৩১ জানুয়ারি ২০২৩, মঙ্গলবার, ১:৩০

মন্দার বাজারে এলসি’র চাপ

মানুষের ব্যয় যেভাবে বেড়েছে, সেভাবে আয় বাড়ছে না। মূল্যস্ফীতির কারণে ব্যয় কমিয়ে টিকে থাকার চেষ্টা করছে মানুষ। এর প্রভাব পড়েছে বেশির ভাগ দরকারি পণ্যে। বিশেষ করে ইলেক্ট্রনিক্স গৃহসামগ্রীর চাহিদা কমেছে। চাহিদা কম থাকলেও এলসি অপ্রতুলতা ইলেক্ট্রনিক্স পণ্যের সংকট তৈরি করছে। এতে মন্দা সময় পার করছেন এই খাতের ব্যবসায়ীরা। এর মধ্যে বর্তমান ডলার সংকটের ফলে আরও চাপে পড়েছেন তারা। ফলে এসব পণ্যের দাম বাড়ছে। দাম বৃদ্ধির কারণে এসব পণ্য ক্রেতাদের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। আমদানির জন্য ব্যাংকের কাছে পর্যাপ্ত ডলার নেই।

কয়েক মাস আগে বিলাসবহুল ও অপ্রয়োজনীয় আমদানির ওপর বাংলাদেশ ব্যাংকের বিধিনিষেধের কারণে এলসি খুলতে অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছেন দেশের ব্যবসায়ীরা। দিনকে দিন এই সংকট বাড়ছে। তবে এই সংকট দীর্ঘস্থায়ী হলে নিম্নআয়ের ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ ইলেক্ট্রনিক্স গৃহসামগ্রী পণ্য কেনার আগ্রহ হারাবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। করোনার পর থেকেই ইলেক্ট্রনিক্স গৃহসামগ্রীর ব্যবসায় মন্দা যাচ্ছে। যাদের বাসায় পুরাতন টিভি, ফ্রিজ, ওয়াশিং মেশিন কিংবা এসির মতো প্রয়োজনীয় পণ্য রয়েছে তারা নতুন করে এসব কিনছেন না। বিশেষ করে মধ্যবিত্তরা এসব বিলাসবহুল পণ্য কিনতে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। এতে করে ইলেক্ট্রনিক্স ব্যবসায় বিরূপ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। রাজধানীর ইলেক্ট্রনিক্স মার্কেটগুলোতে ক্রেতাদের উপস্থিতিও কম দেখা গেছে। এর মধ্যে চাহিদা অনুযায়ী ইলেক্ট্রনিক্স পণ্য এলসি করতে না পারায় আরও বিপাকে পড়েছে ব্যবসায়ীরা। তারা জানান, ইলেক্ট্রনিক্স পণ্যগুলো বিলাসবহুল হিসেবে ধরা হয়। এজন্য এসব পণ্য আমদানিতে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। মূলত এসব পণ্য এখন আর বিলাসবহুল পণ্য নয়।

তারপরও এলসি খোলা যাচ্ছে না। এ ছাড়া যে পরিমাণ দরকার সে অনুযায়ী এলসি করা হচ্ছে না। এতে পণ্যের চাহিদা কমের মধ্যেও ঘাটতি তৈরি হচ্ছে। একইসঙ্গে সংকটে পড়া ইলেক্ট্রনিক্স পণ্যের দামও বাড়ছে। বিদেশ থেকে আমদানি করে বিভিন্ন ব্রান্ডের পণ্য বিক্রি করে এবি ইলেক্ট্রনিক্স। প্রতিষ্ঠানটির জিএম সরদার আবু সাইদ বলেন, আমাদের দুই-তিনটা এলসি দারকার। কিন্তু ব্যাংক হয়তো একটা খুলছে। বাকিগুলো খুলছে না। এলসি করতে না পারায় পণ্যের সংকট দেখা দিচ্ছে। সংকট হলে দাম সব সময় বেড়ে যায়। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো এখন ডলারের দাম অনেক বেড়ে গেছে। ১০৮ থেকে ১০৯ টাকা ব্যাংকিং রেট। আর আগে ছিল ৯০-৯৪ টাকা। তাহলে প্রতি ডলারে ১৮ টাকা এমনিতেই বেড়ে গেছে। আমরা তো পণ্য কিনি ডলার দিয়ে। টাকা দিয়ে তো কিনি না। তাহলে যদি ৩০০ ডলারের কোনো পণ্য কিনি ওই পণ্যে প্রতি ডলারে ১৮ টাকা করে এমনিতেই বেশি লাগছে। এখন শুধুমাত্র উচ্চবিত্ত ছাড়া অন্য শ্রেণির মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে এসব পণ্য। তিনি বলেন, এখন ব্যবসা করে আমাদের খরচ চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। মানুষের কাছে টাকা নাই। তারা পণ্য কিনছে না। বড় বড় মার্কেটে গেলে দেখা যায় কাষ্টমার নাই। এখন ব্যবসাবান্ধব পরিস্থিতি যাচ্ছে না। এসি বাজার ইন্ডাসট্রিজ লিমিটেডের চেয়াম্যান জুনাব আলী। জানালেন বর্তমানে তার ব্যবসাও মন্দা যাচ্ছে। তিনি বলেন, ব্যাংক থেকে এখন কোনো এলসি খুলছে না। এলসি খোলা না হলে সরকারও রাজস্ব পাবে না।

এখন পণ্যের দামও কিছুটা বেড়েছে। তিনি বলেন, আগামীতে যদি এভাবে এলসি বন্ধ থাকে তাহলে ইলেক্ট্রনিক্স পণ্যের সংকট বাড়বে। ব্যবসায়ীরা পণ্য আনতে না পেরে ব্যবসা করবে না। কর্মী ছাঁটাই হবে। স্টেডিয়াম মার্কেটের আরএস ইলেক্ট্রনিক্সের শিপু হোসেন বলেন, হোম অ্যাপ্লায়েন্সের বিভিন্ন পণ্যে গড়ে ২০-৩০ শতাংশ দাম বেড়েছে। তবে সব পণ্যের দাম বাড়েনি। যেটার সংকট হচ্ছে শুধু সেই পণ্যের দাম বাড়ছে। এতে আমাদের বিক্রি আরও কমেছে। ৬৫ ইঞ্চি একটা কালার টিভিতে ৫-৭ হাজার টাকা বেড়েছে। ছোট টিভিতে ২-৩ হাজার টাকা দাম বেড়েছে। স্টেডিয়াম মার্কেটের বোশ ইলেক্ট্রনিক্স শোরুম ম্যানেজার আক্কাস আলী বলেন, কিছু কিছু পণ্যের দাম বেড়েছে। যেমন আমাদের ৮ কেজি ক্যাপাসিটির ওয়াশিং মেশিনে ১০ হাজার টাকার মতো বেড়েছে। কিন্তু ৭ কেজি ও ১০ কেজি ক্যাপাসিটির মেশিনে কোনো দাম বাড়েনি। গোল্ডেন ইলেক্ট্রনিক্সের মাসুদ জানান, করোনার পর থেকেই তাদের ইলেক্ট্রনিক্স পণ্যের ব্যবসা ভালো যাচ্ছে না। শোরুমে আগের মতো ক্রেতাদের আনাগোনা নেই। বর্তমান সময়ে পরিস্থিতি আরও অবনতি হচ্ছে। চাহিদা অনুযায়ী এলসি না হওয়ায় ব্যবসায় গতি ফিরে আসছে না উল্লেখ করে ভিসতা ইলেক্ট্রনিক্স লিমিটেডের পরিচালক উদয় হাকিম বলেন, এলসি করতে পারছি না। এতে করে যে দেশ থেকে আমরা কাঁচামাল আমদানি করি সেখানে আমাদের ও দেশের ভাবমূর্তি কিছুটা ক্ষুণ্ন হচ্ছে। এত দেরি করে এলসি হচ্ছে আমরা কমিটমেন্ট রক্ষা করতে পারছি না। এক মাসেরটা আরেক মাসে হচ্ছে। যেটা ডিসেম্বরে হওয়ার কথা সেটা দেখা যায়, জানুয়ারির শেষ দিকে হচ্ছে। তাও বিভিন্ন জায়গা থেকে ফোন করে তদবির করতে হচ্ছে।

https://mzamin.com/news.php?news=40810