১৭ মে ২০২৩, বুধবার, ৩:০২

২০ তলা ভবনের সরঞ্জাম বসাতে আরেকটি চারতলা

ভবনের কাঠামো উঠে গেছে ২০ তলা পর্যন্ত। কিন্তু ভবনের নকশায় জেনারেটর, কেন্দ্রীয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রসহ আনুষঙ্গিক সরঞ্জাম স্থাপনের ব্যবস্থা রাখা হয়নি। তাই পাশে আরেকটি চারতলা ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। নতুন সেই ভবনে রাখা হবে ২০ তলা ভবনের জেনারেটর, ট্রান্সফরমারসহ সব ইউটিলিটি যন্ত্রপাতি। সেখান থেকে সংযোগ আসবে ২০ তলা ভবনে।

রাজধানীতে সচিবালয়ের ভেতর নির্মিত হচ্ছে এই ভবন। আর অতিরিক্ত যে ভবনটি নির্মাণ করতে হবে, তাতে সচিবালয়ে চলাচল ও গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা আরো কমবে।

গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় বলছে, উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে (ডিপিপি) ভুলের কারণে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ভবনটির তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় প্রধানমন্ত্রীর অফিস ও মন্ত্রিসভার বৈঠকের ব্যবস্থা থাকার কথা।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ৪২০ কোটি ৯৮ লাখ ৩৪ হাজার টাকা। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পটি শেষ করার কথা ছিল। সময়মতো কাজ শেষ না হওয়ায় প্রকল্পের মেয়াদ চলতি বছরের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়। পরিবর্তন করা হয় ঠিকাদার।

এর মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের চাহিদা অনুযায়ী ভবনে কক্ষের সংখ্যা বৃদ্ধিসহ কিছু পরিবর্তনের কারণে প্রকল্প সংশোধনের প্রস্তাব করেছে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। এতে ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে ৩৯ কোটি ৭৩ লাখ ৯ হাজার টাকা।

গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, তড়িঘড়ি করে প্রকল্প নেওয়ার মধ্যে কোনো বরকত নেই। সচিবালয়ের ২০ তলা ভবনের কাজ শেষে জেনারেটর, ট্রান্সফরমার, সাবস্টেশন ও সেন্ট্রাল এসির সংস্থান করা যাচ্ছে না। ফলে নতুন করে আরো একটি ভবন নির্মাণ করতে হচ্ছে। প্রকল্পের শুরুতেই সঠিকভাবে ডিপিপি প্রণয়ন করা হলে এই সমস্যা তৈরি হতো না।
এক প্রশ্নের জবাবে পূর্তসচিব বলেন, প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধির যৌক্তিকতা যাচাইয়ের জন্য কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির প্রতিবেদন পেলে প্রকল্পের সংশোধিত ডিপিপি পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হবে।

সচিবালয়ের ২০ তলা নতুন ভবনের নকশা তৈরির দায়িত্বে নিয়োজিত স্থাপত্য অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক স্থপতি (সার্কেল-১) ফাহমিদা সুলতানা কালের কণ্ঠকে বলেন, প্রকল্পের ডিপিপিতে ইউটিলিটি ব্যবস্থাপনা ছিল না। এখন আবার পৃথকভাবে ইউটিলিটি বিল্ডিং করতে হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, ‘আগে কেন ছিল না, এখন কেন আসছে—এত সব আমি বলতে পারছি না। কারণ এখানে মন্ত্রণালয়ের লোকজন কাজ করেন। তাঁরা বলতে পারবেন।’

স্থপতি ফাহমিদা সুলতানা বলেন, ভুল হোক বা শুদ্ধ হোক, এখন যেটা প্রয়োজন হবে, সেটা যুক্ত করতেই হবে। ভবন চালাতে হলে যেটা দরকার, সেটা করতেই হবে।

কেনা হচ্ছে বিদেশি লিফট : পরিকল্পনা কমিশন দেশীয় লিফট কেনার পরামর্শ দিয়েছে। তাদের ওই পরামর্শ মানতে নারাজ গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। ফলে বিদেশি লিফট ক্রয়ে প্রায় ১০ কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয় হবে।

এ ছাড়া এসি, বৈদ্যুতিক ও স্যানিটারি মালপত্র কেনায়ও রয়েছে দ্বিধাদ্বন্দ্ব। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের লক্ষ্যে বিভিন্ন করিডর, রুমের লাইট ও বেসিনে সেন্সর পদ্ধতি ব্যবহার নিয়েও আছে জটিলতা।

ব্যয় বৃদ্ধির যৌক্তিকতা যাচাইয়ের প্রতিবেদন জমা হয়নি : প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধির যৌক্তিকতা যাচাইয়ের জন্য গত ১২ এপ্রিল একটি কমিটি করা হয়। গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (উন্নয়ন অনুবিভাগ) শওকত আলী কমিটির আহ্বায়ক এবং প্রকল্প পরিচালক ও গণপূর্ত অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সতীনাথ বসাককে সদস্যসচিব করে সাত সদস্যের এই কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছিল। গত এক মাসেও সেই প্রতিবেদন জমা দেয়নি কমিটি।

যুগ্ম সচিব শওকত আলী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে একটা বৈঠক করেছি। সরেজমিনে গিয়ে এক দিন পরিদর্শন করা হয়েছে। আরো দু-একটি বৈঠক করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বলছে, যেহেতু চারতলা ইউটিলিটি ভবন নতুন অঙ্গ হিসেবে যুক্ত হয়েছে, সেহেতু সংশোধিত প্রস্তাব অনুমোদনের এখতিয়ার পরিকল্পনা কমিশনের। প্রকল্প পরিচালক সতীনাথ বসাক বলেন, চারতলা ইউটিলিটি ভবনটি নতুন অঙ্গ নয়, মূল ভবনের সঙ্গেই ডিপিপিতে অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

ফ্লোর নিয়ে মতানৈক্য, পার্কিংয়ের স্থান কম : ২০ তলা এই ভবনের দুটি বেইসমেন্টে থাকবে। তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় প্রধানমন্ত্রীর অফিস ও মন্ত্রিসভার বৈঠকের ব্যবস্থা থাকবে। পঞ্চম থেকে ১৩ তলা পর্যন্ত মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এবং ১৪ থেকে ২০ তলা পর্যন্ত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ব্যবহার করবে। তবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, ১৪ থেকে ২০ তলা পর্যন্ত তাঁদের কর্মকর্তাদের স্থান সংকুলান হবে না। তাঁদের আরো বেশি ফ্লোর লাগবে। এ নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে মতভিন্নতা আছে।
দুটি বেইসমেন্টে মাত্র ৬৬টি গাড়ি পার্ক করা যাবে। এতে ২০ তলা এই ভবনের প্রায় ৮০ শতাংশ কর্মকর্তার গাড়ি পার্ক করা সম্ভব হবে না। ফলে গাড়ি পার্কিং নিয়েও জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে।

https://www.kalerkantho.com/print-edition/first-page/2023/05/17/1280700