২২ জানুয়ারি ২০২৩, রবিবার, ৩:৩৪

এক বছরে বেসরকারি বিদেশী ঋণ বেড়েছে ২৯ শতাংশ

৭০ শতাংশই স্বল্পমেয়াদি, চাপ বাড়ছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে

বেসরকারি খাতে বিদেশী ঋণের পরিমাণ বেড়েই চলছে। গত এক বছরে বেসরকারি খাতে বিদেশী ঋণ বেড়েছে ২৯ শতাংশ। গত সেপ্টেম্বর শেষে বেসরকারি খাতে বিদেশী ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৫৪০ কোটি ৩৮ লাখ ডলার। ২০২১ সেপ্টেম্বর যা ছিল এক হাজার ৯৬৮ কোটি ডলার। এক বছরে বেসরকারি খাতে ঋণ বেড়েছে ৫৭১ কোটি ৬০ লাখ মার্কিন ডলার, যা স্থানীয় মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১০৭ টাকা হিসেবে) ৬১ হাজার ১৬১ কোটি টাকা। তবে, শঙ্কার বিষয় হলো বেসরকারি খাতে ঋণের মধ্যে স্বল্পমেয়াদি ঋণ বেড়ে যাচ্ছে অধিক হারে। বিদেশী ঋণের প্রায় ৭০ ভাগই স্বল্পমেয়াদি ঋণ। এক বছরে এ স্বল্পমেয়াদি ঋণ বেড়ে যাওয়ার হার ৩৮ শতাংশের ওপরে। স্বল্পমেয়াদি ঋণ বেড়ে যাওয়ায় ঋণ পরিশোধের চাপ বেড়ে যাচ্ছে। এতে প্রভাব পড়ছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ও ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. আহসান এইচ মনসুর এ বিষয়ে গতকাল নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, বেসরকারি খাতে ঋণ বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি হলো কম সময়ে ঋণ পরিশোধ করার চাপ। কারণ এসব ঋণ বৈদেশিক মুদ্রায় নিয়ে সুদে আসলে বৈদেশিক মুদ্রায় পরিশোধ করতে হয়। তাই অপেক্ষাকৃত কম সময়ে ঋণের অর্থ পরিশোধ করতে গিয়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ চাপে পড়ে যায়। যেহেতু বর্তমান ডলার সঙ্কট আছে, তাই এ সময়ে এ চাপ বেশি অনুভব করতে হবে। দ্বিতীয়ত, ঝুঁকি হলো মুদ্রার বিনিময়জনিত ক্ষতি। কারণ এসব ঋণ যখন নেয়া হয়েছিল তখন দেখা গেল প্রতি ডলার পেতে ব্যয় করতে হতো ৮৪ টাকা। কিন্তু এখন ব্যবসায়ীদের ১০৭ টাকা দিয়ে প্রতি ডলার কিনে ঋণের অর্থ সুদে আসলে পরিশোধ করতে হচ্ছে। এ কারণে বেসরকারি খাতে বিদেশী ঋণের সুদ স্থানীয় বাজারের তুলনায় অপেক্ষাকৃত কম মনে হলেও পরিশোধের সময় এসে বেশি পড়ে যায়। তিনি বলেন, বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ এনে উৎপাদনশীল খাতে ব্যবহার হলে রিটার্ন ভালো হয়। কিন্তু এসব ঋণ অপচয় বা পাচার হয়ে গেলে তখন উভয়দিক থেকেই ক্ষতি হয়। এ বিষয়টি কঠোরভাবে তদারকি করতে না পারলে বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ আমাদের উপকার না হয়ে বরং অপকার হবে বেশি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, বেসরকারি খাতে ঋণের মধ্যে বেশির ভাগই এসেছে স্বল্পসময়ের জন্য। অর্থাৎ এক বছরের কম সময়ের জন্য এসব ঋণ আনা হয়েছে। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে যেখানে ৬৩ শতাংশ ছিল স্বল্পমেয়াদি। সেখানে গত বছরের সেপ্টম্বরে তা বেড়ে হয়েছে প্রায় ৭০ শতাংশ। ২০২১ সালের বেসরকারি খাতে বিদেশী ঋণ এসেছিল ১৯.৬৮ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে স্বল্পমেয়াদে ছিল ১২.৫৩ বিলিয়ন ডলার। সেখানে গত বছরের সেপ্টেম্বরে বেসরকারি খাতে মোট ঋণ বেড়ে হয়েছে ২৫.৪০ বিলিয়ন ডলার, এর মধ্যে স্বল্পমেয়াদেই ১৭.৩১ বিলিয়ন ডলার।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বেসরকারি খাতে ঋণ বেড়ে যাওয়ায় ঝুঁকির পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। কারণ এসব ঋণ যথাযথভাবে কাজে লাগানো হচ্ছে কী না সে বিষয়ে সংশয় রয়েছে। বিভিন্ন সময় মুদ্রাপাচারে অভিযোগ উঠেছে। এক খাতে ঋণ এনে অন্য খাতে ব্যবহার করারও নজির রয়েছে। আবার ঋণ পরিশোধ করতে না পারায় নতুন ঋণ এনে পুরনো ঋণ পরিশোধ করছেন বলে কেউ কেউ অভিযোগ রয়েছে। অন্য দিকে ডলার সঙ্কটের কারণে ব্যবসায়ী পণ্যের এলসি খুলতে পারছেন না। কেন্দ্রীয় ব্যংক প্রায় প্রতিদিনই তার রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করছে সরকারি ব্যাংকগুলোর এলসি দায় পরিশোধের জন্য। এ পরিস্থিতি সামলে দায় পরিশোধের চাপ আরো বেড়ে যাবে। এ কারণে বেসরকারি খাতে বিদেশী ঋণের লাগাম টেনে ধরতে না পারলে বৈদেশিক মুদ্রায় দায় আরো বেড়ে যাবে। এটা অর্থনীতির জন্য হিতে বিপরীত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/722183