১২ জুন ২০২৩, সোমবার, ৪:০২

রাজধানীর বায়ু সবচেয়ে দূষিত এ বছরের মে’তে

বিগত ৮ বছরের আটটি মে মাসের মধ্যে এবার মেতে সবচেয়ে দূষিত ছিল রাজধানী ঢাকার বায়ুর মান। এ মাসে একদিনও নির্মল বায়ু পায়নি শহরের মানুষ। মাসের ৩১ দিনের মধ্যে ১৬ দিনই ‘অস্বাস্থ্যকর’ ছিল বাতাসের মান। বাকি ১৫ দিনের বায়ুর মান সহনীয় সীমার মধ্যে থাকলেও তা স্বাস্থ্যকর ছিল না। ১৪ দিন ছিল সতর্কতা মাত্রার মধ্যে আর একদিন মধ্যম মানে ছিল। এই চরম অস্বাস্থ্যকর বায়ুর মধ্যে শ্বাসপ্রশ্বাস নিয়েই জীবন কাটাচ্ছে মেগা সিটির মানুষ।

ঢাকার বাতাসের ওপর এই সমীক্ষা তৈরি করেছে বেসরকারি স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস)। সংস্থাটির পরিচালক অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বৃহস্পতিবার যুগান্তরকে বলেন, আসলে ঢাকার বাতাস নিয়ে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা ও অঙ্গের যতটা মাথাব্যথা আছে, ততটাই নিষ্ক্রিয় মনে হচ্ছে সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও সংস্থাকে। এ নিয়ে সর্বোচ্চ আদালত একাধিকবার নির্দেশনা দিয়েছেন। সর্বশেষ ৫ মে নির্দেশনা দিয়েছেন বায়ুদূষণের হাত থেকে মানুষকে বাঁচাতে পদক্ষেপ নিতে। কিন্তু অবস্থার উন্নতি না হয়ে দিনদিন খারাপ হচ্ছে।

ঢাকার আমেরিকান দূতাবাসও রাজধানীর বায়ুমান পর্যবেক্ষণ করে থাকে। এই দূতাবাসের কাছ থেকে গত ৮ বছরের ৮টি মে মাসের বায়ুমান সূচক (একিউআই) নিয়ে পর্যালোচনা ও গবেষণা করেছে ক্যাপস। এর ভিত্তিতে ক্যাপস বলছে, ৮ বছরের মধ্যে এ বছরের মে মাসে বায়ুদূষণ আগের ৭ বছরের মে মাসের তুলনায় প্রায় ২৩ শতাংশ বেশি ছিল। আর গত বছরের তুলনায় ২০২৩ সালের মে মাসের বায়ুদূষণ ৪ দশমিক ২৭ ভাগ বেড়েছে।

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১৬ ও ২০১৭ সালের মে মাসের একিউআই ছিল গড়ে ১২৩। ২০১৮ সালে মানের কিছুটা উন্নতি হয়ে ১১০ হয়। কিন্তু পরের বছরই তা বেড়ে ১৩১ হয়েছে। আবার ২০২০ সালে ১১১তে নেমে আসে। পরের তিন বছর পরিস্থিতি ধীরে ধীরে আরও খারাপ হতে থাকে। এর মধ্যে ২০২১ সালে একিউআই ১১৪, ২০২২ সালে ১৪৪ এবং এবার মে মাসে তা আরও বেড়ে ১৫০.৩৬ হয়েছে।
সম্প্রতি বেসরকারি সংস্থা ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ কনসোর্টিয়ামের এক গবেষণায় দেখা যায়, স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে শীতকালে ঢাকার বাতাস ১৬ গুণ বেশি দূষিত থাকে। আর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নির্মল বায়ুর মানমাত্রার চেয়ে খারাপ থাকে বছরের ৩১৭ দিন। মাঝেমধ্যে এটা ‘অস্বাস্থ্যকর’ থেকে ‘বিপজ্জনক’ পর্যায়ে চলে যায়। তবে মে মাসের প্রকাশিত প্রতিবেদনের সঙ্গে দেওয়া ৮ বছরের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ঢাকার ৮ বছরের (২০১৬ হতে ২০২৩) আটটি মে মাসের ২৩৭ দিনের মধ্যে বায়ুমান সূচক ১৯১ দিন ছিল ‘সতর্কতামূলক’ এবং ৪৬ দিন ছিল ‘অস্বাস্থ্যকর’। এর মধ্যে মাত্র একদিন বিশুদ্ধ বায়ু পাওয়া যায়।

বায়ু পরিমাপের সূচকে প্রতি ঘনমিটারে ধূলিকণাসহ অন্যান্য গ্যাসীয় দূষণ ৬৫ মাইক্রোগ্রাম পর্যন্ত অনুমোদিত। অর্থাৎ, এই পরিমাণ দূষণ থাকলে সেই বায়ু শরীরের জন্য তেমন ক্ষতিকর নয়। শূন্য থেকে ৫০ পর্যন্ত স্কোর থাকলে তা ভালো বায়ুমান হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। এভাবে ৫১-১০০ স্কোর হলে তা মোটামুটি, ১০১-১৫০ পর্যন্ত সতর্কতামূলক, ২০১-৩০০-এর মধ্যে থাকলে খুবই অস্বাস্থ্যকর বলা হয়। আর ৩০১-এর বেশি স্কোরকে বলা হয় বিপজ্জনক বায়ু।

প্রশ্ন উঠেছে-ঢাকার বাতাস এত দূষিত কেন। এর জবাবে ক্যাপস পরিচালক অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ঢাকার বাতাসে ‘বস্তুকণা ২.৫ নামের অতি সূক্ষ্ম পদার্থ স্বাভাবিকের চেয়েও ৫ গুণ ভেসে বেড়াচ্ছে। বায়ুদূষণে মূলত বিভিন্ন ধরনের নির্মাণকাজ প্রধান ভূমিকা রাখছে। এর মধ্যে নির্মাণ খাত ও ইটভাটা অন্যতম। এছাড়া রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি, কলকারখানা থেকে নিঃসরিত বিভিন্ন ধরনের কার্বন, শুষ্ক মৌসুমের কারণে সৃষ্ট ধুলাবালি, ময়লা-আবর্জনাসহ বর্জ্য পোড়ানোর ধোঁয়া, ফিটনেসবিহীন গাড়ির কালো ধোঁয়া প্রভৃতি অন্যতম।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ ও বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আতিকুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, দূষিত বায়ু থেকে সাধারণত ফুসফুসজনিত রোগ হয়। এর মধ্যে অ্যাজমা, অ্যালার্জি, বমি, শ্বাসকষ্ট প্রভৃতি অন্যতম। মানসিক চাপ বা উচ্চরক্তচাপকেও অনেকে চিহ্নিত করে থাকেন। কিন্তু গবেষণায় সম্প্রতি ডায়রিয়া ও কলেরার মতো পানিবাহিত কিছু রোগও বায়ুদূষণের কারণে হয়ে থাকে বলে প্রমাণিত হয়েছে।

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/684917