২৭ জানুয়ারি ২০২৩, শুক্রবার, ৫:৫৭

চড়া সুদে টাকা ধার কিছু ব্যাংকের

কলমানিতে গতকাল ৬.৯৮% সুদে ৫,০০২ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। আগের দিন বুধবার ৭% সুদে লেনদেন হয় ৪,৪৩৬ কোটি টাকা।

ব্যাংকগুলো যে পরিমাণে ঋণ বিতরণ করছে, আমানত জমা হচ্ছে তার অর্ধেক। আমানতের সুদ এখন মূল্যস্ফীতির চেয়ে কম বলে অনেকেই ব্যাংকে টাকা রাখছেন না। এর মধ্যে ইসলামি ধারার পাঁচ ব্যাংকের অনিয়ম আলোচনায় আসায় গ্রাহকদের মধ্যে কিছুটা আতঙ্ক ছড়িয়েছে। ফলে গত বছরের নভেম্বরেই পুরো ব্যাংক খাতের আমানত প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা কমে যায়।

এসবের প্রভাবে এখন এক ব্যাংক অন্য ব্যাংক থেকে সাড়ে ৮ শতাংশ পর্যন্ত সুদেও টাকা ধার করছে। এক দিনের জন্য কলমানি মার্কেটেও (অন্য ব্যাংক থেকে অর্থ ধার করা) সুদহার ৭ শতাংশ পর্যন্ত উঠেছে। বেড়েছে সরকারের টাকা ধারের অন্যতম মাধ্যম ট্রেজারি বিলের হারও। এই সংকট কাটিয়ে উঠতে আমানতের সুদ বাড়াচ্ছে কিছু কিছু ব্যাংক। তবে খুব বেশি বাড়াতে পারছে না, কারণ, ঋণের সুদহার সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ নির্দিষ্ট করে রেখেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এমন পরিস্থিতিতে কয়েক দিন আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার মুদ্রানীতি ঘোষণা অনুষ্ঠানে ভোক্তাঋণের সুদের হার ৯ শতাংশ থেকে ১২ শতাংশে উন্নীত করার ঘোষণা দেন। তবে এরপরও ব্যাংকগুলো চাহিদামতো আমানতের সুদ বাড়াতে পারছে না। কারণ, ব্যাংক খাতে ঋণের ১০ শতাংশের কম ভোক্তা ঋণ। আর ব্যাংকগুলোর মেয়াদি আমানতের মাত্র ১২ শতাংশ ডিমান্ড ডিপোজিট ও ৮৮ শতাংশ মেয়াদি আমানত। ব্যাংকগুলোকে আমানত টানতে হলে মেয়াদি আমানতে সুদহার বাড়াতে হবে।

জানা গেছে, গতকাল বৃহস্পতিবার কলমানিতে ৬ দশমিক ৯৮ শতাংশ সুদে ৫ হাজার ২ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। আগের দিন বুধবার ৭ শতাংশ সুদে লেনদেন হয়েছিল ৪ হাজার ৪৩৬ কোটি টাকা। আর গত মঙ্গলবার ৬ দশমিক ৯১ শতাংশ সুদে ৪ হাজার ৫৯৩ কোটি টাকা লেনদেন হয়। কলমানির পাশাপাশি ২-৭ দিন মেয়াদে ব্যাংকগুলোর মধ্যে টাকা ধারের সুদও বেড়ে সাড়ে ৮ শতাংশ পর্যন্ত ওঠে।

সাম্প্রতিক সময়ে ডলারের দাম বাড়ায় ডলার ক্রয়সহ রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় সংগ্রহ ও রপ্তানি বিল নগদায়নে গ্রাহকদের বাড়তি টাকা দিতে হচ্ছে ব্যাংকগুলোকে। ব্যবসায় মন্দার কথা বলে ব্যবসায়ীরাও ঋণ পরিশোধ কমিয়েছেন। ফলে ব্যাংকগুলোর তারল্যের ওপর চাপ তৈরি হয়েছে।

গত বছরে (২০২২) বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ব্যাংকগুলোর কাছে সব মিলিয়ে ১ হাজার ২৬১ কোটি ডলার বিক্রি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রতি ডলার ৯৮ টাকা ধরলে যার পরিমাণ দাঁড়ায় ১ লাখ ২৩ হাজার ৫৭৮ কোটি টাকা। গত বছরে ব্যাংকগুলো থেকে এই টাকা চলে গেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভল্টে। এতেও অর্থসংকট বেড়েছে। সাম্প্রতিক সংকটে কিছু ব্যাংকের তারল্য ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। মাঝেমধ্যেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চাহিদামতো নগদ জমা (সিআরআর) রাখতে পারছে না কিছু ব্যাংক। ইসলামি ধারার পাঁচ ব্যাংকের পাশাপাশি গত নভেম্বর ও ডিসেম্বরে রাষ্ট্রমালিকানাধীন জনতা ব্যাংক, বেসরকারি খাতের ন্যাশনাল ব্যাংক চাহিদামতো সিআরআর রাখতে পারেনি।

আবার অনেকে খরচ মেটাতে সঞ্চয় ভেঙে ফেলছেন। মূল্যস্ফীতির কারণে নতুন সঞ্চয়ও কমে গেছে। আতঙ্কে অনেকে ব্যাংক থেকে টাকা সরিয়ে রাখছেন। এর ফলে গত ডিসেম্বরে শুধু একটি ইসলামি ধারার ব্যাংকেরই আমানত কমেছে প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা। ফলে সার্বিকভাবে আমানত কমেছে। গত অক্টোবরে ব্যাংক খাতে আমানতের পরিমাণ ছিল ১৪ লাখ ৯০ হাজার ৪৩ কোটি টাকা। তা নভেম্বরে ৩ হাজার ১৫৫ কোটি টাকা কমে হয় ১৪ লাখ ৮৬ হাজার ৬৮৮ কোটি টাকা।

এদিকে বেসরকারি একটি ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, ডলারের উচ্চ দাম, ঋণের চেয়ে আমানতের কম প্রবৃদ্ধির কারণে তারল্যের ওপর চাপ তৈরি হয়েছে। ঋণের সুদহারের সীমা তুলে দিলেই এই চাপ কেটে যাবে।

https://www.prothomalo.com/business/bank/6w1dyh2kgv