২২ জানুয়ারি ২০২৩, রবিবার, ৩:৩৮

তবুও নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস পাওয়া নিয়ে শঙ্কা, সংকট বাড়বে উৎপাদনে

সম্প্রতি সরকারের নির্বাহী আদেশে শিল্প, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বাণিজ্যিক খাতে গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে। ব্যবসায়ীদের দাবি, সংকট মোকাবিলায় গ্যাস, বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম এর আগেও কয়েক দফায় বাড়ানো হয়েছিল। কিন্তু দাম বাড়লেও শিল্প মালিকরা চাহিদামতো নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস পায়নি, যা উৎপাদন ও পণ্য সরবরাহে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। এবারের দাম বাড়ানোর পরেও সেই শঙ্কা রয়ে গেছে। সরকারকে সঠিকভাবে চাহিদা মতো গ্যাস সরবরাহ করতে হবে। তা না হলে ব্যবসায় টিকে থাকাই বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)। সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির বিষয়টি কেবলমাত্র একমুখী হওয়া উচিত হবে না বরং আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির মূল্য হ্রাস পেলে কালক্ষেপণ না করে, সে অনুপাতে স্থানীয় বাজারেও যেন মূল্য সমন্বয়ে উদ্যোগ নেয়া হয়।

শনিবার মতিঝিলে ঢাকা চেম্বার অডিটোরিয়ামে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন সংগঠনটির সভাপতি ব্যারিস্টার মো. সামীর সাত্তার। এ সময় দেশের সমসাময়িক অর্থনীতির সার্বিক পরিস্থিতি এবং ২০২৩ সালে ডিসিসিআই’র বর্ষব্যাপী কর্মপরিকল্পনা সম্পর্কে গণমাধ্যমকে অবহিত করেন। অনুষ্ঠানে ডিসিসিআিই’র ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি এস এম গোলাম ফারুক আলমগীর (আরমান), সহ-সভাপতি মো. জুনায়েদ ইবনে আলীসহ পরিচালনা পর্ষদের সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দেশের ব্যবসায়ী সমাজ শিল্পখাতে পণ্য উৎপাদন অব্যাহত রাখতে উচ্চমূল্যে হলেও নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহ পেতে চায়, যেন স্থানীয় চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি আমাদের রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হয়। বলা হয়েছেÑ দাম বাড়ানো হলে সঠিকভাবে গ্যাস সরবরাহ করা সম্ভব হবে।

বেসরকারি খাত থেকে আমাদের দাবি থাকবে, আপনারা সব সময় গ্যাসের দাম বাড়ান, কিন্তু নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ করেন না। দাম বাড়ানোর পরেও নানা সমস্যার কথা বলা হয়। আমাদের কথা হলোÑ আমদানি করে দেন বা স্পট মার্কেট থেকে দেন, আমাদের নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ করতে হবে। গ্যাসের দাম বৃদ্ধি নিয়ে সামীর সাত্তার আরও বলেন, গ্যাসের দাম বৃদ্ধি অত্যাবশ্যক ছিল। জ্বালানি সংকটের এসময়ে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়বে বড় ও শিল্প পর্যায়ে। বড় বড় শিল্পগুলোকে ঠিক করতে হবে কীভাবে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করবে। গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রভাব শিল্প পণ্যের ওপর পড়বে। গ্যাসের দাম কীভাবে সমন্বয় করবে তা শিল্প মালিকদের ঠিক করতে হবে। তবে এটা সত্য যে, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি আমাদের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের উপর কিছুটা হলেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে, কারণ এটি তাদের পণ্য উৎপাদন ব্যয় বাড়াবে। তাই প্রতি মাসে জ্বালানির দাম ঘোষণা করা হলে ব্যবসায়ীরা সুবিধা পাবেন।ব্যারিস্টার সামীর সাত্তার আসন্ন রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের চাহিদা ও সরবরাহ স্থিতিশীল রাখতে এ ধরনের পণ্য আমদানিতে এলসি খোলার শর্তাবলী সহজীকরণের বিষয়টি বিবেচনার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি রাতারাতি সম্ভব নয় বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ জন্য আমাদেরকে রেমিট্যান্স আহরণ বাড়াতে প্রণোদনা বৃদ্ধি ও রপ্তানি আয় বাড়ানোর উপর আরও বেশি হারে জোরারোপ করতে হবে।

খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়ার আহ্বান জানান ঢাকা চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি ব্যারিস্টার সামীর সাত্তার। তিনি বলেন, বারবার ছাড় দেয়া হলে অসৎ ব্যবসায়ীরা সুযোগ নেবে।

ঢাকা চেম্বার সভাপতি বলেন, ২০২৩ সালে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখাই বড় চ্যালেঞ্জ। মনিটরিং পলিসি ছয় মাস পর পর হচ্ছে। আমরা চাইবো তিন মাস পর পর পলিসি করা। পরিস্থিতি পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পলিসি পরিবর্তন করতে হবে।

কূটনৈতিক অর্থনীতি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকারের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে সামীর সাত্তার বলেন, সরকারের উদ্দেশ্য রাজনৈতিক কূটনীতি থেকে বেরিয়ে অর্থনৈতিক কূটনীতিতে অগ্রসর হওয়া। আমরাও চাই, এই বিষয়টি যাতে আমাদের কূটনৈতিকরা তাদের অবস্থানরত দেশে ভালোভাবে কাজ করেন। আমাদের পণ্যের বাণিজ্য বাড়াতে তারা কাজ করেন।

আর্থিক খাতের সুশাসন নিশ্চিত করতে ঢাকা চেম্বার বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করবে জানিয়ে সামীর সাত্তার বলেন, ঋণ খেলাপি কমাতে এবং আর্থিক খাতের শৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করবে ঢাকা চেম্বার।

সামীর সাত্তার তার দায়িত্বকালে অবকাঠামো উন্নয়ন; ক্ষুদ্র ও অতি ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের নীতি সহায়তা; বিদ্যুৎ-জ্বালানি; গ্যাস সরবরাহ এবং অর্থনৈতিক অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করবেন বলে জানান।

এ ছাড়া স্মার্ট বাংলাদেশের লক্ষ্য অর্জনে সরকার চারটি খাতে যে ৪০টি বিষয় চিহ্নিত করেছে, সেক্ষেত্রে সবাইকে সঠিকভাবে প্রযুক্তির ব্যবহারে দক্ষতা অর্জনে কাজ করবে ডিসিসিআই। আর প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষতা অর্জন না হলে স্মার্ট বাংলাদেশ হবে না বলেও সংগঠনটি মনে করে।

প্রতিবছর আমাদের দেশে প্রায় ২০ লাখ তরুণ শিক্ষাজীবন শেষ করে চাকরি বাজারে প্রবেশ করে, তবে বিপুল এ জনগোষ্ঠীর জন্য উপযোগী কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা বেশ চ্যালেঞ্জের বিষয়। এদের অনেকেই হয়তো চাকরি পাবে, তবে অবশিষ্টদের মধ্যে একটি বড় অংশ উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলবে।

https://mzamin.com/news.php?news=39498