১২ জুন ২০২৩, সোমবার, ৩:৫৮

সড়ক ও ফুটপাথ বেদখল : দুর্ভোগে বনানীবাসী

পানির সঙ্কটসহ নানা দুর্ভোগের শিকার রাজধানীর বনানীবাসী। গত কয়েকদিন ধরে বনানীর ১৯/এ সড়কের বাসিন্দারা খাবার পানির সঙ্কটে ভুগছেন। এর সাথে সড়ক ও ফুটপাথ দখল করে গাছ লাগানো ও গাড়ি পার্কিংয়ের কারণে মানুষের স্বাভাবিক চলাচলে বাধার সৃষ্টি হচ্ছে। কিন্তু এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সম্পূর্ণ উদাসীনতার পরিচয় দিচ্ছে।

দীর্ঘ দিন ধরে পানির সঙ্কটে ভুগছেন রাজধানীর বনানীর ১৯/এ সড়কের বাসিন্দারা। গত চার দিন ধরে এ সঙ্কট আরো ঘনীভূত হয়েছে। বিশেষ করে লেক-সংলগ্ন বাড়িগুলোর বাসিন্দারা পানির সঙ্কটে ভুগছেন বেশি। এই ব্যাপারে ওয়াসার স্থানীয় অফিসে অভিযোগ করলেও তারা কার্যকর ব্যবস্থা নেন না বলে অভিযোগ করেছেন বাসিন্দারা। এতে পানি খাওয়া, গোসলসহ নানা পারিবারিক কাজে পানির সঙ্কটে ভুগতে হচ্ছে তাদের।

কামাল আতাতুর্ক সরণি থেকে গুলশান লেক ঘেঁষে বনানীর ই-ব্লকের ১৯/এ নম্বর সড়ক। অভিজাত এ এলাকায় আবাসিক বাসিন্দাদের পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অফিসও রয়েছে। অথচ এলাকার বাসিন্দারা দীর্ঘ দিন ধরে পানির সঙ্কটে ভুগছেন। আশপাশের এলাকায় ওয়াসার পানি সরবরাহ ঠিক থাকলেও এ সড়কের বাসিন্দাদের ঘরে পানি নেই। ফলে খাওয়ার পানির চাহিদা মেটাতে বাইরে থেকে পানি কিনে আনার সুযোগ থাকলেও গোসল ও অন্যান্য কাজে পড়তে হচ্ছে বেশ সমস্যায়।

বনানীর ই-ব্লকের ১৯/এ নম্বর সড়কের ২২ নম্বর বাসায় গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে দেখা যায়, সিকিউরিটি গার্ড সরণ ভবনের পানির রিজার্ভারে পানি জমাতে চেষ্টা করছেন। এ জন্য তিনি মোটর চালু করেছেন; কিন্তু পাইপ দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা পানি পড়ছে। তিনি জানান, গত ৮ জুন থেকে পানি আসা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। রাত ১১টার পর হালকা করে পানি আসে। কিন্তু ১০ জুন একদমই পানি আসেনি। এ জন্য ভবনের বাসিন্দারা বাইরে থেকে পাঁচ লিটারের পানির বোতল কিনে এনে খাওয়ার কাজ চালিয়ে নিয়েছেন। এ ভবনে কয়েকটি অফিস আছে জানিয়ে তিনি বলেন, পানি না থাকায় অফিসগুলো আধাবেলার পর সবাইকে ছুটি দিয়ে দিয়েছে। ওই বাসার ম্যানেজার ইলিয়াস হোসেন বলেন, অনেকদিন ধরেই বাসায় পানির সঙ্কট চলছে। তবে গত কয়েকদিনে সঙ্কট অনেক বেড়েছে।

২০ নম্বর বাসায় খোঁজ নিয়েও একই অবস্থা দেখা যায়। বাসার সিকিউরিটি গার্ড মুজিবুর রহমান বলেন, গত মাসের ১৫ তারিখ থেকে পানির সঙ্কট বেড়েছে। এখনো পানির সঙ্কট চলছে। গত চার দিন ধরে একেবারেই পানি আসছে না। শেষরাতে ঘণ্টাখানিক কিছু পানি আসে। তখন রিভার্জারে পানি জমানোর চেষ্টা করি।

১৪ নম্বর বাসার ম্যানেজার আশরাফুল আলম নয়া দিগন্তকে বলেন, অনেকদিন ধরেই পানির সঙ্কট চলছে। তবে গত চার দিন ধরে বেশি সঙ্কট হচ্ছে। পানি আসছে না বললেই চলে। গভীর রাতে কোনো রকম পানি এলেও তা দিয়ে সব বাসিন্দার চাহিদা পূরণ হয় না। প্রথম দু’দিন রিজার্ভ থেকে কম কম খরচ করে কোনো রকমে চলার পর ওয়াসার পানির গাড়ির জন্য আবেদন করেছিলাম; কিন্তু তাও পাইনি।

পানির সঙ্কট প্রসঙ্গে ঢাকা ওয়াসার উপ ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম সহিদউদ্দিন নয়া দিগন্তকে বলেন, গত কয়েকদিন তীব্র গরম ও লোডশেডিংয়ের কারণে পানির সঙ্কট ছিল; কিন্তু এখন বৃষ্টি হওয়ায় বিদ্যুৎ পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। আমাদের পানির উৎপাদনও বেড়েছে। ওই এলাকার সঙ্কটও কেটে যাবে। এ জন্য আমাদের রিজার্ভে থাকা ওই এলাকার ৬ নম্বর পাম্পও চালু করেছি। আশা করছি দ্রুতই সমাধান হয়ে যাবে। এ ছাড়া অন্য কোনো সমস্যা আছে কি না তা জানতে ওয়াসার স্থানীয় অফিসের কর্মচারীদের পাঠিয়ে সমাধান করা হবে।

সড়ক দখল করে গাছ-গাড়ি পার্কিং : বনানীর ১৯/এ সড়কসহ আশপাশের সড়ক ঘুরে দেখা যায়, বাড়ির মালিকরা ফুটপাথ ও রাস্তায় টবে গাছ লাগিয়ে দখল করে রেখেছেন। এ ছাড়া বস্তায় মালামাল ভর্তি করে ফুটপাথে ফেলে রাখা হয়েছে। অনেক সড়কের দু’পাশ জুড়েই সারি সারি প্রাইভেট কার রাখা হয়েছে। এ কারণে চলাচলের জায়গা সঙ্কুচিত হয়ে গেছে। এ জন্য এসব সড়ক দিয়ে চলাচলকারীরা বেশ অসুবিধার মুখে পড়ছেন। ফুটপাথ-সড়ক দখল থাকায় রাস্তার মধ্য দিয়ে পথচারীদের চলতে হচ্ছে। এতে অনেক সময় দুর্ঘটনায় পড়তে হচ্ছে তাদের। রাস্তা-ফুটপাথ দখলদারদের ব্যাপারে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন বিভিন্ন সময় নানা বক্তব্য দিলেও এখানে তাদের সে বক্তব্য যেন অকার্যকর। তারা দেখেও যেন দেখছে না। নাম না প্রকাশ করার শর্তে এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, এখানকার বেশির ভাগ সড়কের ফুটপাথে বড় বড় গাছ রাখা হয়েছে। এমনকি রাস্তার মধ্যেও গাছ রেখে দখল করে রাখা হয়েছে। সেখানে আবার গাড়িও রাখা হয়। তাহলে মানুষ চলাচল করবে কিভাবে? তিনি এ ব্যাপারে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষকে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/754818