাবি, হাতিরঝিলের ওপর দিয়ে এক্সপ্রেসওয়ের কারণে মগবাজারের দিকে মাটি ভরাট করে রাখা হয়েছে। ফলে লেকের এ অংশটি কার্যত এখন একটি বিচ্ছিন্ন ডোবা। মাটি ভরাট করে ঝিল বন্ধ করে দেওয়ায় বিষাক্ত হয়ে ওঠে পানি। আবদ্ধ দূষিত পানি হুমকিতে পড়েছে ওই এলাকার পরিবেশও।

দুপুরে দেখা যায়, রাজউকের কর্মীরা লেকের মাছ উঠানোর পরও লেকের পাড়ঘেঁষে পানিতে ভাসছে অসংখ্য মরা মাছ। লেকের পানি থেকে আসছে দুর্গন্ধ। ঝিল পাড়ে রাজউকের কয়েকজন কর্মী জানান, গত শুক্রবার বৃষ্টির পর কাঁঠালবাগান কালভার্ট থেকে পানির ঢল নেমে আসে। সেদিন থেকেই মাছ মরা শুরু হয়েছে।

বাংলামটর অংশের স্থানীয় জাকির হোসেন বলেন, হাতিরঝিল প্রকল্পের শুরুর দিকে এই অংশটুকুই ছিল আকর্ষণীয়। কিন্তু এখন এটি বিচ্ছিন্ন ডোবা। পানির গন্ধে লেকের পাশে দাঁড়ানো যায় না। এখন আবার এক্সপ্রেসওয়ের খুঁটির জন্য লেক ভরাট করা হচ্ছে। শুনছি, লেকের সঙ্গে পাশের এ এলাকার একমাত্র পার্কও এক্সপ্রেসওয়ের খুঁটি গেড়ে ধ্বংস করা হবে।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সভাপতি পরিকল্পনাবিদ মোহাম্মদ ফজলে রেজা সুমন বলেন, কাঁঠালবাগান থেকে একটি কালভার্ট সোনারগাঁও হোটেলের পেছনে এসে পড়েছে। সেখানে কালভার্টের মুখে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট আছে। এর মাধ্যমে ময়লা পানি পরিষ্কার হয়ে লেকে পড়বে। কিন্তু কোনো কারণে এটির ব্যত্যয় হওয়ায় লেকের মধ্যে ময়লা পড়েছে। আর ময়লা পানির কারণেই মাছ মারা গেছে।

তিনি বলেন, হাতিরঝিলের ওপরে মাটি ভরাট করে এক্সপ্রেসওয়ে বানানো হচ্ছে। সম্ভবত এ কারণেই ট্রিটমেন্ট বন্ধ করে রাখা হয়েছে। এত সুন্দর একটি প্রকল্পের গুরুত্ব না দেওয়ায় এত বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে। যাঁদের দায়িত্বে অবহেলার কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে, তাঁদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।

রাজউকের হাতিরঝিল প্রকল্পের পরিচালক আবুল কালাম আজাদ সমকালকে বলেন, কাঁঠালবাগান ঢাল থেকে ময়লা পানি আসায় মাছ মারা গেছে। তবে এ মাছ আমাদের ছাড়া নয়। লেকের মধ্যেই জন্ম নিয়েছে।

ওয়াটার ট্রিটমেন্ট চালু থাকা অবস্থায় কীভাবে ময়লা পানি ঢুকল– জানতে চাইলে কোনো কথা বলেননি তিনি।
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বলেন, হাতিরঝিল ভরাট করে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড করা অন্যায়। দ্রুত হাতিরঝিলের প্রতিবন্ধকতা দূর করতে হবে। পরিবেশবান্ধব উন্নয়ন করতে হবে। তা না হলে পরিবেশ, জনস্বাস্থ্য ও জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়বে।

https://www.samakal.com/capital/article/2306177660